ফেব্রুয়ারি থেকে সংস্কার প্রশ্নে দফায় দফায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে আসছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করার কথা বলা হলেও এখনো তা আলোর মুখ দেখেনি। ৭ মাসের দেনদরবারে মৌলিক অনেক ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোকে এক জায়গায় আনতে পারেনি কমিশন। ফলে আরও একদফা বাড়াতে হয় কমিশনের মেয়াদ।
কমিশনের অনেক প্রস্তাবে যেমন বিভিন্ন দল দ্বিমত জানিয়ে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে, তেমনি সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়েও তৈরি হয়েছে বিতর্ক। এখনো আগের অবস্থানেই অনড় দলগুলো। সংবিধান সম্পর্কিত সংস্কারের প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি সংসদের বাইরে যেতে নারাজ বিএনপি। প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেয়ার পক্ষে দলটি। বিপরীতে সাংবিধানিক আদেশে সংস্কার চায় জামায়াতসহ কিছু দল। আর এনসিপির দাবি গণপরিষদের মাধ্যমে নতুন সংবিধান।
পরস্পরবিরোধী অনড় অবস্থান এখন আর কেবল আলোচনার টেবিলেই সীমাবদ্ধ নয়। দাবি আদায়ে চলতি সপ্তাহেই অভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে জামায়াতসহ সমমনা কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দল। নতুন এই মেরুকরণ যে সংকট বাড়াতে পারে, সে শঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না রাজনীতিকরাও।
আরও পড়ুন: তৃতীয় পক্ষের উত্থানের শঙ্কা বিশ্লেষকদের
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ সময় সংবাদকে বলেন,
কোনো অনির্বাচিত ব্যক্তি বা গোষ্ঠি বা দল সংবিধান সংশোধন করতে পেরেছে-- এমন নজির পৃথিবীর ইতিহাসে কোথাও নেই। সুতরাং, সংবিধান সংশোধন করার অধিকার একমাত্র নির্বচিত প্রতিনিধিদের। বিশেষ সাংবিধানিক অর্ডার জারি করে সংবিধান সংশোধন করার চিন্তা করা মোটেও সঠিক হবে না।
হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘নানা ধরনের কথা বলে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হচ্ছে। অভ্যুত্থানের আগে কখনও শুনিনি যে তারা সেই ধরনের সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে চায়। শান্ত একটা পরিবেশে যখন আমরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যেতে চাই, জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে চাই, তখনই এ নির্বাচনকে বিলম্বিত অথবা বিলুপ্ত করার জন্য কতগুলো দল এসব কথা বলছে।’
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন,
দেশের মানুষ সংস্কার চায়; সংস্কারের ভিত্তিতেই নির্বাচন চায়। আর সংস্কারের ভিত্তিতে নির্বাচন করতে হলে আইনি ভিত্তি দিতে হবে। আমরা প্রথমে বলছি, সাংবিধানিক অর্ডারটা আসুক। তারপর সময় থাকলে গণভোট নেয়া হোক।
আরও পড়ুন: জটিল হচ্ছে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, শঙ্কায় বিশ্লেষকরা
জামায়াতের এ নেতা বলেন, ‘দেশ ঝুঁকিতে পড়ুক, সেটা চাই না। আবার আগের স্ট্রাকচারে সামনে আগাক, সেটাও চাই না। আমরা চাই, রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনার ভিত্তিতে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘সংবিধানের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলো সংশোধনী দিয়ে নিয়ে আসা হলে আগে যেমন অনেকগুলো সংশোধনীকে হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করে বাতিল করা হয়েছে, সেরকম পরিস্থিতি ভবিষ্যতেও তৈরি হতে পারে। সেক্ষেত্রে গণপরিষদই সবচেয়ে ভালো উপায়।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, মতবিরোধ টেবিল থেকে যেভাবে রাজপথে গড়াচ্ছে, তাতে নির্বাচন হয়ে যাচ্ছে শর্তযুক্ত আর রাজনীতি যাচ্ছে অনিশ্চিত গন্তব্যে।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন নিয়ে কী বলছেন বিশ্লেষকরা?
এ বিষয়ে দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন,
সমঝোতা না হলে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে কিনা, সেটা অনিশ্চিত। জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলো রাজপথে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এ অবস্থায় তো শুধু ভিন্নমত স্পষ্ট না, আলাদা মেরুতে অবস্থান করছে। এ পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের গত কয়েক মাসের প্রয়াস ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে হয়।
সংস্কার বাস্তবায়ন ইস্যুতে দলগুলোর সঙ্গে বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) আবারও বসতে পারে ঐকমত্য কমিশন।
]]>