এদিকে লিখিত অভিযোগ করার পর অভিযোগকারীকে হুমকি ধমকির ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে থানায়। শিগগিরই প্রতিবেদন জমার আশ্বাস দিয়েছে তদন্ত কমিটি। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অধ্যক্ষ ফারুক আহমেদ তালুকদার।
পাহাড়ি সীমান্ত উপজেলা নেত্রকোনার দুর্গাপুর। পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর শিক্ষা উন্নয়নে ১৯৯৩ সালে মহিলা কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে অধ্যক্ষ হিসেবে ২০১৭ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত হন ফারুক আহমেদ তালুকদার। নিয়োগের প্রক্রিয়া থেকেই তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।
এর আগে ফারুক আহমেদ ২০০৩ সাল থেকে সুসং সরকাররি ডিগ্রি কলেজে সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রশিক্ষণ ছাড়াই কম্পিউটার শাখার প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে মহিলা কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগপ্রাপ্ত হন।
তৎকালীন আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় একের পর এক অভিজ্ঞতা ফাঁকি, ডার্ক নিয়োগসহ অর্থ আত্মসাৎ করে গেছেন র্নিদ্বিধায়। বিভিন্ন সময়ে অডিটে কাম্য যোগ্যতা নেই দেখানো হলেও তিনি ক্ষমতার দাপটে রয়েছেন বহাল তবিয়তে।
এমনকি বাবার নামে ২০১৪ সালে স্থাপিত আলহাজ মফিজ উদ্দিন তালুকদার কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি হয়ে ২০১৫ সালেই স্ত্রী কামরুন্নাহারকে কলেজের নিবন্ধন ছাড়াই ক্ষমতাবলে নিয়োগ দেন অধ্যক্ষ হিসেবে। এছাড়াও করেন নিয়োগ বাণিজ্য।
যোগ্যতা না থাকার পরও পদায়নসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির নানা অভিযোগে তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোতে লিখিত অভিযোগ করে সুসং দুর্গাপুর দুর্নীতি ও নিপীড়ন বিরোধী ভার্সিটিয়ান মঞ্চ। অভিযোগে ফারুক আহমেদের প্রতিটি কর্মক্ষেত্রের নানা অনিয়মের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: কলেজের অধ্যক্ষের পদায়ন নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৪ শিক্ষার্থী
অভিযুক্ত অধ্যক্ষ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি হয়ে এনজিও ফোরামের সভাপতি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি হয়ে একের পর এক করে যাচ্ছেন দুর্নীতি। শিক্ষকের ভিজিটিং কার্ডের পরিবর্তে সকলকে ধরিয়ে দেন দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি লেখা কার্ডটি।
এদিকে সকল কিছুর প্রমাণাদি সংগ্রহ করে সুসং দুর্গাপুর দুর্নীতি ও নিপীড়ন বিরোধী ভার্সিটিয়ান মঞ্চের পক্ষে আহ্বায়ক কাজী আশফিক রাসেল লিখিত অভিযোগটি করেন।
এ সকল অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসন ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে উপজেলা প্রশাসন।
এদিকে অভিযোগকারীকে নানাভাবে হুমকি ধমকি দেয়ার ঘটনায় আশফিকের মা বাদী হয়ে ৪ ডিসেম্বর দুর্গাপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেন অভিযুক্ত।
অভিযোগকারী আশফিক জানান, তাকে টাকার প্রলোভনসহ বিভিন্ন ভাবে একের পর এক হুমকি ধমকি দিয়ে যাচ্ছেন অধ্যক্ষ। প্রভাবশালী এই অধ্যক্ষ টাকা দিয়ে সকলকে ম্যানেজ করে রাখেন। তার বিরুদ্ধে যখনই অভিযোগ ওঠে তখনই তিনি মুখ বন্ধ করিয়ে ফেলেন সকলের। এমনকি গণমাধ্যমেরও। যে কারণে স্পষ্ট অভিযোগ করেও আমি বাড়ি আসতে পারি না ভয়ে। যারাই তদন্ত করে বা রিপোর্ট করতে যায় তারাই চুপ হয়ে পড়ে। এরপর আরও ভয় দেখায়।
সুসং সরকারি মহাবিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. নাসিরউদ্দিন জানান, তিনি একসঙ্গে এই কলেজে চাকরি করেছেন ফারুক আহমেদের সঙ্গে। সহকারী ফারুক আহমেদ কম্পিউটার শাখার প্রভাষক ছিলেন ২০০৩ থেকে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে পরে অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন।
কম্পিউটার শাখার শিক্ষক হলে গণিতের ছাত্র হতে হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্ষমতা বলেই দীর্ঘদিন চাকরি করেছেন।
সাবেক মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক গৌতম কুমার মল্লিক জানান, অধ্যক্ষ ফারুক আহমেদ কম্পিউটার শাখার শিক্ষক ছিলেন সুসং সরকারি মহাবিদ্যালয়ে। সেখানে তদন্ত হয়ে লেখা ছিল কাম্য যোগ্যতা নেই। যে কারণে তাকে এমপিও ভুক্তি করা হয় নি। এছাড়াও অধ্যক্ষ নিয়োগের সময় তার অনিয়মের বিরুদ্ধে আদালতে রিট পিটিশন করা হয়েছিল। যা অমান্য করেই তিনি অধ্যক্ষ হয়ে পড়েন।
আরও পড়ুন: ছাত্রীর সঙ্গে অশ্লীলতার অভিযোগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা
ফারুক আহমেদ তালুকদার তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অসত্য। সুপার কম্পোজ করে এ সকল কাগজ তৈরি করা হয়েছে।
কলেজের বর্তমান গভর্নিং কমিটির সভাপতি সাবেক জাতিসংঘের কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট এম এ জিন্নাহ বলেন, ‘নিয়োগগুলো যা হয়েছে তা আগে হওয়ায় আমি দেখিনি। মাত্র দায়িত্ব পেয়েছি। বিষয়টি শুনেছি। আমার কাছেও এসেছে অভিযোগ। তবে তদন্ত হচ্ছে। সত্য বেরিয়ে আসবে।’ অপরাধ প্রমাণিত হলে শাস্তি হবে বলেও জানান তিনি।
উপজেলা পরিষদের নির্বাহী বরাবর অভিযোগ হওয়ায় কমিটি গঠন হয়েছে। কিন্তু অনেক জটিল বিষয়। তারপরও আমরা দুবার বসেছি। দ্রুতই করা হবে তদন্ত প্রতিবেদন বললেন ৫ সদস্য বিশিষ্ট গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান দুর্গাপুর উপজেলা কৃষি অফিসার নীপা বিশ্বাস।
উল্লেখ্য, অধ্যক্ষ পরিচালিত বাবার নামে নামকরণ আলহাজ মফিজ উদ্দিন তালুকদার কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে স্ত্রী কামরুন্নাহার দায়িত্ব পালন করছেন। এ পর্যন্ত ১৫৬ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে জনবল রয়েছে মোট ২৩ জন। এখানে টাকা নিয়ে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে লিখিত অভিযোগে। এছাড়াও কলেজের নিবন্ধন ছাড়াই স্কুলের নিবন্ধন দিয়ে স্ত্রীকে অধ্যক্ষ বানিয়ে রাখার বিষয়েও সুস্পষ্ট অভিযোগ দেয়া হয়।