নদীগর্ভে বিলীন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ, ঝুঁকিতে ভবন

১ সপ্তাহে আগে
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বিল হরিবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ প্রতি বছর ধীরে ধীরে আত্রাই নদীর গর্ভে চলে যাচ্ছে। নদীর ভাঙনে মাঠের ৫০ গজেরও বেশি জায়গা বিলীন হয়ে গেছে এবং বিদ্যালয়ের ভবনও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এতে শিক্ষার্থীরা আতঙ্কের মধ্যে তাদের পাঠক্রম ও খেলাধুলা করছে, কিন্তু সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো এখনো কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

বিদ্যালয়টির মাঠটি একসময়ে ৩ একর জমির উপর ছিল, কিন্তু এখন মাত্র এক তৃতীয়াংশ রয়েছে। ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই প্রাথমিক বিদ্যালয়টির মাঠ প্রতি বছর আত্রাই নদী নিজের গর্ভে নিচ্ছে। বিশেষ করে ২০১৮ এবং ২০২০ সালে এই ভাঙন মারাত্মক আকার ধারণ করে। এর ফলে স্কুলের ৩টি ভবনের মধ্যে ২টি ভবনের দরজা প্রায় নদীর পাড়ে পৌঁছেছে। বিগত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হলেও, সেগুলো দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হতে পারেনি। বিয়াঘাট ইউনিয়ন পরিষদ একটি প্রাচীর নির্মাণ করলেও তা ভাঙন রোধে কার্যকর হয়নি।


বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, তাদের খেলা ধূলার সময় নদীর পাড়ে খেলার কারণে প্রতিনিয়ত ভয়ের মধ্যে থাকতে হয়। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আসমা জানায়, নদীর পাশে খেলতে গিয়ে অনেক সময় সহপাঠীরা আঘাত পায়। অনেক সময় প্রচণ্ড ব্যথা হয়। তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী রুপা জানায়, ভয় লাগে, তবুও ক্লাসে আসতে হয়, কারণ স্কুল ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।

 

স্থানীয় বাসিন্দা ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা স্কুলটি রক্ষা করতে দ্রুত স্থায়ী বাধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। সাদ্দাম নামে এক অভিভাবক, বলেন, 'স্থায়ী বাধ না করা হলে, স্কুলটি রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। আমরা চাই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।'


রাশেদ নামে একজন আরেক অভিভাবক বলেন, 'ঝুঁকি থাকলেও, আমাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে হয়। এখানে অন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই।'


আরও পড়ুন: বর্ষা শেষ হলেও কুড়িগ্রামে থামছে না ভাঙন, দিশেহারা নদীপাড়ের মানুষ


স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রিফাত করিম জানান, ২০২০ সালে আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে বালির বস্তা ফেলা হয়েছিল, কিন্তু সেগুলোও নদী গর্ভে চলে গেছে। তিনি জানান, ৬ কোটি ৭০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তুত করা হয়েছে, যার মাধ্যমে বিদ্যালয়টি স্থায়ীভাবে রক্ষা করা সম্ভব হবে। তবে, এ পর্যন্ত অর্থ বরাদ্দ আসেনি। তিনি আশাবাদী যে, বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু হবে।


নাটোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল হান্নান জানান, এ বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। তিনি জানান, অধিদফতর এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের যৌথ উদ্যোগে দ্রুত সমাধান বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে।


বর্তমানে বিল হরিবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট ২৩৯ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। এলাকার মানুষের দাবি, যত দ্রুত সম্ভব স্কুলটি রক্ষা করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। না হলে, আগামী দিনগুলোতে এই বিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ আশঙ্কাজনক হতে পারে। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে, শুধু স্কুলটির ভবিষ্যতে নয়, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়বে।
 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন