দেশে বছরে উৎপাদিত খাদ্যের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি অপচয় হচ্ছে

৩ সপ্তাহ আগে
দেশে বছরে প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ টন খাবার অপচয় হচ্ছে, যা মোট উৎপাদিত খাদ্যের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি। অথচ একই সময়ে দেড় কোটির বেশি মানুষ ভুগছে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায়। বাজার, রেস্টুরেন্ট ও বাসাবাড়ি মিলিয়ে তৈরি হচ্ছে বিপুল খাদ্য বর্জ্য, যার বড় অংশই খাবারযোগ্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সচেতনতা বাড়ানো ও কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন ছাড়া খাদ্য অপচয় রোধ সম্ভব নয়।

একদিকে নষ্ট হচ্ছে খাবার, অন্যদিকে অনাহারে দিন কাটছে বহু মানুষের। বছরে দেশে অপচয় হচ্ছে প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ টন খাবার, যেখানে কিনা খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ। বাজার, ময়লার ডাম্পিং স্টেশন, রেস্টুরেন্ট, বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে গত ১০ মাসে শুধু শহর এলাকায় তৈরি হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৪১ লাখ টন বর্জ্য। যার ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশের উৎসই খাবার।

 

সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা জানান, প্রচুর ভাত, ফলমূলসহ অন্যান্য খাবার ফেলে দিচ্ছেন মানুষ। অন্যদিকে গরীব মানুষ খেতে পারছে না। তবে এসব খাবার না ফেলে গরীব মানুষকে দিলে তারা খেয়ে বাঁচতে পারত।  

 

আরও পড়ুন: বিএফএসএর সতর্কবার্তা / মুগ ডালে অননুমোদিত রঙ ব্যবহার, গ্রহণে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

 

দেশে মোট উৎপাদনের ৩৪ শতাংশ খাবার নষ্ট হওয়া শুধু অদূরদর্শিতা নয়, মানবিক সংকটও বটে। যা প্রভাব ফেলছে সুস্থ অর্থনীতিতেও। ইউএনইপির তথ্যমতে, ২০২৪ সালেই একজন বাংলাদেশি শুধু বাসাবাড়িতেই বছরে গড়ে ৮২ কেজি খাবার অপচয় করেছেন। সেখানে বর্তমানে তা আরও বেড়েছে।

 

ফুড ওয়েস্ট ইনডেক্সের চলতি বছরের রিপোর্টই বলছে, বছরে মোট খাদ্য উৎপাদনের ৩৪ শতাংশই নষ্ট হয়। যা কিনা খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় থাকা কোটি মানুষের দেশে এক বিরাট সংকট।

 

সরজমিনে ঢাকা উত্তর সিটির আমিনবাজার ল্যান্ডফিল্ড ঘুরে দেখা যায়, পাহাড়সম বর্জ্যের স্তূপ। এখানে প্রতিদিন গড়ে ৪ হাজার টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়। যার ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশই খাদ্য বর্জ্য।

 

অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৩ হাজার টন বর্জ্য তৈরি হয়। যার মধ্যে ৭৫ শতাংশই খাবারের বর্জ্য। গত ১০ বছরে শহর এলাকায় দৈনিক তৈরি হওয়া বর্জ্য বেড়েছে ৩ গুণ। যা ২০২৪ সালে গিয়ে বাড়বে আরও ৩ গুণ।

 

উৎপাদন থেকে পরিবহন পর্যায়ের প্যাকেজিং ঠিক করা গেলেই অনেকাংশে কমে আসবে খাদ্য অপচয়। পাশাপাশি খাদ্যকে নষ্ট না করে পুনঃব্যবহার করেও তা কমানো সম্ভব বলে মত বিশেষজ্ঞদের। ওয়েস্ট কনসার্নের পরিচালক ইফতেখার এনায়েতউল্লাহ বলেন, খাবারগুলো নষ্ট বা নরম হওয়ার আগে বিতরণ করা হলে অপচয় কমবে। গরীব মানুষকে দিলে তারা খেতে পারবে। খাবারগুলো পশুপাখিকেও দেয়া যেতে পারে। খাবারের অপচয় কমাতে গেলে উৎপাদন থেকে বিপণন ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে হবে।

 

খাদ্য অপচয় রোধে সরকারের শাস্তির বিধিমালা প্রণয়ন করা উচিত বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরি। তিনি বলেন, মানুষকে অপচয় রোধে সচেতন করতে প্রচার অভিযানের পাশাপাশি আনতে হবে আইনি বাধ্যবাধকতার মধ্যেও। কেউ হোটেলে, বিয়েবাড়ি বা অন্যান্য জায়গায় গিয়ে খাবার নষ্ট করলে আইনের আওতায় আনতে হবে।

 

আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তনের ছোবলে উপকূল, স্বাস্থ্যঝুঁকি ও জীবিকার সংকটে বাসিন্দারা

 

খাদ্য অপচয়ের প্রবণতা রোধে সচেতনতা বৃদ্ধির তাগিদ ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনের। আর দক্ষিণ সিটি বলছে, সরকার নীতিমালা করলে ব্যবস্থা নেয়ার কথা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক এ বি এম সামসুল আলম বলেন, সচেতনতা নিশ্চিত করানোর জন্য যখন একজন মানুষকে শাস্তির আওতায় আনা হবে, তখন নিবিড় মনিটরিংয়ের মাধ্যমে শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ঠিক করা সম্ভব হবে।

 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক মো. মাহাবুবুর রহমান তালুকদার বলেন, খাবার অপচয়ের জন্য দেশে শাস্তির নীতিমালা নেই। তবে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। এতে ওয়ার্ডগুলোর নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ওয়ার্ডভিত্তিক জনসচেতনতা বাড়াতে পার।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু রাজধানীতেই প্রতিদিন যে পরিমাণ খাবার অপচয় হয়, তা দিয়ে কয়েকটি পরিবারের একদিনের খাবার হওয়া সম্ভব। শুধু খাবার টেবিলেই নয়, উৎপাদন, পরিবহন, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করার ক্ষেত্রেও বিপুল পরিমাণ খাবার অপচয় হয়। যা সমন্বয়ের মাধ্যমে রোধ করা সম্ভব। এজন্য দরকার সচেতনতা বাড়ানো।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন