এ ব্যবস্থা আত্মস্থ করে এমন একদল মানুষ তৈরি হয়েছিলেন, যারা অপরাধের পর বিবেকের কষাঘাতে টিকতে না পেরে নিজেদের অপরাধের বিচার প্রার্থনার জন্য নবীজির বিচারালয়ে হাজির হতেন। নিজে ক্ষুধার্ত থেকে অভুক্তকে নিজের খাদ্য বিলিয়ে দেওয়ার মানসিকতা গড়ে উঠেছিল তাদের মধ্যে।
আরও পড়ুন: সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাওয়া কি কিয়ামতের আলামত
তাদের পরিচালিত রাষ্ট্রে একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে রাতে-দিনে সুন্দরী-রূপবতী নারীরা মূল্যবান সব অলংকার পরে একাকী পথ চলেছে, কিন্তু কেউ তাকে জিজ্ঞেসও করেনি। কেউ তার দিকে চোখ তুলে তাকায়নি। প্রত্যেকটি মানুষ পরস্পরের জানমাল, ইজ্জত-আব্রুর বিশ্বস্ত আমানতদার বনে গিয়েছিল।
এ ধরনের তাকওয়াভিত্তিক রাষ্ট্রের উন্নয়নকল্পে আল্লাহ আসমান ও জমিনের দুয়ারগুলো খুলে দেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَ لَوۡ اَنَّ اَهۡلَ الۡقُرٰۤی اٰمَنُوۡا وَ اتَّقَوۡا لَفَتَحۡنَا عَلَیۡهِمۡ بَرَكٰتٍ مِّنَ السَّمَآءِ وَ الۡاَرۡضِ وَ لٰكِنۡ كَذَّبُوۡا فَاَخَذۡنٰهُمۡ بِمَا كَانُوۡا یَكۡسِبُوۡنَ
অর্থ: যদি সে সময় জনপদের মানুষগুলো ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত, তাহলে আমি তাদের ওপর আসমান ও জমিনের যাবতীয় বরকতের দুয়ার খুলে দিতাম, কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছে, অতঃপর তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য আমি তাদের পাকড়াও করেছি। (সুরা আরাফ, আয়াত : ৯৬)
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, মাখজুম গোত্রের এক নারীর চুরির ঘটনা কুরাইশের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অত্যন্ত উদ্বিগ্ন করে তুলল। এ অবস্থায় তারা বলাবলি করতে লাগল এ ব্যাপারে আল্লাহর রাসুলের সঙ্গে কে আলাপ করতে পারে? তারা বলল, একমাত্র রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ উসামা বিন জায়েদ (রা.) এ ব্যাপারে আলোচনা করার সাহস করতে পারেন। উসামা (রা.) নবীজির সঙ্গে কথা বলেন।
নবীজি বললেন, তুমি কি আল্লাহর নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘনকারিণীর সাজা মওকুফের সুপারিশ করছ? অতঃপর নবীজি দাঁড়িয়ে খুতবায় বললেন,
তোমাদের আগের জাতিগুলোকে এ কাজই ধ্বংস করেছে যে, যখন তাদের মধ্যে কোনো বিশিষ্ট লোক চুরি করত, তখন তারা বিনা সাজায় তাকে ছেড়ে দিত। অন্যদিকে কোনো অসহায় গরিব সাধারণ লোক যদি চুরি করত, তখন তার ওপর হদ জারি করত। আল্লাহর কসম, যদি মুহাম্মাদ-এর কন্যা ফাতেমা চুরি করত, তাহলে আমি অবশ্যই তার হাত কেটে দিতাম। (বুখারি: ৩৪৭৫)
এ হাদিস থেকে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় জাতি, গোত্র, বর্ণ নির্বিশেষে সর্বকালে সব সমাজে ইসলামি আইন সমতার বিধান করে। এখানে জাতি, গোত্র, আর বর্ণের কোনো বিভেদ থাকে না। দুর্নীতি রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ইসলাম দুর্নীতিকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে এবং এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছে।
আরও পড়ুন: কাজা নামাজ জামাতে আদায় করা যাবে?
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
দুর্নীতিবাজ শাসক কিয়ামতের দিনে আল্লাহর সামনে বড় শাস্তি পাবে। (ইবনে মাজাহ: ৪০১৯)
]]>