‘অপহরণ, ধর্ষণ ও মারধরের’ অভিযোগে ওই মামলা হওয়ার পর সোমবার (১৯ মে) রাত ২টার দিকে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার এলাকা থেকে নোবেলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মঙ্গলবার (২০ মে) আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ডেমরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মুরাদ হোসেন বলেন, ‘সম্প্রতি একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে এক তরুণীকে সিঁড়ি দিয়ে টেনেহিঁচড়ে নামাতে দেখা যায় নোবেলকে। গতরাতে ওই তরুণী ধর্ষণ, পর্নোগ্রাফি ও মারধরের অভিযোগে নোবেলের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন। এরপরই নোবেলকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
মামলার বরাত দিয়ে পুলিশ বলছে, ২০১৮ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নোবেলের সঙ্গে ওই তরুণীর পরিচয় হয়। গত বছরের ১২ নভেম্বর নোবেল মোহাম্মদপুরে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন এবং ডেমরার বাসার স্টুডিও দেখানোর কথা বলে তাকে বাসায় নিয়ে যান।
আরও পড়ুন: কারাগারে গায়ক নোবেল
এরপর আরও ২/৩ জন অজ্ঞাত সহযোগীর সহায়তায় ওই তরুণীকে নোবেলের বাসায় আটকে রাখা হয় এবং তার মোবাইল ভেঙে ফেলা হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়।
ভুক্তভোগী তরুণীর অভিযোগ, 'নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মারধর ও ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে' সোমবার পর্যন্ত নোবেলের বাসায় আটক রাখা হয় তাকে।
পুলিশ বলছে, ফেসবুকে ভুক্তভোগীকে মারধরের একটি ভিডিও ভাইরাল হলে পরিবার মেয়েটিকে চিনতে পেরে জাতীয় জরুরি সেবার নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে। এরপর সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ডেমরা থানা পুলিশ ভিকটিমকে উদ্ধার করে। পরে ওই তরুণী মামলা করলে নোবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়।ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়া ওই সিসিটিভি ভিডিওতে এক তরুণীকে মারধর করে হাত ধরে টেনেহিঁচড়ে সিঁড়ি দিয়ে নামিয়ে নিতে দেখা যায়। এ সময় কয়েকজন বাধা দিতে দেখা গেলেও নোবেলকে থামানো যায়নি।
ডেমরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মুরাদ হোসেন বলেন, ‘নোবেল দাবি করেছেন, ওই তরুণী তার স্ত্রী, মৌখিকভাবে কলমা পড়ে তাকে বিয়ে করেছেন। কিন্তু বিয়ে সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র তিনি দেখাতে পারেননি।’
পরিদর্শক মুরাদ হোসেন মঙ্গলবার নোবেলকে আদালতে হাজির করে তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। অন্যদিকে নোবেলের পক্ষে জামিনের আবেদন করেন তার আইনজীবী জসিম উদ্দিন। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক জামিনের বিরোধিতা করে। শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম জিয়া উদ্দিন আহমেদ জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে নোবেলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আরও পড়ুন: আদালতে তোলা হয়েছে গায়ক নোবেলকে
মামলা বা গ্রেফতার অবশ্য নোবেলের জন্য নতুন নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিতর্কিত পোস্ট, মাদকাসক্তি আর স্ত্রীকে নির্যাতনের মতো অভিযোগে বহুবারই এই তরুণ গায়ক সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন।
অগ্রিম টাকা নিয়ে গান গাইতে না যাওয়ার অভিযোগে ২০২৩ সালের ১৯ মে ঢাকার মতিঝিল থানায় নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা করেন সাফায়েত ইসলাম নামে এক ব্যক্তি।
পরদিন গোয়েন্দা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের মাধ্যমে এক দিনের হেফাজতে নেয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে নেয়ার পর জামিন পান নোবেল।
২০১৯ সালে ভারতের জি-বাংলা টিভির রিয়েলিটি শো ‘সা রে গা মা পা’তে অংশ নিয়ে তৃতীয় হয়ে আলোচনায় আসেন নোবেল। তবে নানা কর্মকাণ্ডে তাকে নিয়ে বিতর্কও বাড়তে থাকে।
২০২৩ সালেরই ২৬ এপ্রিল কুড়িগ্রামে গান পরিবেশনের সময় মঞ্চে নোবেলের ‘অসংলগ্ন আচরণে’ ক্ষুব্ধ হয়ে জুতা ও পানির বোতল ছোড়ে দর্শক। আর তাতে পণ্ড হয় ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজের ৫০ বছর পূর্তি ও সুর্বণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
তবে সম্প্রতি বিভিন্ন কনসার্ট ও গণমাধ্যমের অনুষ্ঠানে প্রায়ই উপস্থিত হয়ে নিজের ‘স্বাভাবিক’ জীবনে ফিরে আসার জানান দিচ্ছিলেন নোবেল। এরমধ্যেই নতুন অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে তাকে জেলে যেতে হলো।