গত দুবছর ধরে এই মানিককে বিক্রির চেষ্টা করলেও কাঙ্খিত দাম না পাওয়ায় গরুটি বিক্রি করতে পারেননি এর মালিক। এ বছর ইতিমধ্যে নানান ইউটিউবারদের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন হামিদা। বিভিন্ন চ্যানেলে তার গরুটি বিক্রি হয়ে গেছে জানিয়ে ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে করে বিক্রি করতে পারা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন তিনি।
উদ্যোক্তা হামিদা আক্তার একই এলাকার আব্দুল হামিদের মেয়ে। করটিয়া সা দত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ইতিহাস বিভাগ থেকে অনার্স শেষ করা হামিদা আক্তার। পড়া-লেখা শেষ করে চাকরির পিছনে না ছুটে সফল নারী উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ছোট পরিসরে গরে তোলেন গরুর খামার। পাশাপাশি নিজ বাড়িতেই বাবার মুদি দোকানে সময় দেন তিনি।
হামিদা আক্তার জানান, তার বিশালাকারের গরু মানিকের পছন্দের খাবার কলা, প্রতিদিনের খরচ প্রায় দুই হাজার টাকা। সময়মত সাবান শ্যাম্পু দিয়ে গোসল, খাওয়ানোসহ মাতৃস্নেহ দিয়ে গত ৯ বছর ধরে লালন পালন করছেন মানিককে। এই টাকা যোগান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে উদ্যোক্তা এই নারীকে। ধারণা করা হচ্ছে, এটিই দেশের সব চাইতে বড় গরু। তবে এবার দেশ সেরা গরুটি বিক্রির আশা করছেন হামিদা। এ ব্যাপারে তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করছেন।
আরও পড়ুন: এবার কোরবানির হাট কাঁপাবে বিশাল দেহের রাজা-বাদশা, দাম কত?
স্থানীয়রা জানান, গত দুবছর আগে রতন নামে একটি গরু বিক্রি করলেও মানিকের ওজন বেশি হওয়ায় এবং কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় ষাঁড়টি বিক্রি করতে পারেননি হামিদা। ষাঁড়টি বিক্রি না করতে পেরে তার স্বপ্ন যেনো দুশ্চিন্তায় পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন ষাঁড়টির খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে।
তারা আরও জানান, বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে হামিদার সংসার। দেড় বছর আগে মেয়ের জন্য দুশ্চিন্তা করতে করতে হৃদরোগে মৃত্যুবরণ করেন হামিদার মা। পরিবারে ছেলে না থাকায় নবম শ্রেণি থেকেই সংসারের হাল ধরতে হয় হামিদাকে। পড়ালেখার পাশাপাশি বাড়িতেই করেছেন একটি মুদি দোকান। সেখানে ফ্লেক্সিলোড, বিকাশ ও দর্জির কাজও করেন তিনি। মানিক নামে ষাঁড়টি পালন করতে গিয়ে অবশিষ্ট সম্পদগুলোর সবই বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি। একমাত্র সম্বল বলতে তার এই ষাঁড়টি।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়াকে ৩৭ মণের ‘কালোমানিক’ উপহার দিতে চান কৃষক সোহাগ
হামিদার বাবা হামিদ মিয়া বলেন, ‘তার মেয়ের স্বপ্ন ছিল বড় খামার করার। গত দুই বছর আগে রতনকে বিক্রি করলেও মানিককে বিক্রি করতে পারেননি। ফলে রতনকে বিক্রির টাকাসহ আরও জমিজমা বিক্রি করে মানিকের খাওয়ার যোগান দিতে হয়েছে। এতো বিশাল আকারের গরু সহজেই বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার টাকার খাবার খায় এই ষাঁড়। এ বছরেও গরু বিক্রি নিয়ে যেনো হতাশা কাটছে না হামিদার বাবা ও হামিদার। দেশবাসীর কাছে সহযোগিতা কামনা করছেন তিনি।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শহীদুল আলম বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতা ও পরামর্শে প্রাকৃতিক উপায়ে ষাঁড়টি পালন করা হচ্ছে। ষাঁড়টির ওজন প্রায় দুই হাজার ১০০ কেজি, প্রাকৃতিক উপাদানের মোটাতাজাকরণ ষাঁড়টি তার কাঙ্ক্ষিত দাম পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া নারী উদ্যোক্তার সাফল্য কামনা করেন এই প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।
]]>