বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি বিবৃতিতে নেতানিয়াহুর নাম উল্লেখ করা হলেও এটি সৌদি ভূখণ্ডে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সরাসরি মন্তব্যের উল্লেখ করেনি।
ইসরাইলি কর্মকর্তারা সৌদি আরবের ভূখণ্ডে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ফোরটিনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেন, ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সৌদি আরবের কাছে পর্যাপ্ত খালি জমি আছে। সৌদি কর্তৃপক্ষ সৌদি আরবে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারে। সেখানে তাদের অনেক ভূমি আছে।’
ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পূর্বশর্ত হিসেবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের কথা জানিয়েছে সৌদি আরব। এই শর্ত নিয়ে কোনো দরকষাকষি সম্ভব নয়, এটাও নিশ্চিত করেছে রিয়াদ। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে নেতানিয়াহু জানান, ইসরাইল রাষ্ট্র বিপন্ন হবে, তিনি এমন কোনো চুক্তি করবেন না।
সৌদির ভূখণ্ডে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ইসরাইলি নেতার মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে মিশর ও জর্ডান।
শনিবার এক বিবৃতিতে কায়রো তেল আবিবের প্রস্তাবকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং অগ্রহণযোগ্য’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, এটি সৌদি আরবের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক পদক্ষেপ।
আরও পড়ুন: নেতানিয়াহুর উদ্ভট বক্তব্য / ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সৌদি আরবে অনেক জায়গা আছে
মন্ত্রণালয় জোর দিয়ে বলেছে যে, এই প্রস্তাবগুলো সরাসরি সৌদি সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন।
সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, গাজায় ফিলিস্তিনি ভাইদের বিরুদ্ধে ইসরাইলি বাহিনীর ক্রমাগত হামলা এবং ফিলিস্তিনিদের জাতিগত নির্মূল করার প্রয়াস থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে এই ধরনের বক্তব্য দেয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ফিলিস্তিনের ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণের কাছে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের অর্থ এবং সেই ভূমির সঙ্গে এর মানসিক, ঐতিহাসিক ও আইনি সম্পর্ক কী, এই উগ্রপন্থি ও দখলদারদের বুঝার সক্ষমতা নেই। এই ভূমিতে ফিলিস্তিনি জনগণই প্রথমে বসবাসের অধিকার রাখে।
সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ফিলিস্তিনি জনগণের তাদের ভূমির ওপর পূর্ণ অধিকার রয়েছে এবং তারা সেখানে অনুপ্রবেশকারী বা অভিবাসী নয়। চরমপন্থি ধারণার সমর্থকরাই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান প্রত্যাখ্যান করে, আরব দেশগুলোর গৃহীত শান্তি উদ্যোগ প্রত্যাখ্যান করে এবং ৭৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর অবিচার করে সত্য, ন্যায়বিচার, আইন এবং জাতিসংঘের সনদে প্রতিষ্ঠিত মূল্যবোধের লঙ্ঘন করছে।
মন্ত্রণালয় জনায়, ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার ‘দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকবে এবং যত সময়ই লাগুক না কেন কেউ তাদের কাছ থেকে এটি কেড়ে নিতে পারবে না’। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শুধুমাত্র দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতি গ্রহণ করে স্থায়ী শান্তি অর্জিত হবে।
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে তাড়ানোর পরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ ইসরাইলি মন্ত্রীর
গত ৪ ফেব্রুয়ারি হোয়াইট হাউসে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প গাজা নিয়ে তার উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। বলেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজার নিয়ন্ত্রণ নেবে এবং এর ওপর মালিকানা প্রতিষ্ঠা করবে। এছাড়া ফিলিস্তিনিদের দেশছাড়া করে অঞ্চলটি পুননির্মাণ করার কথাও জানান ট্রাম্প।
তবে আরব রাষ্ট্র ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের অনেক মিত্র দেশ গাজা নিয়ে ট্রাম্পের প্রস্তাবের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। ট্রাম্পের দাবি, ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার শর্ত হিসেবে সৌদি আরব স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র দাবি করছে না। কিন্তু রিয়াদ ট্রাম্পের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হলে তারা ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করবে না।
]]>