হাসপাতালের ডায়ালাইসিস ইউনিটের চিত্র এখন বিষণ্ন। এক সময় যেখানে প্রতিটি শয্যায় রোগী থাকতো, এখন অর্ধেকের বেশি শয্যা খালি। এক বছরের বেশি সময় ধরে যান্ত্রিক ত্রুটি ও মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়েছে বেশিরভাগ মেশিন। বর্তমানে সচল আছে মাত্র ১৩টি ডায়ালাইসিস মেশিন।
২০১০ সালে মাত্র ১০ শয্যা নিয়ে খুলনায় সরকারি পর্যায়ে এ ডায়ালাইসিস ইউনিটের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে আরও ১৮টি মেশিন যুক্ত করে একে ২৮ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এর ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের হাজারো কিডনি রোগীর জন্য এটি আশার আলো হয়ে উঠেছিল। অথচ এখন ঠিকমতো সেবা না পেয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন রোগীরা।
নুরুল আমিন নামের এক কিডনি রোগীর স্বজন জানান, এখানে মেশিন কম থাকায় সময় মতো সেশন পাওয়া যায় না। প্রাইভেট ক্লিনিকে গেলে খরচ বহন করা কঠিন। সরকারিভাবে যদি ঠিকভাবে সেবা পেতাম, অনেক স্বস্তিতে থাকতাম। বেসকারি ক্লিনিকে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা খরচ পড়ে। সেখানে এই হাসপাতালে খরচ মাত্র ৪শ’ টাকা।
আরও পড়ুন: তাপপ্রবাহে তৃষ্ণার্তদের জন্য পানির ব্যবস্থা করলো খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ
খুলনা বিশেষায়িত হাসপাতালের কিডনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. ইনামুল কবীর বলেন, ‘২০২৪ সালে আমরা ১৩ হাজার ৮৭৬টি ডায়ালাইসিস সেশন করেছি। মেশিনের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে যাওয়ায় সেই সংখ্যায় সেবা দেওয়া এখন কিছুটা কঠিন হয়ে পড়ছে। আমরা গত বছর আরও ৩০টি মেশিনের চাহিদার কথা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতাল চালুর সময় ২০০৯ সালের দিকে ফ্রেসিনিয়াসের ১০টি মেশিন ছিল। পরবর্তীতে দুই ধাপে নিপ্রোর ১৪টি এবং নিকিসো কোম্পানির ৬ ও টরে কোম্পানির ১০টি মেশিন কেনা হয়। বর্তমানে শুধু নিপ্রোর ১১টি ও ফ্রেসিনিয়াসের ২-৩টা মেশিন ভালো আছে। মাঝে মাঝে কিছু মেশিন মেরামত করে চালানো হয়। বেশিরভাগ মেশিনের মেয়াদকাল শেষ হয়ে গেছে। নতুন ডায়ালাইসিস মেশিন প্রয়োজন।’
শুধু কিডনি বিভাগ নয়, হৃদরোগ চিকিৎসাতেও রয়েছে চরম সংকট। দীর্ঘ ছয় মাস ধরে বিকল ক্যাথল্যাব মেশিনের কারণে বন্ধ রয়েছে এনজিওগ্রাম এবং হার্টে রিং পরানোর মতো জরুরি সেবা। এর বাইরে প্যাথলজি বিভাগেও প্রয়োজনীয় রি-এজেন্ট ও ব্লাড লাইন সরবরাহে ঘাটতির কারণে মাঝে মাঝে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরীক্ষা।
আরও পড়ুন: খুলনার নদ-নদীতে ১১ দিনে ৩ অজ্ঞাত মরদেহ, খুন না আত্মহত্যা?
হাসপাতালের পরিচালক ডা. শেখ আবু শাহীন বলেন, ‘আমরা একাধিকবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে জানিয়েছি। কিন্তু কোনো কার্যকর সমাধান আসছে না। এতে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। তবে আমরা আশা করি দ্রুত এর সমাধান হবে।’
অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতির উন্নয়ন ছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম এই চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে সেবার মান নিশ্চিত করা কঠিন হবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর ততদিন পর্যন্ত কষ্ট, দুর্ভোগ আর প্রতীক্ষাই হবে রোগীদের নিত্যসঙ্গী।