সেই লক্ষ্যে এরই মধ্যে একটি ক্রিপ্টো কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ডেটা সেন্টারগুলো ২৪ ঘণ্টা সচল রাখার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য একটি জাতীয় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তার প্রথম পর্যায় হিসেবে দেশটির সরকার ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছে।
গত কয়েক বছর ধরেই পাকিস্তান নজিরবিহীন আর্থিক সংকটের মোকাবিলা করে চলেছে। লক্ষণীয় ভাবে কমেছে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপি। একদিকে মুদ্রাস্ফীতি আরেকদিকে বৈদেশিক ঋণের বোঝা গলায় ক্রমশ ফাঁসের মতো চেপে বসেছে।
আরও পড়ুন: ফের ঊর্ধ্বমুখী ক্রিপ্টোকারেন্সির দাম
ধীরে ধীরে কমেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও। সরকারি কোষাগার প্রায় অর্থশূন্য। এমন পরিস্থিতিতে ভঙ্গুর অর্থনীতিতে অক্সিজেন জোগাতে একটি বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার। আর্থিক সংকটে থাকা পাকিস্তানের ত্রাতা হয়ে উঠতে পারে ক্রিপ্টো মুদ্রা। এমনটাই মনে করছে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ প্রশাসন।
সেই ভাবনা থেকেই পাকিস্তান সরকার ক্রিপ্টোকারেন্সির বেচাকেনাকে বৈধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে এবং অর্থনীতির আধুনিকীকরণের জন্যই এমন পরিকল্পনা ইসলামাবাদের।
ডনের প্রতিবেদন মতে, দেশের আর্থিক ব্যবস্থায় ‘ব্লকচেইন প্রযুক্তি ও ডিজিটাল সম্পদ নিয়ন্ত্রণ ও সংহত করার জন্য চলতি বছরের মার্চ মাসে পাকিস্তান ক্রিপ্টো কাউন্সিল (পিসিসি) গঠন করা হয়। যার প্রধান নির্বাহী (সিইও) নিযুক্ত করা হয়েছে পাক অর্থমন্ত্রীর প্রধান উপদেষ্টা উদ্যোক্তা বিলাল বিন সাকিবকে।
নবগঠিত পাকিস্তান ক্রিপ্টো কাউন্সিল (পিসিসি)-এর প্রধান বিলাল বিন সাকিব ব্লুমবার্গ টিভির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে জানান, ব্লকচেইন প্রযুক্তি ও ডিজিটাল সম্পদের গ্রহণযোগ্যতাকে মেনে নিয়ে সেই পথেই হাঁটতে চায় সরকার।
বিলাল আরও বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য হলো আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করা এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তিকে পাক অর্থনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা। সরকারের লক্ষ্য একটি নিয়ন্ত্রক কাঠামো তৈরি করা যা ব্লকচেইন প্রযুক্তিকে আর্থিক ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত করবে।’
বিলাল মনে করেন, পাকিস্তানের ৬০ শতাংশ জনসংখ্যা যেহেতু ৩০ বছরের নিচে, তাই ডিজিটাল মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয় করার বাজার তৈরিই আছে। তার দাবি, আনুমানিক দেড় থেকে দুই কোটি পাকিস্তানি এর মধ্যেই ডিজিটাল সম্পদের ব্যবসা শুরু করেছেন।
আরও পড়ুন: ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে বিটকয়েন, কেন এত বেড়ে গেল?
