বুধবার (২৫ জুন) দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হচ্ছেন, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল নোমান, অ্যাডভোকেট হাসিবুর রহমান, কলাপাড়া উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি আতিকুল ইসলাম দিপু, কলাপাড়া পৌর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল ও পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজল তালুকদার। এ ঘটনায় আদালত চত্বর উত্তপ্ত রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে আদালতে উপস্থিত আইনজীবীদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় শুরু হয়। একপর্যায়ে তা হাতাহাতিতে রূপ নেয়। এতে পাঁচজন আহত হন।
বিএনপিপন্থি আইনজীবী ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল্লাহ আল-নোমান বলেন, ‘কলাপাড়ার একটি জিআর মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী হয়ে আমি শুনানিতে অংশগ্রহণ করি। বাদির শাহিন (মো. শাহিন মৃধা) যুবলীগ নেতা এবং কলাপাড়ার পোর্টের জেটিতে থাকেন। সে গত ১৫ বছরে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যা বিভিন্ন সময় মিডিয়াতেও উঠেছে এবং সে ঘটনার দিন (১৩ মে) নিজের ঘরে নিজে আগুন দেন। ধারালো ছোরাসহ তার ছবিও আছে। ওই আগুনের মামলায় স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম মহসিন, কলাপাড়া পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজল তালুকদারকে আসামি করছে। অথচ আমাদের বারের (জেলা আইনজীবী সমিতি) সেক্রেটারিসহ কয়েকজন এপিপি দাঁড়িয়ে আওয়ামী যুবলীগ নেতার মামলার পক্ষে সাফাই করছেন এবং কোর্টকে প্রভাবিত করে দুইজনকে হাজত দেন এবং বারের সেক্রেটারি সালাউদ্দিন সাহেব আমাকে মারধর করেন। এক পর্যায়ে আমাকে খুন করারও হুমকি দেন তিনি। আওয়ামী লীগের দালালি এখন তারা কোর্ট-কাচারিতে করছেন।’
আরও পড়ুন: জামালপুর আদালতের পিপির কক্ষে তালা বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের
আব্দুল্লাহ আল-নোমান আরও বলেন, ‘জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজস্ব প্রভাব খাটিয়ে আমাকে সাতদিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে নোটিশ দিয়েছেন। এটা তিনি করতে পারেন না।’
ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম মহসিন বলেন, ‘আমি এসে তাদেরকে বললাম ভাই আমরা তো সবাই নিজেরা। আমার পক্ষে যেসব আইনজীবীরা দাঁড়িয়েছেন তাদেরকে মারধর কইরেন না। এ সময় আমি ফিরাতে চাইলে তারা আমাকেসহ আইনজীবীর উপর ঝাপিয়ে পড়েন।’
এ ব্যাপারে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শরীফ মো. সালাহউদ্দিন বলেন, ‘কলাপাড়ার একটি মামলার জামিন শুনানি ছিল। সেই মামলার বাদী হচ্ছে ধানখালী ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শাহিন মৃধা এবং আসামীরাও হচ্ছেন কলাপাড়া বিএনপির লোকজন। সেদিন কী ঘটনা ঘটেছিল তা আমরা-আপনারা সকলেই জানেন। সেই ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামীরা জামিনের জন্য আবেদন করেছেন এবং অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল-নোমানসহ ১৫/২০ জন আইনজীবী জামিনের জন্য শুনানি করেছেন। রাষ্ট্রপক্ষের এপিপিরা বাদী পক্ষের শুনানিতে অংশগ্রহণ করেছেন। আমিও ওখানে ছিলাম। আদালত দুজনকে হাজত দেন এবং বাকিদের জামিন দেন। এ বিষয় নিয়ে আব্দুল্লাহ নোমান সাহেব আদালতকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। এ সময় আমিসহ উপস্থিত আইনজীবীদের সঙ্গে তাদের কথার কটাকাটি হয়। এক পর্যায় সে বাইরে বের হয়ে কলাপাড়ার বহিরাগত যত লোকজন এসেছিলেন তাদের নিয়ে আমাদের আইনজীবীদের ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা করে এবং আজেবাজে স্লোগান দিচ্ছিল। পরিস্থিতি অবনতি ঘটলে এক পর্যায়ে আমি আইনজীবীদের নিয়ে বার লাইব্রেরিতে চলে আসি। এ সময় তারা আমাদের আইনজবীবীদের ধাওয়া করে। আমরা বার লাইব্রেরি ভবনের মধ্যে ঢুকে পড়ি এবং মেইন গেট আটকে দেই। তারপরও তারা বহিরাগতদের নিয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির মধ্যে ঢুকতে বার বার চেষ্টা চালায় এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে।’
এ বিষয়ে পটুয়াখালী সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ইমতিয়াজ বলেন, ‘আমি ঘটনাটি শুনেছি। তবে কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনআনুক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’