ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠানটি ভাইরাল ভিডিও পোস্টটিকে মিথ্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যা ভারতীয় গণমাধ্যম RT India-এর এক্স হ্যান্ডেল থেকে শেয়ার করা হয়েছিল। পোস্টে দাবি করা হয় এটি বাংলাদেশের একটি কালী মন্দিরে হামলার ঘটনা।
ফ্যাক্ট ওয়াচ নিশ্চিত করেছে যে এটি প্রকৃতপক্ষে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একটি কালী বিসর্জনের ভিডিও।
ভাইরাল ভিডিওটির প্রকৃত ঘটনা শনাক্ত করতে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের অধীনস্থ এবং সেন্টার ফর ক্রিটিক্যাল অ্যান্ড কোয়ালিটেটিভ স্টাডিজ (সিকিউএস) পরিচালিত স্বাধীন ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা ফ্যাক্ট ওয়াচ ভিডিওটির বিভিন্ন কী-ফ্রেম ব্যবহার করে একটি অনুসন্ধান চালায়।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে ফতোয়া জারির গুজব নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে নিউজ
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভিডিওটি ২০২৪ সালের ৩ ডিসেম্বর বিনোদ ঘোষ নামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে আপলোড করা হয়েছিল, যা ফ্যাক্ট ওয়াচ তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত রিপোর্টে জানিয়েছে।
ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা ছিল, ‘পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার সুলতানপুর গ্রামে শতাব্দী প্রাচীন কালী পুজাতে প্রাচীন রীতি অনুযায়ী, প্রতি ১২ বছরে গ্রামের পুরোহিতরা প্রথমে ১৩ ফুট লম্বা কালী মূর্তির ছোট ছোট আঙুল ভাঙেন, তারপর গ্রামের সাধারণ মানুষেরা মূর্তির বাকি অংশ ভেঙে একে একে বিসর্জন দেন।’
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ‘বিসর্জনের পর একটি নতুন মূর্তি তৈরি করা হয় এবং তা পরবর্তী ১১ বছর ধরে পূজা করা হয়।’
এই উৎস থেকে ফ্যাক্ট ওয়াচ দল আরও কিছু চিত্র এবং ভিডিও খুঁজে পায়, যা এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সাথে সম্পর্কিত। সেখানে দেখা যায় যে বিপুলসংখ্যক মানুষ এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ও উদ্যাপন করছেন।
পরে, দ্য ডেইলি স্টেটসম্যান পত্রিকায় প্রকাশিত একটি রিপোর্টেও একই রকম তথ্য পাওয়া যায়। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় যে এই প্রথাটি ৬০০ বছরের পুরানো। প্রথমদিকে গ্রামের কামার সম্প্রদায় (বঙ্গের কর্মকার জাতির সমতুল্য) এই পুজো পালন করত, পরবর্তীতে তারা দায়িত্বটি মণ্ডল পরিবারকে হস্তান্তর করে।
অন্যদিকে, গুগল স্ট্রিট ভিউতে কালী মন্দিরের দৃশ্য এবং ফেসবুক ভিডিওর সাথে তুলনা করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে মন্দিরটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সুলতানপুর গ্রামে অবস্থিত, বাংলাদেশে নয়। এছাড়াও, সেখানে কোনও হিন্দু ভক্ত নিহত হওয়ার মতো কোনও নির্ভরযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: ভারতের ৪৯ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপপ্রচার, কী পরামর্শ বিশ্লেষকদের
কিন্তু ভাইরাল ভিডিওটি বাংলাদেশে ঘটনা বলে মিথ্যা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে শেয়ার করা হচ্ছে বলে ফ্যাক্ট চেক প্রতিষ্ঠানটি জানায়।
প্রতিবেদনটি শেষ করে বলা হয়েছে, ‘সুতরাং, সব দিক বিবেচনা করে ফ্যাক্ট ওয়াচ ভাইরাল পোস্টটিকে মিথ্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।’
]]>