জালিয়াতি, অর্থপাচার ও আর্থিক অস্থিরতার আশঙ্কায় ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যাপারে এতদিন সতর্ক করে এসেছে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তা সত্ত্বেও দেশটিতে ডিজিটাল সম্পদের চাহিদা এত বেশি যে, তা আর উপেক্ষা করা যাচ্ছে না। এমন বাস্তবতায় ক্রিপ্টোকারেন্সির সব ধরনের লেনদেন বৈধ করা হলো।
ক্রিপ্টোকারেন্সি বৈধ করার আরও একটি প্রধান কারণ হলো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণা। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় বসার পরই ট্রাম্প বিটকয়েনসহ অন্যান্য ডিজিটাল মুদ্রায় লেনদেনে বিশেষ জোর দেয়ার কথা বলেন। ট্রাম্পের আশ্বাসবাণী পেয়ে তেজি ঘোড়ার মতো দৌড়াতে শুরু করে ক্রিপ্টো মুদ্রার বাজার।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পাঁচটি ডিজিটাল সম্পদের নাম ঘোষণা করেছেন। সেই মুদ্রাগুলো দিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে একটি নতুন কৌশলগত সঞ্চয় গড়ে তোলার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।
যুক্তরাষ্ট্রকে ক্রিপ্টো মুদ্রার রাজধানী হিসেবে গড়ে তুলতে চান ওয়াশিংটনের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। ব্যাংক অফ আমেরিকা যেমন সোনা সঞ্চয় করে রাখে, ঠিক তেমনই ট্রাম্প চান আলাদা করে ক্রিপ্টোর ভাণ্ডার গড়ে তুলতে।
আরও পড়ুন: সব রেকর্ড ভেঙে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে বিটকয়েন
সেই উদ্দেশ্যে একটি বিবৃতিও জারি করেছে হোয়াইট হাউস। ফলে চড়চড় করে দাম বাড়ছে ক্রিপ্টো মুদ্রার। ট্রাম্পের ওই ঘোষণার পর রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে বিটকয়েনের দর। এই ক্রিপ্টো মুদ্রার এক একটির দাম দাঁড়ায় ১ লক্ষ ৭ হাজার ডলার।
যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের ক্রিপ্টো-বান্ধব নীতির দিকে ঝুঁকতে দেখে পাকিস্তানকেও ক্রিপ্টোকারেন্সি বাণিজ্যকে বৈধ করার দিকে এগিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করেছে বলে মনে করছেন অনেকেই। ক্রিপ্টো নিয়ে লেনদেনের নিরিখে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান নবম স্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছে ‘চ্যানেলেসিস’ নামের একটি সমীক্ষক সংস্থা।
এই সংস্থার সমীক্ষা জানাচ্ছে, তালিকায় রাশিয়া ও চীনকে টপকে প্রথম স্থান দখল করেছে ভারত। বর্তমানে ভারতে ১৫ থেকে ২০ কোটি মানুষ শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার মতো ক্রিপ্টো মুদ্রায় বিনিয়োগ করা শুরু করে দিয়েছেন।
যদিও ভারত সরকার এই লেনদেনকে এখনও পুরোপুরি আইনি বৈধতা দেয়নি। লেনদেন বেআইনি না-হলেও যারা এর সঙ্গে যুক্ত তাদের মুদ্রা বেচার লভ্যাংশের উপর ৩০ শতাংশ কর দিতে হয় সরকারকে।
আরও পড়ুন: কেন আকাশ ছুঁয়েছে ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েনের দাম?
কেন ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রতি এতটা ভরসা রাখতে চাইছে ইসলামাবাদ, সে সম্পর্কে বলতে গিয়ে বিলাল জানান, পাকিস্তান আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল তথা আইএমএফের কাছে ক্রিপ্টোকারেন্সি চালু করার আবেদন জানিয়েছে। এর ফলে ঋণ পরিশোধের দিকটি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। পাশাপাশি এর ফলে বিদেশি বিনিয়োগ যেমন আসবে, তেমনি এর সাহায্যে কর পরিশোধও করা যাবে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত পাকিস্তান ২০ বার ঋণ নিয়েছে। সাম্প্রতিকতম ঋণের পরিমাণ ৭০০ কোটি ডলার। পঞ্চম বৃহত্তম ঋণগ্রহীতা আশ্বাস দিয়েছিল যে, এটিই তাদের শেষ ঋণ হবে। আইএমএফ ফেডারেল বোর্ড অফ রেভিনিউয়ের কাছে পাকিস্তান জানিয়েছে, ক্রিপ্টো থেকে যে রাজস্ব আসবে, তা দেশের কর কাঠামোয় অন্তর্ভুক্ত করা হবে যাতে এই ঋণ পরিশোধ করা যায়।
]]>