দুনিয়াবি কাজ থেকে নেক আমল অর্জনের রহস্য

৪ সপ্তাহ আগে
মানবজীবন দুনিয়ার ভেতরেই গড়ে ওঠে। এখানে মানুষকে নানাবিধ কাজ করতে হয়, খাওয়া-দাওয়া, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি, শিক্ষা, পরিবার চালানো ইত্যাদি। এই সবকিছুই মূলত দুনিয়াবি প্রয়োজন মেটানোর জন্য। কিন্তু ইসলামের সৌন্দর্য হলো, যদি নিয়ত (ইচ্ছা) ঠিক থাকে, তবে এই সাধারণ দুনিয়াবি কাজও পরিণত হয় নেক আমলে।

আর নিয়ত যদি বিকৃত হয়, তবে সবচেয়ে ভালো কাজও আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। 

 

রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَىকাজসমূহ নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেক মানুষ তাই পাবে যা সে নিয়ত করেছে। (সহিহ বুখারি:১;সহিহ মুসলিম:১৯০৭) এ হাদিস প্রমাণ করে যে, নিয়তের কারণে দুনিয়ার সাধারণ কাজও নেক আমলে রূপ নেয়।

 

নিয়তের কল্যাণে দুনিয়াবি কাজ নেক আমল হয়

 

উদর পূর্ণ করার জন্য খাওয়া এক ধরণের দুনিয়াবি কাজ। কিন্তু কেউ যদি খাওয়ার সময় নিয়ত করে আল্লাহর দেওয়া শক্তি নিয়ে ইবাদত করব, হারাম থেকে বাঁচব, তাহলে এই খাওয়াও নেক আমল হয়ে যায়।

 

সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

 

إِنَّكَ لَنْ تُنْفِقَ نَفَقَةً تَبْتَغِي بِهَا وَجْهَ اللَّهِ إِلَّا أُجِرْتَ عَلَيْهَا، حَتَّى مَا تَجْعَلُ فِي فِي امْرَأَتِكَ তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যা খরচ করবে, তার প্রতিদান পাবে,এমনকি তোমার স্ত্রীর মুখে যে লোকমা রাখবে তাও (সহিহ বুখারি:৫৬; সহিহ মুসলিম:১৬২৮)

 

পরিবারকে খাওয়ানো ও দায়িত্ব পালন

 

রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

 

إِذَا أَنْفَقَ الْمُسْلِمُ نَفَقَةً عَلَى أَهْلِهِ، وَهُوَ يَحْتَسِبُهَا، كَانَتْ لَهُ صَدَقَةً যে ব্যক্তি তার পরিবারের ওপর খরচ করে এবং এর দ্বারা আল্লাহর সওয়াব কামনা করে, তা তার জন্য সদকা হয়ে যায়। (সহিহ বুখারি:৫৩; সহিহ মুসলিম:১০০২)

 

 

আরও পড়ুন: তওবা যেভাবে করা যায়

 

 

সামাজিক দায়িত্ব পালন

 

রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

 

أَحَبُّ النَّاسِ إِلَى اللَّهِ أَنْفَعُهُمْ لِلنَّاسِ আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় মানুষ হলো সে ব্যক্তি, যে মানুষের জন্য সবচেয়ে উপকারী। (ইবনু আবিদ দুনয়া:৩৬) অতএব, সমাজসেবা, চিকিৎসা করা, মানুষকে সহায়তা করা সবকিছুই যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয়, তবে নেক আমল।

 

বৈবাহিক সম্পর্ক ও পারিবারিক শান্তি

 

রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

 

وَفِي بُضْعِ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ সাহাবাকেরাম অবাক হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রসুল! স্ত্রী-সঙ্গমেও কি সওয়াব আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, যদি হারাম পথে তা করতে তবে কি গুনাহ হতো না? ঠিক তেমনি হালাল পথে করলে সওয়াব পাওয়া যাবে। (সহিহ মুসলিম: ১০০৬)


 

চাকরি বা পড়াশোনা

 

শুধু দুনিয়ার চাকরি বা ডিগ্রি অর্জনের নিয়ত করলে তা সাধারণ কাজ। কিন্তু নিয়ত যদি হয়,হালাল উপার্জন করব, মানুষের উপকার করব, জ্ঞান দ্বারা ইসলাম প্রচার করব, তাহলে এই পড়াশোনা বা চাকরিও নেক আমল হয়ে যায়।

 

বিনোদন ও বিশ্রাম


শুধু আনন্দের জন্য ঘুরতে যাওয়া সাধারণ কাজ। কিন্তু কেউ যদি নিয়ত করে,আমি বিশ্রাম নেব যেন পুনরায় ইবাদত ও কাজে শক্তি পাই,তাহলে বিশ্রামও ইবাদত।


নিয়ত বিহীন ভালো কাজও নেকি নয়

 

কোনো কাজ যত ভালোই মনে হোক না কেন, যদি নিয়ত আল্লাহর জন্য না হয় তবে তা মূল্যহীন। আল্লাহ তাআলা বলেন,

 

وَقَدِمْنَا إِلَى مَا عَمِلُوا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاءً مَنْثُورًا তাদের করা সব কাজের দিকে আমরা মনোযোগ দেব, অতঃপর তা উড়িয়ে দেয়া ধূলিকণার মতো করে দেব। (সুরা ফুরকান: ২৩) অর্থাৎ নিয়ত ছাড়া দুনিয়াবি ভালো কাজও আখিরাতে কোনো মূল্য পাবে না।


 

১. নিয়ত হলো আমলের প্রাণ। ২. দুনিয়াবি কাজও নিয়ত ঠিক থাকলে নেক আমল হয়। ৩. পরিবার, সমাজ ও দুনিয়াবি দায়িত্ব পালনও ইবাদতে রূপ নেয় নিয়তের মাধ্যমে। ৪. নিয়ত ছাড়া কাজ যত বড়ই হোক—আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।


ইসলাম এমন একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যেখানে প্রতিটি কাজের ভেতরে ইবাদতের সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে। একজন মুমিনের উচিত,প্রতিটি কাজে নিয়ত ঠিক রাখা, আল্লাহর সন্তুষ্টিকে লক্ষ্য করা। তাহলেই দুনিয়া হবে ইবাদতের ক্ষেত্র, আর আখিরাত হবে নেক আমলের ভাণ্ডার।দুনিয়াবি কাজ থেকে নেক আমল অর্জনের রহস্য আসলে নিয়তের ভেতরেই নিহিত। নিয়ত ঠিক থাকলেই দুনিয়ার প্রতিটি কাজ ইবাদতে রূপ নেয়।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন