দুজনের সঙ্গে পরকীয়া জেনে যাওয়ায় স্বামীকে হত্যা, প্রেমিকাদের সহায়তায় লাশ গুম

৪ সপ্তাহ আগে
চার মাস পর কৃষক দিদার আলম হত্যা ও নিখোঁজের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। একসঙ্গে দুজনের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কের কারণে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে স্বামীকে খাওয়ান স্ত্রী কোহিনূর। এরপর বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন স্বামীকে। পরে প্রেমিকাদের সহযোগিতায় মরদেহটি খালে ফেলে গুম করেন তিনি।

শনিবার (১৮ অক্টোবর) নিহত দিদার আলমের স্ত্রী কোহিনূর রাঙ্গামাটি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ তথ্য জানান।


রোববার (১৯ অক্টোবর) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পিবিআই চট্টগ্রামের জেলা পরিদর্শক রুহুল আমিন সময় সংবাদকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।


এর আগে গত ৪ অক্টোবর গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে নিখোঁজের স্ত্রী কোহিনূর আক্তার ও আবদুল খালেক, হামজা ও সেলিমকে গ্রেফতার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই)। 


নিহত দিদার আলম (২৮) কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী চন্দ্রঘোনা থানার পশ্চিম কোদালা ষাটতলী গ্রামের বাসিন্দা। তাকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করা হলেও এখন পর্যন্ত তার মরদেহের সন্ধান মেলেনি।


আরও পড়ুন: স্বামীকে হত্যার পর গোপনে দাফন, পরকীয়া প্রেমিকসহ স্ত্রী-সন্তানের বিরুদ্ধে মামলা


জানা যায়, গত ৩০ মে দিদার নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় দিদারের বাবা জামির হোসেন চন্দ্রঘোনা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপরও দিদারের সন্ধান না মেলায় গত জুলাই মাসে তার স্ত্রী কোহিনূর আক্তার ও আবদুল খালেক নামে ওই ব্যক্তিকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন নিখোঁজের বাবা জামির হোসেন। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য ২৭ জুলাই পিবিআইকে নির্দেশ দেন।


পিবিআই চট্টগ্রামের জেলা পরিদর্শক রুহুল আমিন সময় সংবাদকে বলেন, ‘তদন্তের একপর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ঢাকার গাজীপুরের জয়দেবপুর এলাকা থেকে কোহিনূর ও খালেককে ৪ অক্টোবর গ্রেফতার করা হয়। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ১০ অক্টোবর কোহিনূর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এ সময় তিনি স্বামীকে হত্যার বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরেন।’


তদন্ত কর্মকর্তা রুহুল আমিন জানান, চার সন্তানের জননী স্ত্রী কোহিনূর আদালতকে জানিয়েছেন, তার সঙ্গে মো. হামজা ও খালেকের পরকীয়া ছিল। হামজার সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি কৃষক দিদার জানতেন না, তবে খালেকের বিষয়টি জানতেন। এ কারণে কোহিনূরের সঙ্গে দিদারের প্রায়ই ঝগড়া হতো, কোহিনূরকে মারধরও করতেন দিদার। মারধরের বিষয়টি কোহিনূর হামজাকে জানালে তিনি দিদারকে হত্যার পরামর্শ দেন। হামজা দিদারকে হত্যার উদ্দেশ্যে চারটি ঘুমের ওষুধ কোহিনূরকে এনে দিয়েছিলেন। ঘটনার রাতে ওষুধগুলো খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে স্বামী দিদারকে খাওয়ান স্ত্রী কোহিনূর। পরে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন দিদারকে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় বলে স্বীকারোক্তিতে জানান।


আরও পড়ুন: ধর্ষণের পর পরকীয়ার অভিযোগ তুলে গৃহবধূকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন


কোহিনূর জবানবন্দিতে বলেছেন, খুনের সময় হামজা, সেলিমসহ অন্যান্য সহযোগীরা পার্শ্ববর্তী পশ্চিম কোদালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছনে বসে লুডু খেলছিলেন। কোহিনূর স্বামীকে হত্যার বিষয়টি সেখানে গিয়ে তাদের জানান। এরপর ধান শুকানোর প্লাস্টিকের চাটাই দিয়ে দিদারের মরদেহ মুড়িয়ে হামজা ও সেলিমসহ অন্যদের সহযোগিতায় পাশের খালে ফেলে দেয়া হয়। সেদিন অঝোরে বৃষ্টি হওয়ায় মরদেহটি পানির স্রোতে ভেসে যায়।


পিবিআই জানায়, কোহিনূরের জবানবন্দির পর ধারাবাহিকভাবে খালেক,  হামজা ও সেলিমকে গ্রেফতার করা হয়। তারাও ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে গত শনিবার আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।


পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবু জাফর মো. ওমর ফারুক সময় সংবাদকে বলেন, ‘কৃষক দিদারের মরদেহটি এখনো পাওয়া যায়নি। উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।’


আরও পড়ুন: ড্রামে পাওয়া মরদেহের পরিচয় মিলেছে, স্ত্রীর পরকীয়ায় খুন


তিনি আরও বলেন, ‘একসঙ্গে দুজনের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়ান কৃষক দিদারের স্ত্রী কোহিনূর। খুনের ঘটনার কয়েক মাস আগে গোপনে স্বামীকে তালাকের জন্য আবেদনও করেন তিনি। প্রেমিক হামজার পরিকল্পনায় স্বামীকে খুন করে মরদেহ ভাসিয়ে দেয়ার পর আরেক প্রেমিক খালেককে বিয়ে করে ঢাকার গাজীপুরে চলে যান কোহিনূর।


জানতে চাইলে নিহত কৃষকের বাবা জামির হোসেন বলেন, ‘গত ৩০ মে আমার ছেলে দিদার নিখোঁজ হয়। এ ঘটনায় আমি জামির হোসেন চন্দ্রঘোনা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি। এরপরও দিদারের সন্ধান না মেলায় গত জুলাই মাসে দিদারের স্ত্রী কোহিনূর আক্তার ও আবদুল খালেক নামে ওই ব্যক্তিকে আসামি করে রাঙ্গামাটি আদালতে মামলা দায়ের করি।  আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য গত ২৭ জুলাই পিবিআইকে নির্দেশ দেন। পিবিআই অভিযুক্তদের আটক করতে সক্ষম হলেও দীর্ঘ চার মাস অতিবাহিত হলেও ছেলের সন্ধানটি এখনো পাইনি। গুম হত্যার বিষয়ে আমি আরও জোরালো তদন্তের দাবি জানাই এবং এ ঘটনায় জড়িত সবার ফাঁসি চাই।’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন