পটুয়াখালীতে মাকে হত্যার দায়ে ছেলে গ্রেফতার, আদালতে স্বীকারোক্তি

৩ সপ্তাহ আগে
পটুয়াখালী সদর থানাধীন বড়বিঘাই ইউনিয়নে মাকে নৃশংসভাবে হত্যার দায়ে তারই ছেলে মো. খোকন হাওলাদার (৩৭) ওরফে ইউসুফকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। হত্যার কারণ হিসেবে উঠে এসেছে মায়ের বিরুদ্ধে অসামাজিক কার্যকলাপ, পারিবারিক নির্যাতন এবং দীর্ঘদিনের ক্ষোভের মিশ্র প্রতিশোধের ঘটনা।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ মার্চ সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে দক্ষিণ বিঘাই গ্রামের নিজ বাড়িতে রিজিয়া বেগম (৫৫) নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। ঘটনার সময় রিজিয়া বেগম তার স্বামীর ঘরে ইফতারের পর তারাবির নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সে সময় অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে পালিয়ে যান।


এ ঘটনায় নিহতের ভাই মো. শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে পটুয়াখালী সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার পর পুলিশ জেলা পুলিশের একাধিক টিম নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা নজরদারি চালিয়ে তদন্ত শুরু করে।


তদন্তে নিশ্চিত হওয়া যায়, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত নিহতের বড় ছেলে মো. খোকন হাওলাদার ওরফে ইউসুফ। এরপর ২৬ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী পূর্ব থানাধীন টিআইসি গেইট এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ভারী কাঠের তক্তা ও একটি লোহার দা জব্দ করা হয়।


পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে মো. খোকন হাওলাদার জানান, তার মা রিজিয়া বেগমের বিরুদ্ধে একাধিক বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক, আপন বোনকে বিষ প্রয়োগে হত্যা এবং তার বাবাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করার অভিযোগ ছিল। এই কারণে তার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ সঞ্চিত ছিল এবং সেই ক্ষোভ থেকেই তিনি পরিকল্পিতভাবে মাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন।


আরও পড়ুন: মাকে হত্যা করে মরদেহ গুমের চেষ্টা, বাধা দেয়ায় স্ত্রীকে ছুরিকাঘাত


গ্রেফতারকৃত খোকন হাওলাদার আরও জানান, ঘটনার একদিন আগে তিনি গাজীপুর থেকে পটুয়াখালী রওনা দেন। ইফতারের পর নিশ্চিত হয়ে যে তার বাবা বাড়িতে নেই, তিনি ঘরে প্রবেশ করে প্রথমে কাঠের তক্তা দিয়ে মায়ের মাথায় আঘাত করেন। প্রতিরোধের চেষ্টা করলে তার মায়ের হাত ভেঙে যায়। পরে উপর্যুপরি আঘাতের মাধ্যমে হত্যা নিশ্চিত করেন এবং দা দিয়ে শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে একাধিক কোপ দেন। পরে তাকে আদালতে হাজির করা হলে তিনি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।


এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম সজল বলেন, ঘটনার পরপরই জেলা পুলিশের একাধিক টিম ধারাবাহিকভাবে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তদন্ত পরিচালনা করে। অবশেষে হত্যার মূল অভিযুক্ত মো. খোকন হাওলাদারকে গ্রেফতার করা হয়। আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। আমরা তদন্তের আওতায় খতিয়ে দেখছি এ ঘটনায় আর কেউ জড়িত আছে কিনা। কেউ জড়িত থাকলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।


তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত অব্যাহত রয়েছে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ ঘটনার জড়িতদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন