দেশে বড় ভূমিকম্পের শঙ্কা, নিতে হবে যেসব পদক্ষেপ

২ দিন আগে
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মধ্যম মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় আতঙ্কে সবাই। উৎপত্তিস্থল দেশেই হওয়ায় এতে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন ভূমি বিশেষজ্ঞসহ আবহাওয়া অধিদফতর। তারা বলছেন, আজকের ভূমিকম্পটি হতে পারে বড় কোনো ভূমিকম্প ঘটার আগাম সতর্কবার্তা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমিকম্প সাধারণত তিন ধাপে ঘটে: Foreshock, Mainshock ও Aftershock। শক্তিশালী ভূমিকম্প ঘটার আগে আজকের কম্পনটিকে Foreshock বলে মেনে করছেন তারা।

 

আগামী কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিনের মধ্যেই বড় ধরনের কম্পনের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। তাই সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন ভূতত্ত্ববিদরা।

 

গবেষকরা বলছেন, কোনো স্থান বা দেশে দীর্ঘসময় ধরে ভূমিকম্প হয়ে না থাকলে সেখানে শক্তি জমা হতে শুরু হয়। যে কারণে শত বছরের ব্যবধানে ঘটে শক্তিশালী ভূমিকম্পের অঘটন। বাংলাদেশ প্লেট অঞ্চলে গত ১০০ বছরে কোনো বড় ম্যাগনিচিউড রিলিজ হয়নি। তাই দেশ রয়েছে বড় ভূমিকম্পের শঙ্কা।

 

এদিকে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক তথ্য বলছে, দেশে ৭ থেকে ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পন হওয়ার রেকর্ড রয়েছে। ১৮৬৯ সালে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয় যা কাছাড় ভূমিকম্প নামে পরিচিত।

 

এরপর ১৮৮৫ সালে ৭.১ মাত্রার বেঙ্গল ভূমিকম্প হয়। শতবর্ষ পেরিয়ে ১৮৯৭ সালে ৮.১ মাত্রার 'গ্রেট ইন্ডিয়ান' ভূমিকম্প এবং ১৯১৮ সালে ৭.৬ মাত্রার শ্রীমঙ্গল ভূমিকম্প হয় যা ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। এ হিসেবে ১৯৩০ সালের পর দেশে বড় ভূমিকম্প না হওয়ায় ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

 

বড় ভূমিকম্পের আগাম বার্তা দিয়ে আবহাওয়া অধিদফতরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুবাইয়াত কবির বলেন,

ঢাকা এবং এর আশপাশে বিগত কয়েক দশকে সংঘটিত হওয়া ভূমিকম্পের মধ্যে এটাই সবচেয়ে শক্তিশালী এবং সর্বোচ্চ মাত্রার ভূমিকম্প। ঐতিহাসিকভাবে এ অঞ্চলে একাধিক বড় ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে। যা প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশ ভূমিকম্প ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। যেকোনো সময় বাংলাদেশে আরও বড় ভূমিকম্প হতে পারে। ঠিক কবে হবে সেটা আমরা বলতে পারছি না।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৭ মাত্রার ভূমিকম্প ১০০ থেকে ১২৫ বছর পরপর এবং ৮ মাত্রার ভূমিকম্প ২৫০ থেকে ৩০০ বছর পরপর হওয়ার শঙ্কা থাকে। তাই শক্তিশালী ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে এখনই বাংলাদেশকে উদ্যোগ নিতে হবে।

 

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন,

দেশে ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে এক থেকে তিন লাখ মানুষ হতাহত এবং শহরের প্রায় ৩৫ শতাংশ ভবন ধসে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সরকারের উদ্যোগ নেয়া জরুরী।

 

তার পরামর্শ অনুযায়ী, শুক্তিশালী ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো হলো-

 

১। ভবনগুলোকে সবুজ, হলুদ ও লাল—এই তিন শ্রেণিতে চিহ্নিত করতে হবে। এখানে সবুজ মানে ঝুঁকিমুক্ত, হলুদ মানে সংস্কার প্রয়োজন এবং লাল ভবন মানে অবিলম্বে খালি করে মজবুত করা জরুরি।

 

২। হলুদ ও লাল রংয়ের ভবনগুলোকে শক্তিশালী করার জন্য বিল্ডিং রেট্রোফিটিং করা। আমেরিকা, জাপান, ভারত, তুরস্ক, চিলিতে মানুষের জীবন বাঁচাতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

 

আরও পড়ুন: আজকের ভূমিকম্প বড় বিপদের ইঙ্গিত

 

৩। ঢাকায় জরুরি ভিত্তিতে ভবনের কাঠামোগত স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা। ঝুঁকিযুক্ত এরিয়ার মানচিত্র তৈরি সমাধানের উপায় বের করা।

 

৪। জরুরি পরিস্থিতিতে রেসকিউ রুট নিশ্চিত করা। এরজন্য নির্দিষ্ট রাস্তাগুলো চিহ্নিত করে তা সবসময় খোলা রাখা যাতে অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস ঢুকতে পারে।

 

আরও পড়ুন: ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল দেশ: বড় বিপদের আগাম সতর্কবার্তা?

 

৫। নতুন ভবন তৈরির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নীতিমালা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন।

 

৬। স্কুল, অফিস, বাসা-বাড়ি সব জায়গায় বছরে অন্তত ২ বার ভূমিকম্প মহড়া করা ও সবার মধ্যে জনসচেতনতা তৈরি করা। 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন