প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন শুধু দেশের নয়, বিশ্বের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যেও অন্যতম। বিশেষ করে ঈদসহ বিভিন্ন উৎসব ও ছুটির দিনে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা ছুটে আসেন সুন্দরবনের মনোরম পরিবেশে ভ্রমণ করার জন্য। সুন্দরবনের করমজল পর্যটন স্পটটি সবচেয়ে কাছের হওয়ায় সাধারণত ভ্রমণপিপাসুদের ভিড় এখানেই বেশি হয়ে থাকে।
করমজল পর্যটন কেন্দ্রের ফুট টেইলার, বনের দূরের দৃশ্য দেখার জন্য সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার, কৃত্রিমভাবে আটকে রাখা কুমির, ঘুরে বেড়ানো মায়াবি চিত্রা হরিণ ও বানরসহ বিভিন্ন পশু-পাখি এবং গাছপালা দেখে আনন্দ উপভোগ করে থাকেন আগত দর্শনার্থীরা।
তবে করমজল ছাড়াও বনের হাড়বাড়িয়া, হিরণ পয়েন্ট, কটকা, কচিখালী, দুবলার চরের আলোর কোল ও আন্দারমানিক পর্যটন কেন্দ্রগুলোতেও এবারের ঈদের ছুটিতে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি বিগত বছরগুলোর তুলনায় বেশি। পর্যটকদের ভিড় বেড়ে যাওয়ায় তাদের সার্বিক সহায়তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বল্পসংখ্যক বন প্রহরীদের।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের করমজল পর্যটন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির জানান, ঈদের দিন থেকে শুরু করে পরপর ৬ দিন করমজলে দেশি-বিদেশি পর্যটকে ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। সাধ্যানুযায়ী সেবা ও নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে বন বিভাগ। গত বছরগুলোর তুলনায় বেশি পর্যটক। গত ৫ দিনে প্রায় ১৫ হাজার দর্শনার্থী সুন্দরবনের করমজল ভ্রমণ করেছে। এতে রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকা।
দেশের এ শিল্পের বিকাশে বনের পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে আরও বেশি আকর্ষণীয় ও অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভ্রমণে আসা দর্শনার্থীরা।
এদিকে ঈদের টানা ছুটি কাটাতে পরিবারসহ বন্ধুদের নিয়ে বাগেরহাটের ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড ষাটগম্বুজ মসজিদ দেখতে ভিড় করেন দর্শনার্থীরা। ষাটগম্বুজ মসজিদের প্রাচীন এ নিদর্শন দেখে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা।
আরও পড়ুন: ঈদের ছুটির শেষ দিনেও কুয়াকাটায় পর্যটকের ঢল
পঞ্চগড় থেকে আসা রাজু দম্পতি বলেন, লম্বা ছুটিতে বাগেরহাটের দুটি ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইট সুন্দরবন ও ষাটগম্বুজ মসজিদ দেখতে এসেছি। ষাটগম্বুজ মসজিদের প্রাচীন এ নিদর্শন দেখতে জীবনে অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল, এতদিন সময় হয়ে ওঠেনি। এখানকার পরিবেশটাও সুন্দর। পরিবার নিয়ে আসতে পারায় আরও বেশি ভালো লেগেছে।
অন্যদিকে শরণখোলার বলেশ্বর রিভারভিউ ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রে ঘুরতে আসা মশিউর রহমান মাসুম বলেন, ‘পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরতে এসেছি। বলেশ্বর নদীর বাঁধের কংক্রিট ব্লকে বসে নদীর ভিউটা দেখতে অসাধারণ। হাজার হাজার মানুষের সমাগম দেখে ভাল লেগেছে। তবে এখানের পরিবেশটা আরও একটু ভালো করা প্রয়োজন। প্রশাসন উদ্যোগ নিলে ছুটির দিন দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়বে।’
অনেক দেশি-বিদেশি ভ্রমণ পিপাসুরা ঈদের দিন থেকে সুন্দরবন, ষাটগম্বুজ মসজিদ ও শরণখোলার বলেশ্বর রিভারভিউ ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রে এসে তাদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন। শরণখোলা বলেশ্বর রিভারভিউ ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রে প্রায় ৫০ হাজার দর্শনার্থী ঘুরতে এসেছে বলে জানান ইউএনও সুদীপ্ত কুমার সিংহ।
প্রত্নতত্ত্ব ও যাদুঘর বিভাগের ষাটগম্বুজ মসজিদের কাস্টডিয়ান মো. জায়েদ বলেন, ‘বিগত বছরগুলোর রেকর্ড ভঙ্গ করে এবার ঈদের দিন থেকে ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড ষাটগম্বুজ মসজিদে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। পর্যটকদের ঢল সামাল দিতে আমরাসহ ট্যুরিস্ট পুলিশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। গত ৫ দিনে ৩১ হাজার ৭৬০ জন দর্শনার্থী ষাটগম্বুজ মসজিদ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছে। এ সময় রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯ লাখ ২৮ হাজার ৯১৫ টাকা।’