শনিবার (৩১ মে) সকাল থেকে রোববার (১ জুন) অবধি থেমে থেমে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে নিম্নআয়ের খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার থেকে নিম্নচাপের প্রভাবে দমকা হাওয়া ও অবিরাম বৃষ্টির কারণে শহরের বিভিন্ন এলাকায় স্বাভাবিক চলাফেরা ও কাজকর্মে স্থবিরতা দেখা দেয়। শনিবার সকাল থেকে দিনভর বজ্রসহ বৃষ্টি চলতে থাকায় স্কুল-কলেজের ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থীরাও পড়েছেন বিপাকে।
শিক্ষার্থী নুরে আলম বলেন, ‘সকালে আকাশ পরিষ্কার দেখে ছাতা না নিয়েই বের হয়েছিলাম, পরে হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজে যেতে হয়েছে।’
শুধু শিক্ষার্থীরাই নন, দুর্ভোগে পড়েছেন রিকশাচালক, দিনমজুর ও দোকানদারসহ অন্যান্য পেশাজীবীরাও।
শহরের রিকশাচালক লিটন মিয়া বলেন, ‘সারাদিন ভিজেই রিকশা চালাচ্ছি, কিন্তু যাত্রী কম। যা আয় হয় তা দিয়ে ঠিকমতো সংসার চলে না।’
ষাটোর্ধ্ব চালক ইসলাম উদ্দিন বলেন, ‘ভিজে ভিজে ২০০-৩০০ টাকা কামাই হয়, আর তাতেই কোনো রকমে দিন চলে।’
একইভাবে বিপাকে পড়েছেন কামার শিল্পের কারিগররাও। শহরের পুরোনো কামারপট্টির কারিগর সুভাস চন্দ্র সরকার বলেন, ‘আগে ঈদের সময় অনেক ভিড় হতো, কিন্তু এখন মানুষ অনলাইন থেকে অর্ডার করে নেয়। বৃষ্টিতে দোকান একেবারে ফাঁকা।’
আরও পড়ুন: টানা বর্ষণে কাপ্তাইয়ের জনজীবন বিপর্যস্ত, পাহাড় ধসের শঙ্কা
তিনি আরও বলেন, ‘ছুরি-চাকু কয়েক বছর টিকে যায়, তাই কেউ নতুন কেনে না, পুরোনো জিনিস ধার দিতেই আসে। এই পেশা দিয়ে আর সংসার চলে না, তবু পৈত্রিক পেশা বলে ধরে রেখেছি।’
বৃষ্টিতে সড়কে জমে থাকা পানির কারণে পথচারীরা দোকানের সামনে কিংবা বাসাবাড়ির বারান্দায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। বজ্রপাত ও ভারী বর্ষণে অনেক বাসাবাড়িতে চাল বেয়ে পানি পড়েছে বলে জানান গৃহিণী মুরিদা রহমান।
তিনি বলেন, ‘বৃষ্টির শব্দ ভালো লাগলেও রাতে পানি পড়ায় ঘুমাতে পারিনি।’
কমিউনিটি ক্লিনিকের সিনিয়র স্বাস্থ্যকর্মী মাহমুদা আক্তার বলেন, ‘এমন বজ্রঝড়ের সময় ফ্রিজ বা ইলেকট্রনিকস পণ্যের ক্ষয়ক্ষতি হয়। সাবধানে থাকতে হয়।’
স্থানীয় বাসিন্দা প্লাবন আহমেদ জানান, ‘বজ্রপাতে একাধিকবার আমাদের রাউটার নষ্ট হয়েছে। শুক্রবার রাত থেকে নেট সংযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন।’
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাত ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত ১.১৪ মিলিমিটার এবং রাত ২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত আরও ১.১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। রোববার ভোর পর্যন্ত এ বৃষ্টি অব্যাহত ছিল।
টানা বৃষ্টিতে নেত্রকোনার মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হলেও আশার কথা— এখনো বড় কোনো দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবে নিম্নআয়ের মানুষ ও খেটে খাওয়া জনগোষ্ঠী বলছেন, এই বৃষ্টি যেন তাদের জীবিকার পথ আরও সংকুচিত করে দিয়েছে।