নদী গিলে খাচ্ছে ভিটেমাটি, বরিশালে তীব্র ভাঙন আতঙ্কে বাসিন্দারা

১ দিন আগে
মৌসুমের শুরুতেই বরিশাল বিভাগের নদীতীরবর্তী এলাকাগুলোতে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রতিবছরই ভাঙনে হাজার হাজার মানুষ তাদের ঘরবাড়ি হারাচ্ছেন। ভুক্তভোগীরা বলছেন, ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া জরুরি, নইলে তারা সব হারিয়ে পথে বসবেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, এরই মধ্যে প্রায় ৬১ কিলোমিটার এলাকা ভাঙনপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে ২০০ কোটি টাকার প্রকল্পের প্রস্তাবনা জমা দেয়ার পাশাপাশি কিছু এলাকায় ভাঙনরোধে কাজও চলমান রয়েছে।

ষাটউর্ধো নীলুফা বেগম। অসহায়ের মত তাকিয়ে থাকেন নদীর দিকে। নদীর পানিতে মিশছে তার চোখের পানি। কারণ, ভিটেমাটির মোট জমির তিনে ভাগের দুইভাগই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে বাকি যেটুকু আছে তাও যায় যায় অবস্থা। তিনি জানান, নদীতে বেশিরভাগ জমিই বিলীন হয়ে গেছে। যা বাকি রয়েছে, সেগুলো বিলীন হওয়ার শঙ্কায় আছি।

 

নীলুফার মতো বরিশাল সদর উপজেলার শায়েসবাদ ইউনিয়নের দক্ষিণ চরআইচা এলাকায় কীর্তনখোলার থাবায় বিপর্যস্ত অন্যান্য বাসিন্দারাও। নদী ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি ভুক্তভোগীদের। তারা বলেন, নদীতে ভাঙতে ভাঙতে বাড়িঘরের কাছাকাছি চলে এসেছে। অনেকের বাড়িঘর, জমিজমা এরমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। সরকারকে ভাঙন রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

আরও পড়ুন: জামালপুরে যমুনার তাণ্ডব, ভাঙনে বিলীন ফসলি জমি-বসতবাড়ি

 

করুণ গল্প, পটুয়াখালী গলাচিপার সাহিদা বেগমরেও। একবার নয়, বুড়াগৌরাঙ্গের ভাঙনে এ পর্যন্ত চারবার ঘর সরাতে হয়েছে সাহিদাকে। শেষ আশ্রয়টুকু হারিয়ে নিঃস্ব তার পরিবার। তিনি বলেন, নদীতে ভাঙনে জায়গা-জমি সব গেছে। ফলে ছাপড়ার ঘরে থাকতে হচ্ছে।

 

সাহিদার মতো পটুয়াখালীর বিভিন্ন উপজেলার শত শত পরিবার একই দুর্ভোগের মুখোমুখি। প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়, প্রতিটি জলোচ্ছ্বাস একেকটা অভিশাপ হয়ে নেমেছে উপকূলবাসীর বুকে। স্থানীয়রা বলেন, বসতবাড়ির পাশাপাশি, মাদ্রাসা, মসজিদ সব বিলীন হয়ে গেছে নদীতে। বেড়িবাঁধ মজবুত করে তৈরি করলে অনেকাই শঙ্কামুক্ত থাকা যায়। সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

 

এদিকে, ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদী পাড়ের জনপদ। কিন্তু ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নেই কার্যকরী পদক্ষেপ। নদী পাড়ের বাসিন্দারা বলেন, ৩-৪ বার বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, স্থাপনা। তবে সরকার থেকে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।

 

আরও পড়ুন: ভাঙন আতঙ্কে গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র পাড়ের বাসিন্দারা, হুমকিতে মসজিদ-বিদ্যালয়ও

 

ভাঙন রোধে কাজ চলছে বলে দাবি পানি উন্নয়ন বোর্ডের। ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এ. কে. এম. নিলয় পাশা বলেন, সমীক্ষা রিপোর্টের ভিত্তিতে দ্রুত প্রকল্প প্রণয়ন করা হবে। এরপর অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু করা হবে।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ড বরিশাল অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, অতি ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলো চিহ্নিত করে প্রায় ৬ কিলোমিটার জায়গার কাজ হাতে নেয়া হয়েছে।

 

উল্লেখ্য, বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ৬১ কিলোমিটার ভাঙন তীব্র এলাকা চিহ্নিত করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন