স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমতি ছাড়াই চলছে পাহাড় কাটা, সড়কের তলদেশ কাটা, নদী ও হ্রদের পাড়ে পাকা দালাল নির্মাণ। আর এতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে কাপ্তাই চট্টগ্রাম প্রধান সড়ক ও কর্ণফুলী নদীর কিনার। পাহাড়ের কিছু অংশ বাদে ব্যাপকভাবে বেদখল হয়েছে কর্ণফুলী নদীর পাড়। কাপ্তাইয়ের এমন কোনও স্থান নেই যেখানে দখল হয়নি পাহাড়, নদী, ঝিরি-ঝরনার অংশ বিশেষ। সবচেয়ে বেশি দখল হয়েছে কর্ণফুলী পাড়, কাপ্তাই হ্রদের আশপাশ ও ঘনবসতিপূর্ণ শিলছড়ি এলাকায়।
সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুসারে, কাপ্তাই হ্রদ ও কর্ণফুলী নদীর ১২০ এমএসএল (মিনস সি লেভেল) এর মধ্যে কোনও ভবন নির্মাণ করার অনুমতি নেই। কাপ্তাই হ্রদের পানি ধারণক্ষমতা ১০৯ এমএসএল। ও কর্ণফুলী নদীর জোয়ার ভাটা মিলে ধারণ ক্ষমতা ১১০ এমএলএস। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সরকারি প্রজ্ঞাপনের তোয়াক্কা না করে নদী ও হ্রদের পানির সীমানার ভেতরেই পর্যটন শিল্প গড়ে তোলার নামে বিভিন্ন পাকা স্থাপনা গড়ে তুলছেন প্রভাবশালীরা। এসব ভবনের বেশিরভাগই কর্ণফুলী নদীর পাড় ও কাপ্তাই হ্রদের ওপর অবৈধভাবে তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবছর বর্ষা এলে ওইসব স্থান সমূহের স্থাপনাগুলো খুঁটি থেকে মাটি সরে গিয়ে ভবন ধসের ঘটনা ঘটছে। পাশাপাশি নদী ও হ্রদের প্রকৃত গতিপথ প্রতিনিয়ত বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। এক কথায় কাপ্তাইয়ে নদী শাসন আইন লঙ্ঘিত হচ্ছে। আর চলছে সরকারি খাস জায়গার দখল শর্তের বেচাকেনার হিড়িক।
আরও পড়ুন: মাছ ধরা বন্ধ কাপ্তাই হ্রদে, ২৭ হাজার জেলে পরিবার সহায়তা পাবে কবে?
পরিবেশবাদীরা বলেন, ‘কাপ্তাই হ্রদের তীরবর্তী স্থানগুলো যেভাবে দখল হয়ে যাচ্ছে, তাতে রাঙ্গামাটিকে আর পর্যটন এলাকা হিসেবে মনে করা যায় না। অপরিকল্পিতভাবে দখলয়ানের ফলে যেকোনো সময় এখানে বড় ধরনের দুর্যোগের আশঙ্কা রয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর রাঙ্গামাটি জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মমিনুল ইসলাম সময় সংবাদকে বলেন, ‘জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা রাঙ্গামটি পার্বত্য জেলার কাপ্তাই উপজেলার কাপ্তাই লেক ও কর্ণফুলী নদী সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছে। পরিদর্শনকালে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ব্যতীত কর্ণফুলী নদীর জমি দখল করে রিসোর্ট নির্মাণ করেছেন। এরকম কর্মকাণ্ডে প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে, যা পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) অনুসারে দণ্ডনীয় অপরাধ। যারা নদী দখল করে রিসোর্ট নির্মাণ করার সঙ্গে যাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়ে একাধিক ব্যক্তিকে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত-২০১০) অনুসারে এ নোটিশ জারি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা
এদিকে গত সোমবার কাপ্তাই উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় পর্যটন স্পটগুলো পরিবেশবান্ধব যাতে হয় সে বিষয়ে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। এ সময় কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন তার বক্তব্যে বলেন, দখলদারদের কবল থেকে নদী রক্ষা করাই প্রধান লক্ষ্য নিয়ে সবাইকে আন্তরিক হয়ে পরিবেশ রক্ষায় কাজ করতে হবে। পরিবেশকে সুরক্ষা দিতে হলে প্রথম কাজ হবে কর্ণফুলী নদী রক্ষা করা।
যারা নদী দখল করে আছেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে সভায় অবহিত করে এ-ব্যাপারে সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।