২০২০ সালে করোনাকালে টিকার সংকট দেখা দিলে গোপালগঞ্জে ‘এসেনসিয়াল বায়োটেক অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার’ নামে একটি ভ্যাকসিন প্লান্ট স্থাপনের পরিকল্পনা করে তৎকালীন সরকার। ২০২৪ সালে গোপালগঞ্জে এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) তৃতীয় কারখানার পাশে প্রায় ৭ একর জমিও অধিগ্রহণ করা হয়। তবে সরকার পরিবর্তনের পর এই সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়।
সূত্র জানায়, অত্যাবশ্যক ও জীবন রক্ষাকারী ওষুধ উৎপাদন বাড়াতে ইডিসিএলের তেজগাঁওয়ের পুরানো কারখানাটি সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের উদ্যোগে তার নিজ এলাকা মানিকগঞ্জে স্থানান্তরের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু জমি অধিগ্রহণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে সেই পরিকল্পনাও বাতিল করে বর্তমান সরকার। ফলে দুটি কারখানাই মুন্সীগঞ্জে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে, যা প্রায় ৪০ একর জমিতে নির্মিত হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ভ্যাকসিন কারখানায় বিদেশি বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদরা প্রশিক্ষণ দিতে নিয়মিত বাংলাদেশে আসবেন এবং ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত অবস্থান করবেন। তাদের জন্য পাঁচতারকা মানের আবাসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজন হবে। গোপালগঞ্জে এ ধরনের সুযোগ-সুবিধা না থাকায় ঢাকা সংলগ্ন মুন্সীগঞ্জে কারখানা স্থাপনকে উপযুক্ত মনে করছে সরকার।
আরও পড়ুন: করোনার ভ্যাকসিন আমদানি, ২২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বেক্সিমকোর বিরুদ্ধে তদন্তে দুদক
বিসিক চেয়ারম্যান সঞ্জয় কুমার ভৌমিক জানিয়েছেন, কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ৩১০ একর জমির মধ্যে ৪০ একর জমি ইডিসিএলকে বরাদ্দ দেয়া হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল কারখানা স্থাপনযোগ্যতা যাচাই করে ইতিমধ্যেই গ্রিন সিগনাল দিয়েছেন। চলতি বছরের মধ্যেই অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হবে এবং ২০২৭ সালের মধ্যে টিকা উৎপাদন শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে।
দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ৩ হাজার ১২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এই ভ্যাকসিন প্লান্ট নির্মিত হবে। এখানে ১৫ ধরনের টিকা উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করা সম্ভব হবে। ২০২৮ সালের মধ্যে ৬ ধরনের এবং ২০২৯ সালে আরও ৯ ধরনের টিকা উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০৩০ সালে।
এদিকে জানা গেছে, ২০২২ সালে তেজগাঁওয়ের ইডিসিএলের ৬০ বছরের পুরানো কারখানা মানিকগঞ্জে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু মেঘশিমুল মৌজায় জমি কিনে কৃত্রিমভাবে দাম বাড়িয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা করেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও তার পরিবারের সদস্যরা। এ বিষয়ে তৎকালীন জেলা প্রশাসক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, ভূমি অধিগ্রহণে সরকারের প্রায় ১০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হতো। এই কারণে সরকার মানিকগঞ্জ থেকে পরিকল্পনা প্রত্যাহার করে নেয়।
]]>