গত কয়েক সপ্তাহ ধরে টিউলিপ সিদ্দিকের দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যমে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
অভিযোগ উঠে, টিউলিপ বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে লন্ডনে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট এবং বাংলাদেশে রাশিয়ার সহায়তায় নির্মাণাধীন পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে মোটা অঙ্কের ঘুষ গ্রহণ করেছিলেন।
এসব অভিযোগে তার বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত চলছিল। পাশাপাশি বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে পদত্যাগের চাপ বাড়ছিল। নানামুখী চাপের মুখে অবশেষে পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন টিউলিপ।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদন মতে, টিউলিপ এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। সেই চিঠিতে তিনি তার বিরুদ্ধে তদন্তকারী সংস্থা মিনিস্ট্রিয়াল স্ট্যান্ডার্ডসের একটি তদন্তের কথা উল্লেখ করেছেন।
আরও পড়ুন: টিউলিপের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন ‘শিগগিরই’
সেখানে তিনি দাবি করেছেন, ‘তদন্তকারী সংস্থা মিনিস্ট্রিয়াল স্ট্যান্ডার্ডসের উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাস তার বিষয়টি পর্যালোচনা করার পর নিশ্চিত করেছেন যে তিনি মন্ত্রীত্বের নিয়ম লঙ্ঘন করেননি।’
প্রতিবেদন অনুসারে, প্রধানমন্ত্রী স্টারমার তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। সেই সঙ্গে পদত্যাগপত্রের জবাবে লেখা ফিরতি এক চিঠিতে স্টারমার বলেছেন, ‘আপনার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে আমিও এটা স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, মিনিস্ট্রিয়াল স্ট্যান্ডার্ডসের উপদেষ্টা হিসেবে স্যার লরি ম্যাগনাস আমাকে আশ্বস্ত করেছেন যে তিনি আপনার বিরুদ্ধে মন্ত্রীত্বের নিয়মের কোনো লঙ্ঘন খুঁজে পাননি এবং আর্থিক অনিয়মের কোনো প্রমাণ পাননি।’
গত বছর ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বাংলাদেশে ৯টি অবকাঠামো প্রকল্প থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে।
আরও পড়ুন: বিনা টিকিটে বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখেছেন টিউলিপ!
তাতে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের লেবার সরকারের দুর্নীতি মোকাবিলার দায়িত্বে থাকা টিউলিপ সিদ্দিকের নামও আসে। ওই অভিযোগ তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের এই তৎপরতা আলোচনায় আসার পর যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি খবর প্রকাশ হয়। ২০১৩ সালে শেখ হাসিনার মস্কো সফরে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার বৈঠকের সময় টিউলিপ সিদ্দিকও উপস্থিত ছিলেন। তার ওই ছবি এ সময় ফলাও করে প্রচার করে বেশ কয়েকটি ব্রিটিশ গণমাধ্যম।
এই প্রেক্ষাপটে টিউলিপ তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের অনুরোধ জানিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা (ইন্ডিপেনডেন্ট অ্যাডভাইজার অন মিনিস্ট্রিয়াল স্ট্যান্ডার্ডস) লাউরি ম্যাগনাসের কাছে চিঠি (রেফারেল) লেখেন। এরপর এর তদন্ত শুরু হয়।
আরও পড়ুন: টিউলিপের ক্ষমা চাওয়া উচিত: ড. ইউনূস
গত বছর ৪ জুলাই অনুষ্ঠিত যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে দক্ষিণ-পশ্চিম লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট আসন থেকে টানা চতুর্থবারের মতো পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন টিউলিপ সিদ্দিক। এরপর তাকে ইকোনোমিক সেক্রেটারি টু দ্য ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার পদে নিয়োগ দেয় প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার নেতৃত্বাধীন সরকার।