পর্যটকদের জন্য খুলছে সেন্টমার্টিন, ভ্রমণে মানতে হবে যেসব নির্দেশনা

৩ সপ্তাহ আগে
দীর্ঘ বিরতির পর আগামী ১ নভেম্বর থেকে পর্যটকদের জন্য খুলছে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণের পথ। কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়া ঘাট থেকে শুরু হবে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল। তবে শুধু দিনের বেলায় ভ্রমণ করার অনুমতি থাকবে, নভেম্বর মাসে রাত্রিযাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। দ্বীপের পরিবেশ সুরক্ষায় সেন্টমার্টিন ভ্রমণে পর্যটকদের মানতে হবে ১২ নির্দেশনাও।

দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য ভ্রমণের ক্ষেত্রে পর্যটকদের মানতে হবে এসব বিশেষ নির্দেশনা। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পরিবেশ-২ শাখা ২২ অক্টোবর এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

 

এই নির্দেশনাগুলো প্রণীত হয়েছে ‘বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫’-এর আওতায় প্রণীত ‘সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং পরিবেশবান্ধব পর্যটন নির্দেশিকা, ২০২৩’ অনুযায়ী। এর উদ্দেশ্য হলো সেন্টমার্টিন দ্বীপের অনন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য দীর্ঘমেয়াদি রক্ষা করা।

 

আরও পড়ুন: নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে সেন্টমার্টিনে যাবে পর্যটকবাহী জাহাজ

 

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত দুটি জাহাজকে চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়েছে। আরও চারটি জাহাজের অনুমতির প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. আ. মান্নান বলেন, ‘কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌরুটে চলাচলের জন্য ৬টি জাহাজ অনুমতির আবেদন করেছে। এর মধ্যে ২টি অনুমোদন পেয়েছে। বাকিগুলোর অনুমতির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।’

 

জানা গেছে, পর্যটকবাহী জাহাজ ১ নভেম্বর থেকে নুনিয়াছড়া ঘাট থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে চলাচল শুরু করবে। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে দ্বীপে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার পর্যটক রাত্রিযাপনের সুযোগ পাবেন। তবে ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে।

 

এদিকে এমন সিদ্ধান্তে পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, সেন্টমার্টিন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা খুবই দুঃখজনক। সঠিক পরিকল্পনা না থাকলে এ শিল্প বড় ক্ষতির মুখে পড়বে। সী ক্রুজ অপারেটর অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, ‘প্রতিটি জাহাজ কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিনে গিয়ে আসতে ১৫ ঘণ্টা সময় নেয়। দিনে গিয়ে দিনে ফিরতে গেলে নতুনভাবে চিন্তা করতে হবে।’

 

কক্সবাজার বৃহত্তর বিচ ব্যবসায়ী মালিক সমিতির মুখপাত্র আব্দুর রহমান বলেন, ‘পর্যটকরা এতো টাকা খরচ করে, দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করে কেবল দুই ঘণ্টার জন্য সেন্টমার্টিন কেন যাবেন? বিষয়টি প্রশাসনের সু-বিবেচনা করা দরকার।’

 

আইনগত বিধিনিষেধের কারণে উখিয়ার ইনানী সৈকত থেকে জাহাজ ছাড়ার অনুমতি নেই। তাই সমস্ত পর্যটকবাহী জাহাজ কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়া ঘাট থেকে চলবে। জেলা প্রশাসক মো. আ. মান্নান জানান, নভেম্বর মাসে পর্যটকরা দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসবেন। কক্সবাজারের নুনিয়াছড়া বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে জাহাজ ছাড়বে। পর্যটকদের অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে এবং বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে টিকিট চেকিং হবে। দ্বীপে ভ্রমণের সময় প্রশাসন সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে পর্যটকরা রাত্রিযাপন করতে পারবেন। নিরাপত্তার জন্য প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী একযোগে কাজ করবে।

 

পরিবেশ অধিদফতরও দ্বীপের পরিবেশ সুরক্ষায় কঠোর। কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক জমির উদ্দিন বলেন, ‘সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। জাহাজে ওঠা থেকে দ্বীপে ভ্রমণ পর্যন্ত পর্যটকরা নির্দেশনা মানছে কিনা তা নিশ্চিত করা হবে।’

 

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ১২ নির্দেশনা

 

১) বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া সেন্টমার্টিন দ্বীপে কোনো নৌযান চলাচলের অনুমতি দিতে পারবে না।

 

২) পর্যটকদের অবশ্যই বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট ক্রয় করতে হবে, যেখানে প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস এবং কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।

 

৩) দ্বীপে ভ্রমণের সময়সূচি এবং পর্যটক উপস্থিতিও এবার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে।

 

৪) নভেম্বর মাসে পর্যটকরা শুধু দিনের বেলায় ভ্রমণ করতে পারবেন, রাত্রিযাপন করা যাবে না।

 

৫) ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাত্রিযাপনের অনুমতি থাকবে।

 

৬) ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে।

 

৭) প্রতিদিন গড়ে দুই হাজারের বেশি পর্যটক দ্বীপে ভ্রমণ করতে পারবেন না।

 

৮) সেন্টমার্টিনের প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে দ্বীপে রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি, বা বারবিকিউ পার্টি করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

 

আরও পড়ুন: সেন্টমার্টিন দখলকারীদের বিরুদ্ধে জোরালো বার্তা দিয়েছি: রিজওয়ানা হাসান

 

৯) কেয়া বনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা ক্রয়-বিক্রয়, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

 

১০) সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ যে কোনো মোটরচালিত যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।

 

১১) নিষিদ্ধ পলিথিন বহন করা যাবে না এবং একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক যেমন চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, ৫০০ ও ১০০০ মিলিলিটারের প্লাস্টিক বোতল ইত্যাদি বহন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

 

১২) প্লাস্টিকের বোতলের পরিবর্তে পর্যটকদের নিজস্ব পানির ফ্লাস্ক সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন