শনিবার (২৪ মে) বিকেলে সদরের হাড়িভাসা ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের ডোলোপুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহিল জামান ও হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই আলমের উপস্থিতি পরিবারের সদস্যদের জিম্মায় তাদের হাতে তুলে দেন সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন।
এ সময় আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকা জুড়ে এক আনন্দমুখর পরিবেশ দেখা গেছে। এর আগে সকালে আটকদের পরিবারের সদস্যরা খুলনা থেকে পঞ্চগড়ে এসে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
সরেজমিনে কথা হয় আটক থাকা আলেয়া বেগমের সাথে।
তিনি সময় সংবাদকে বলেন, ‘আমরা ভারতে বসবাস করে বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। এর মাঝে গত ২১ মে ভারতীয় পুলিশ আমাদের গুজরাট এলাকা থেকে আটক করে উড়োজাহাজে কলকাতা নিয়ে আসে। পরে কলকাতা থেকে বাসে করে এনে বিএসএফ সীমান্ত থেকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। এর পর বিজিবি আটক করে আমাদের। গত তিনদিন ধরে এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে ছিলাম সবাই। এর মাঝে আজ আমাদের পরিবারের সদস্যরা এসে আমাদের খুলনায় নিজ বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে।’
আরও পড়ুন: রামগড় সীমান্তে এক পরিবারের ৫ জনকে পুশইন
খুলনা থেকে স্ত্রী-সন্তানকে নিতে আসা ফরহাদ সময় সংবাদকে বলেন, ‘আমি পরিবার নিয়ে ভারতে থেকে কীটনাশক কোম্পানিতে কাজ করতাম। এর মাঝে আমাদের সবাইকে বাড়ি থেকে তুলে নেয় ভারতীয় পুলিশ। পরে আমাকে আলাদা স্থানে নিয়ে সুন্দরবন দিয়ে নদীতে ছেড়ে দেয়। পরে সাতরে বাংলাদেশে আসি। এদিকে স্ত্রী সন্তানের কোনো খবর না পেলেও হঠাৎ বাংলাদেশের গণমাধ্যমে তাদের ছবি দেখি। পরে পঞ্চগড়ে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে আজ পরিবারকে নিতে এসেছি। খুব ভালো লাগছে, সুস্থভাবে পরিবারকে ফেরত পেয়েছি।’
এদিকে পঞ্চগড়ে তিনদিন পুলিশি হেফাজতে থাকার পর নিজ পরিবারে ফিরে যাওয়ায় পুলিশ ও জেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান খোলা আকাশে মুক্তি পাওয়া অন্যরা।
হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই আলম সময় সংবাদকে বলেন, ‘২১ জন আটক হওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাতে ইউএনও স্যার আমাকে ফোন করেন। তাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পে রাখার বিষয়ে। আমি তাদের থাকার ও খাবার ব্যবস্থা করি। আজকে তাদের অভিভাবক আসায় প্রশাসনের মাধ্যমে সবাইকে পরিবারের কাছে তুলে দেয়া হয়েছে।’
পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহিল জামান সময় সংবাদকে বলেন, ‘আইনিভাবে আমরা তাদের পরিচয় নিশ্চিত করেছি, তারা বাংলাদেশের। এ বিষয়ে থানায় জিডি করা আছে। তাদের পরিবারের সদস্যরা আজ আসলে সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে তুলে দেয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন সময় সংবাদকে বলেন, ‘তারা আটক হওয়ার পর জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হয়। এরপর শনিবার পরিবারের সদস্যদের জিম্মায় সব প্রসেস শেষে তাদের তুলে দেয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন: মৌলভীবাজার সীমান্তে ৭ জনকে বিএসএফের পুশইন
এরআগে, বৃহস্পতিবার (২২ মে) ভোরে নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ এলাকা উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের বড়বাড়ি সীমান্ত এলাকা দিয়ে তাদের বাংলাদেশে পুশইন করা হয়। এরপর এলাকায় তাদের দেখে স্থানীয়রা বিজিবিকে খবর দিলে বিজিবি তাদের আটক করে। পরে পঞ্চগড় সতর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করলে রাতে সবাইকে ডোলোপুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে রাখা হয়। পরিবারের সদস্যদের খবর দেয়া হলে ৩ দিনের মাথায় তাদের আইনি প্রক্রিয়া শেষে হস্তান্তর করা হয়।
তারা হলেন: খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার আমবাড়িয়া ইউনিয়নের মাজিরগাতি এলাকার ইসরাইল ফকির স্ত্রী আলেয়া (৫৫) এবং তার ছেলে রব্বিল ফকির (২২) ও পুত্রবধূ শিমলা (১৯), নাতনী আলিশা (৩), নাতি আয়ান (৩ মাস), একই এলাকার ইব্রাহিম ফকিরের স্ত্রী হেলেনা (২৭), মেয়ে রোজিনা (৮), ছেলে ইসমাইল (৫)। উপজেলার গাজির হাট ইউনিয়নের গাজির হাট এলাকার ফরহাদ শেখের স্ত্রী স্বপ্না (২৯), ছেলে ফারজানা (১২), মেয়ে আফসানা (৯), মরিয়ম (৩), নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বাবরা হাচলা ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর এলাকার আশিক সরদারের স্ত্রী রোজি (৩৯), তার ছেলে রানা (১৭), মেয়ে আয়েশা (৪), একই এলাকার আজি এর স্ত্রী শিমা (৩০), মেয়ে কুলসুম (১০), ছেলে রহমান (৬), রেহমান (৫), মেয়ে আফরিন (৩) এবং ছেলে রেহমাত আলী (২)।