জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় দুদকের ময়মনসিংহ সমন্বিত জেলা কার্যালয় এ গণশুনানির আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান। সরাসরি গণশুনানি পরিচালনা করেন দুদকের (তদন্ত) কমিশনার মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী।
গণশুনানিতে সেবা গ্রহীতারা তাদের অভিযোগ উত্থাপন করলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সেবাদাতাদের সরাসরি জবাবদিহির মুখোমুখি করা হয়। এতে করে জেলার ২৭টি সরকারি, আধা-সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা সেবা সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়মের ব্যাখ্যা দিতে বাধ্য হন।
সাধারণ মানুষের সরাসরি অভিযোগ উপস্থাপনের মাধ্যমে তারা সাহসী হয়ে ওঠে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সরব হতে। তবে অনেকে তাৎক্ষণিক সমাধানে খুশি হলেও, কিছু অভিযোগ সমাধান না হওয়ায় আংশিক অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
কমিশনার আজিজী সরাসরি সমাধান হয়নি এমন অভিযোগগুলোর ক্ষেত্রে আগামী তিন থেকে চার দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। অন্যথায়, আইন অনুযায়ী দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন তিনি।
তিনি বলেন, সমস্ত দেশে দুর্নীতি কঠিন শিলার মতো রূপ ধারণ করেছে। এই কঠিন শিলাকে সাবানের ফেনা বা ডিটারজেন্ট দিয়ে পরিস্কার করা যাবে না, কিন্তু পরিস্কার করতেই হবে। আমরা সেই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত।
গণশুনানিতে মোট ৯৬টি অভিযোগ উত্থাপিত হয়। এর মধ্যে ৭টি অভিযোগ তাৎক্ষণিকভাবে ডিসমিস করা হয়, ৫টি অভিযোগ তদন্তের জন্য প্রেরণ করা হয়, ১টি অভিযোগ আদালত থেকে প্রত্যাহার হয় এবং ১টি অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশন সরাসরি গ্রহণ করে।
আরও পড়ুন: কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ: দুদকের উপপরিচালক মাহবুবুল আলম বরখাস্ত
সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ সিদ্ধান্তের মধ্যে ছিল সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের নকল নবীস আব্দুল কুদ্দুস হারিছ ও তল্লাশি কারক মো. ওয়াফিজ মিয়ার লাইসেন্স স্থগিত করা। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে এ সিদ্ধান্ত দেন দুদক কমিশনার।
এছাড়া, গ্রাহক আব্দুর রাজ্জাকের ভৌতিক বিদ্যুৎ বিল সংক্রান্ত অভিযোগের ভিত্তিতে পিডিবির প্রকৌশলী মো. সালাহ উদ্দিনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়।
গণশুনানির সমাপনী বক্তব্যে কমিশনার আজিজী বলেন, দুদক রাজনৈতিক নয়, বাস্তবতানির্ভর প্রতিষ্ঠান। আমরা দুষ্টের দমন করতে চাই সৎ মানুষের পাশে থেকে। ভুলত্রুটির বাইরে কেউ নয়, কিন্তু শুদ্ধতার পথে সবাইকে একসঙ্গে হাঁটতে হবে। সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ, আমাদের ভুল ধরিয়ে দিন, না শোধরালে প্রকাশ করুন।
গণশুনানিতে উপস্থিত ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন, ময়মনসিংহ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. তাজুল ইসলাম ভূইয়া, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) হাফিজুল ইসলাম, দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সহ-সভাপতি প্রিন্সিপাল আব্দুল বাতেনসহ জেলার বিভিন্ন দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।