অলৌকিক দৃশ্য দেখে হালিমা আশ্চর্যান্বিত হন
নবীজির দুধপানকালে হালিমা অলৌকিক ও বরকতময় অনেক দৃশ্য দেখেন। হালিমার বর্ণনাসূত্রে ইতিহাসবিদ ইবনু ইসহাক বলেন, হালিমা এবং তার স্বামী তাদের একটি দুগ্ধপোষ্য সন্তানসহ বনু সাদ গোত্রের একদল নারীর সঙ্গে দুগ্ধপান করবে এমন শিশুর সন্ধানে মক্কা যান। সে সময় আরব ভ‚মিতে দুর্ভিক্ষের কারণে খাদ্য ও অর্থসংকট ছিল।
হালিমা বলেন, ‘আমার মাদি গাধার পিঠে সওয়ার হয়ে চলছিলাম। আমার সঙ্গে উটও ছিল। কিন্তু উটের ওলান থেকে এক বিন্দুও দুধ বের হচ্ছিল না। আমার বুকেও শিশুটির জন্য এক বিন্দু দুধ ছিল না। এদিকে ক্ষুধার তাড়নায় শিশুটি এতই ছটফট করছিল, সারাটি রাত আমরা ঘুমাতে পারিনি। এমতাবস্থায় আমরা বৃষ্টি ও সচ্ছলতার আশা-ভরসা নিয়ে প্রহর গুণছিলাম।
আমি আমার মাদি গাধাটির উপর সওয়ার হয়ে পথ চলতে থাকলাম। গাধাটি এতোই ধীরে ধীরে চলত যে, এতে কাফেলার অন্যরা বিরক্ত ও বিব্রতবোধ করত। এমনভাবে এক অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্য দিয়ে আমরা মক্কায় উপস্থিত হলাম। আমাদের দলে এমন কোনো নারী ছিল না যার কাছে শিশুনবীকে দুধপান করানোর প্রস্তাব দেয়া হয়নি। কিন্তু যখনই তারা জানতে পারল যে, শিশুটি পিতৃহীন এতিম তখনই তারা তাকে গ্রহণ করতে অস্বীকার করল।
দলের অন্যান্য নারী যারা আমার সঙ্গে এসেছিল তারা সবাই শিশু সংগ্রহ করে নিল। বাকি রইলাম শুধু আমি। আমার পক্ষে কোনো শিশু সংগ্রহ করা সম্ভব হলো না। অবশেষে আমি আমার স্বামীকে বললাম, “আমার সঙ্গিনীরা সবাই সন্তান নিয়ে ফিরছে আর আমাকে শূন্য হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে—তা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। খালি হাতে ফিরে যাওয়ার চেয়ে; আমি এতিম শিশুটিকেই নিয়ে যাই।”
স্বামী বললেন, “আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি তাকেই নিয়ে এসো। হালিমা বললেন, ‘আমি শিশু মুহাম্মাদকে নিয়ে ফিরে এলাম এবং তাঁকে আমার কোলে রাখলাম তিনি পূর্ণ তৃপ্তির সঙ্গে দুধপান করলেন। আমার গর্ভজাত সন্তানটিও পূর্ণ তৃপ্তির সঙ্গে দুধপান করল। এরপর তারা দুজনই ঘুমিয়ে পড়ল। এর পূর্বে এমন প্রশান্তির ঘুম আমরা কখনোই দেখিনি।
আমার স্বামী উট দোহন করতে গিয়ে দেখেন, তার ওলান দুধে পূর্ণ। আমরা উভয়েই তৃপ্তির সঙ্গে পেট পুরে তা পান করলাম এবং আরামের সঙ্গে রাত্রিযাপন করলাম। আমার স্বামী বললেন, হালিমা! আল্লাহর শপথ! তুমি একজন মহা ভাগ্যবান সন্তান লাভ করেছো।
আরও পড়ুন: রাতে ঘুম না এলে যে আমল করবেন
হালিমা আরও বলেন, এরপর আমাদের দল মক্কা থেকে নিজ নিজ গৃহে ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা দিল। মহান আল্লাহর শপথ! আমার সেই দুর্বল গাধাই সবাইকে পেছনে ফেলে দ্রুতবেগে সবার আগে এগিয়ে যেতে থাকল। অন্য কোনো গাধাই তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারল না।
এমন এক রহস্যময় অবস্থার মধ্য দিয়ে আমরা নিজ বাড়িতে উপস্থিত হলাম। মক্কা থেকে আমাদের ফিরে আসার পরবর্তী সময়ে আমাদের বকরিগুলো চারণভ‚মি থেকে খেয়ে তৃপ্ত হয়ে দুধে পূর্ণ ওলানসহ বাড়িতে ফিরে আসত। দুগ্ধবতী বকরিগুলো দোহন করে আমরা তৃপ্তি সহকারে দুধপান করতাম। অথচ অন্য লোকেরা দুধ পেত অতি সামান্য। প্রত্যেকটি কাজে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সবকিছুর মধ্যেই আমরা বরকত পেতে থাকলাম।’
]]>