সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ১২টার দিকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া থেকে ছাড়ার পর রো রো ফেরি শাহ পরান দৌলতদিয়ায় পৌঁছে নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পেরে প্রচণ্ড বেগে ৩ নম্বর ঘাটের পন্টুনে ধাক্কা দেয়। এতে কবজা ভেঙে যায় এবং ঘাটটি বন্ধ হয়ে পড়ে। ফলে মঙ্গলবার সকালে দৌলতদিয়া প্রান্তে প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ যানবাহনের লাইন তৈরি হয়।
সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লাইন আরও লম্বা হয়। এ অবস্থায় শুধুমাত্র ৪ নম্বর ফেরিঘাট চালু থাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাত্রীবাহী পরিবহন ও জরুরি পণ্যবাহী যানবাহন পারাপার করা হয়। তবে সাধারণ পণ্যবাহী গাড়ি পার হতে পারেনি। দীর্ঘসময় আটকে থাকায় চালক ও যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে ওঠে। পরে বুধবার দুপুরে পন্টুন মেরামতের পর ৩ নম্বর ঘাট সচল করা হলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়।
রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌরুটে ১০টি ফেরির মাধ্যমে প্রতিদিন তিন সহস্রাধিক যানবাহন পারাপার হয়ে থাকে। তবে দৌলতদিয়া ঘাটে দুর্ভোগ নতুন কিছু নয়। নদীভাঙন কিংবা দুর্ঘটনার কারণে প্রায়ই কোনো না কোনো ঘাট বন্ধ হয়ে পড়ে, তখন পণ্যবাহী ট্রাক থেকে শুরু করে যাত্রীবাহী পরিবহন সবাইকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
পরিবহন চালক পলাশ মোল্লা বলেন, ‘দৌলতদিয়া ঘাটে মাত্র দুইটি ফেরিঘাট সচল রয়েছে। তাও মাঝেমধ্যেই একটি বিকল হয়ে যায়। এতে আমাদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। ঘাটে অন্তত ৪-৫টি ফেরিঘাট সচল থাকলে ভালো হতো।’
আরও পড়ুন: জাল টানতেই বিশাল পাঙাশ, বিক্রি হলো ৩৬ হাজারে

আরেক পরিবহন চালক লিয়াকত আলী বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালুর পর যানবাহনের চাপ কমলেও এত বড় একটি ঘাট মাত্র দুইটি ফেরিঘাট দিয়ে কীভাবে চলে? ঘাট সংকটের কারণে আমাদের প্রায়ই দুর্ভোগে পড়তে হয়। তাই দৌলতদিয়ায় ফেরিঘাটের সংখ্যা বাড়ানো জরুরি।’
অন্যদিকে, ২০২০ সালে পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়ায় আনুষঙ্গিক সুবিধাদিসহ নদীবন্দর আধুনিকায়নের জন্য একনেক এক হাজার ৩৫১ কোটি ৭০ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন করে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয় বিআইডব্লিউটিএকে। ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর দৌলতদিয়া ইউনিয়নের বাহেরচর দৌলতদিয়া, উত্তর দৌলতদিয়া ও বেড়াডাঙ্গা মৌজার ৩০ একর জমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ নেন জেলা প্রশাসক। স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন ২০১৭-এর ৩ ও ৪ ধারায় নোটিশও দেয়া হয় জমির মালিকদের। নানা প্রক্রিয়ার পর ২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারি এ আইনের ৭ ধারায় নোটিশ জারি করে জমি অধিগ্রহণ চূড়ান্ত করা হয়। তবে সেখানেই থেমে যায় প্রকল্পের কার্যক্রম।
দৌলতদিয়া ঘাট এলাকার বাসিন্দা মো. সাহেব আলী খন্দকার বলেন, ‘আমরা পাঁচ-ছয় বছর ধরে শুনছি ঘাট আধুনিকায়ন হবে। এর জন্য আমাদের জমিও অধিগ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু পরে শুনি এই কাজ আর হবে না। দৌলতদিয়া ঘাট এখন অবহেলায় পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই অব্যবস্থাপনা আর অবহেলার কারণে এ ব্যস্ত নৌপথ ভোগান্তির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে।’
প্রকল্প পরিচালক মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘নকশা সংক্রান্ত জটিলতা ও ব্যয় বৃদ্ধির কারণে প্রকল্পটির কাজ শুরু হওয়ার আগেই সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।’
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক নুর আহাম্মদ ভূঁইয়া বলেন, ‘ভোগান্তি লাঘবে ফেরিঘাটের সংখ্যা বাড়াতে ঊর্ধ্বতন মহলকে অবহিত করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে দ্রুতই ঘাট সংকট সমস্যার সমাধান হবে।’
]]>