পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচন ত্রুটিপূর্ণ, ইমরানের দলকে কোণঠাসা করা হয়

১ দিন আগে
পাকিস্তানের ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কমনওয়েলথ অবজারভার গ্রুপ (সিওপি)। প্রতিবেদনে ওই নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বলে অভিহিত করে নির্বাচনী পরিবেশ উন্নত করতে দেশটির গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও শক্তিশালী করার সুপারিশ করা হয়েছে।

পাকিস্তানে গভীর রাজনৈতিক বিভাজন, অর্থনৈতিক সংকট ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির মধ্যে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।

 

পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের (পিইসি) আমন্ত্রণে পর্যবেক্ষক হিসেবে নাইজেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট গুডলাক জোনাথনের নেতৃত্বে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট কমনওয়েলথ অবজারভার গ্রুপ (সিওজি) নির্বাচন পর্যবেক্ষণে অংশ নিয়েছিল।

 

প্রায় দুই বছর পর নির্বাচন নিয়ে আজ মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সিওজি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনের আগে-পরে কয়েকটি বিষয় নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা, স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা খর্ব হয়েছে। যেমন, নির্বাচনের আগে ইমরান খানের দলকে কোণঠাসা করা হয়। 

 

প্রতিবেদন মতে, প্রধান বিরোধী দল সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফকে (পিটিআই) দলীয় প্রতীক হিসেবে ব্যাট না দেয়া এবং নির্বাচনে দলটির প্রার্থীদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধ্য করা যা দলটির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সক্ষমতা তাৎপর্যপূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

 

আরও পড়ুন: ইমরান খানের মুক্তির দাবি, পেশোয়ারে সমর্থকদের ঢল

 

আরেকটি কারণ ছিল নির্বাচনের রাতে মোবাইল পরিষেবা বন্ধ করে দেয়া, যা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ব্যাহত করে এবং সময়মতো ফলাফল প্রকাশে বিলম্বের সৃষ্টি করে যাতে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়।

 

সিওজির প্রধান জোনাথন বলেন, ‘নির্বাচনের আগ মুহূর্তে আমরা বেশ কয়েকটি বিষয় উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করেছি যা নির্বাচনের মাঠে সমান সুযোগের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পিটিআইকে ব্যাট প্রতীক বরাদ্দ না করা এবং পিটিআই প্রার্থীদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নিবন্ধন করা।’

 

প্রতিবেদনে দলটির প্রধান নেতা ইমরান খানকে নির্বাচনের আগে একাধিক মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা এবং কারাবন্দি রাখার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব পদক্ষেপ কার্যত ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নষ্ট করে।

 

কমনওয়েলথের পর্যবেক্ষকেরা আরও জানান, পিটিআই নেতাকর্মী ও সমর্থকদের গ্রেফতার, আটক, গুম, অফিস ও বাড়ি তল্লাশি—এসব ঘটনা তাদের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করেছে।

 

আরও পড়ুন: ‘ফাতাহ-৪’ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল পাকিস্তান

 

নির্বাচনের প্রচারণা সময় গণমাধ্যমের কাভারেজ নিয়েও প্রতিবেদনটিতে তীব্র সমালোচনা করা হয়। বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন করপোরেশন মূলত পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ) ও পিপিপিকে প্রচার করেছে। এর বিপরীতে পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রাপ্য কভারেজ দেয়া হয়নি। এমনকি সম্প্রচারকদের ইমরান খানের নাম উচ্চারণ করতেও নিষেধ করা হয়েছিল।

 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কিছু কেন্দ্রের ভোটের ফল ও চূড়ান্ত ফলাফলের মধ্যে অসংগতি ছিল। এভাবে বেআইনিভাবে কিছু প্রার্থীকে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এসব ঘটনা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা ও অন্তর্ভুক্তিকে ক্ষুণ্ণ করে।

 

ভবিষ্যতের নির্বাচন আরও ভাল করার জন্য কমনওয়েলথ পর্যবেক্ষক গ্রুপ পাকিস্তানের নির্বাচনী কাঠামোর সংস্কারের সুপারিশ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে নির্বাচনী আইন, প্রশাসন, রাজনৈতিক অধিকার সুরক্ষা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণের পরিবর্তন।

 

পাকিস্তানের নির্বাচনের দুদিন পরই কমনওয়েলথ একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। তবে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে সংস্থাটি প্রায় দুই বছর সময় নিলো। এ কারণে পিটিআই অভিযোগ করে, কমনওয়েলথ নিজেদের প্রতিবেদন বিলম্বিত করে সেনা-সমর্থিত সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

 

আরও পড়ুন: সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার খবর ভুয়া: প্রধান উপদেষ্টা

 

ইমরান খানের ঘনিষ্ঠ সহকারী সায়েদ জুলফিকার বুখারি বলেন, ‘এটি পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে জালিয়াতিপূর্ণ নির্বাচন ছিল। কমনওয়েলথের নীরবতা গণতন্ত্র হত্যার সহায়ক।’ তবে কমনওয়েলথ পিটিআই-এর ওই অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, প্রতিবেদনটি পাকিস্তান সরকার ও নির্বাচন কমিশন আগেই পেয়েছিল এবং প্রকাশ বিলম্বিত হলেও তা প্রকাশনা প্রক্রিয়ারই অংশ।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন