নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের আদর্শ। এমন কিছু দোয়া রয়েছে যেগুলো নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশি বেশি পড়তেন। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পঠিত দোয়াগুলো উম্মতের জন্য সুমহান শিক্ষা। সে দোয়াগুলো হচ্ছে-
আরও পড়ুন: যানবাহনে যেভাবে নামাজ আদায় করবেন
হজরত আনাস (রা.) বলেন, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবচেয়ে বেশি এ দোয়াটি পড়তেন,
اللَّهُمَّ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ (উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রাব্বানা আতিনা ফিদ-দুনিয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়া কিনা আজাবান্নার।)
অর্থ: হে আমাদের রব, আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দিন, আখেরাতেও কল্যাণ দিন এবং আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। (সুরা বাকারা: ২০১) (সহিহ বুখারি: ৬৩৮৯)
মুসলিমে আরও বর্ণিত হয়েছে, আনাস (রা.) নিজেও যখন কোনো একটি দোয়া করার ইচ্ছা করতেন, তখন এ দোয়াটি করতেন। আর যখন বিভিন্ন দোয়া করার ইচ্ছা করতেন, তখন সেগুলোর মধ্যে এ দোয়াও থাকতো। (মুসলিম: ২৬৮৮)
এ দোয়াটিকে নবিজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বেশি গুরুত্ব দেওয়া বা পছন্দ করার কারণ হলো, এ দোয়াটিতে একইসাথে দুনিয়ার কল্যাণ, আখেরাতের কল্যাণ প্রার্থনা করা হয়েছে এবং জাহান্নাম থেকেও মুক্তি প্রার্থনা করা হয়েছে। আয়েশা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) ‘জাওয়ামে’ অর্থাৎ দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ বা সব মুসলমানদের কল্যাণ প্রার্থনা অন্তর্ভুক্ত থাকে এমন দোয়া পছন্দ করতেন এবং এ রকম দোয়া ছাড়া অন্যান্য দোয়া পরিহার করতেন। (সুনানে আবু দাউদ: ১৪৮২)
হজরত উম্মে সালামা (রা.) কে একবার জিজ্ঞাসা করা হলো নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন দোয়াটি সবচেয়ে বেশি পড়েন। তখন তিনি এ দোয়াটির কথা উল্লেখ করেন-
يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ (উচ্চারণ: ইয়া মুক্বাল্লিবাল ক্বুলুব; সাব্বিত ক্বলবি আ’লা দীনিক।
অর্থ: হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের ওপর দৃঢ় ও মজবুত রাখো।) (তিরমিজি: ৩৫২২)
মহান আল্লাহ মানুষের অন্তরের একমাত্র পরিবর্তনকারী। সে কারণেই নবীজি সল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জন্য এবং তার উম্মতের জন্য শিক্ষা স্বরূপ এ দোয়াটি বেশি বেশি পাঠ করতেন।
হজরত জুওয়াইরিয়া (রা.) বর্ণনা করেন, একদিন আল্লাহর নবী সল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সময় আমার ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। তখন আমি জায়নামাজে ছিলাম। তিনি চাশতের সময় আমার ঘরে ফিরে এলেন। তখনও আমি জায়নামাজে ছিলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘জুওয়াইরিয়া! আমি যাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত এভাবেই ওজিফা আদায়ে ছিলে? আমি বললাম, হ্যাঁ।
তিনি আমাকে বললেন, আমি তোমার পরে চারটি বাক্য তিনবার বলেছি। যদি এগুলোকে ওজন করা হয় তবে তোমার কৃত সমস্ত ওজিফার চেয়ে এগুলোই বেশি ভারী হবে। আর তা হলো-
سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ عَدَدَ خَلْقِهِ وَرِضَا نَفْسِهِ وَزِنَةَ عَرْشِهِ وَمِدَادَ كَلِمَاتِهِ (উচ্চারণ: সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি আদাদা খালকিহি ওয়া রিজা নাফসিহি ওয়া জিনাতা আরশিহি ওয়া মিদাদা কালিমাতিহি। )
অর্থ: আমি আল্লাহ তায়ালার প্রশংসাসমেত পবিত্রতা ঘোষণা করছি। তার সৃষ্টিকুলের সংখ্যার পরিমাণ, তিনি সন্তুষ্ট হওয়া পরিমাণ, তার আরশের ওজন সমপরিমাণ, তার কথা লিপিবদ্ধ করার কালি পরিমাণ। (মুসলিম: ৭০৮৮)
আরও পড়ুন: জুমাবার আসরের পরে বিশেষ আমল
হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যুর আগে এই দোয়াটি বেশি বেশি পড়তেন,
سبحان الله وبحمده، أستغفر الله وأتوب إليه (উচ্চারণ: সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি; আস্তাগফিরুল্লাহ; ওয়া আতুবু ইলাইহি।)
অর্থ: আল্লাহর প্রশংসাসহ তার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি আর তার কাছে তাওবাহ করছি। (মুসলিম)
]]>