দুই বছরেও চালু হয়নি আইসিইউ, সেবাবঞ্চিত মুমূর্ষু রোগীরা

৩ সপ্তাহ আগে
দুই বছর আগে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হলেও এখনও চালু হয়নি যশোর জেনারেল হাসপাতালের সরকারি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ)। ফলে মুমূর্ষু রোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন বিশেষায়িত এই সেবা থেকে। সংশ্লিষ্টদের দাবি, জনবল ও রোগী উঠানামার জন্য লিফট সুবিধা না থাকায় আইসিইউ ইউনিটটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।

যশোর জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, করোনা পরিস্থিতির কারণে যশোরের বিশিষ্ট নাগরিকদের অর্থায়নে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে হাসপাতালের পুরাতন মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে ১০ শয্যার একটি আইসিইউ ইউনিট চালু করা হয়। পরবর্তীতে রোগীর চাপের কারণে ২০২৩ সালে সরকারি অর্থায়নে হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটের ৪র্থ তলায় নতুন করে ১০ শয্যার আইসিইউ ও ১০ শয্যার আইসোলেশন ইউনিট প্রস্তুত করা হয়।

 

এ ইউনিটের জন্য রোগী উঠানামার লিফট ও জনবল না দিয়ে উদ্বোধনও করা হয়। এ অবস্থায় হাসপাতালে বিদ্যমান জনবল দিয়ে কোনোমতে বেসরকারি উদ্যোগে নির্মিত ইউনিটটি সচল রাখা হলেও এখন পর্যন্ত চালু করা যায়নি সরকারি আইসিইউ ইউনিটটি। এতে করে স্বল্প খরচে সরকারিভাবে উন্নত চিকিৎসাসেবা নিতে পারছে না যশোরের মানুষ।

 

আরও পড়ুন: যশোরে করোনায় আরেক রোগীর মৃত্যু

 

হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ ডা. রবিউল ইসলাম তুহিন বলেন, সবাই জানে যশোর জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ আছে, কিন্তু সেটা কীভাবে চলছে তার খবর কেউ রাখে না। বেসরকারি উদ্যোগে চালু করা ইউনিটটি চলে বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সদের ডেপুটেশনে এনে। আমি নিজেও চৌগাছা থেকে ডেপুটেশনে এসে কাজ করছি।

 

তিনি আরও বলেন, এখানে শয্যার ৪-৫ গুন রোগীর চাপ থাকে। রোগীরা ফেরত যায়। অথচ সরকারি খরচে নির্মিত আইসিইউটা চালু করা হচ্ছে। ওই ইউনিটটি চালু হলে যশোরের মানুষ উপকৃত হতো।

 

হাসপাতালের আরএমও ডা. বজলুর রশিদ টুলু জানান, করোনারি কেয়ার ইউনিটের চতুর্থ তলায় আইসিইউ ইউনিটটি চালুর উপযুক্ত। সেখানে বেডসহ সকল যন্ত্রাংশ রয়েছে। প্রায় দুই বছর এভাবে পড়ে আছে সবকিছু। সরকার আইসিইউ পরিচালনার জন্য কোনো পদ সৃষ্টি করেনি। ফলে স্বাস্থ্য অধিদফতর এখানে কাউকে পদায়ন করতে পারছে না। তাছাড়া করোনারি কেয়ার ইউনিটের তৃতীয় তলাা পর্যন্ত লিফট সুবিধা আছে। সেটি চতুর্থ তলা পর্যন্ত সম্প্রসারণ না করায় বিদ্যমান জনবল দিয়েও ইউনিটটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।

 

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন যশোর শাখার আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, যশোর জেনারেল হাসপাতালে ঝিনাইদহ, মাগুরা ও নড়াইলের রোগীরাও এ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। অসংখ্য রোগী আছে যাদের আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন হয়। ফলে নতুন চালু হলে চার জেলার মানুষ উপকৃত হবে। এজন্য যত দ্রুত সম্ভব আইসিইউ ইউনিটটি চালুর দাবি জানাচ্ছি।

 

আরও পড়ুন: করোনা: বাড়ছে শনাক্ত আর মৃত্যুর সংখ্যা

 

উপল আহমেদ নামে এক রোগীর স্বজন জানান, বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা খুব ব্যয়বহুল। সে তুলনায় সরকারি হাসপাতালে খরচ একেবারে কম। হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটগুলো পরিপূর্ণভাবে চালু আমরা সাধারণ মানুষ বিশেষায়িত চিকিৎসা পাওয়ার পাশাপাশি আর্থিকভাবেও উপকৃত হবো। এজন্য আমাদের দাবি দ্রুততম সময়ে হাসপাতালের নতুন আইসিইউ ইউনিটটি চালু করা হোক।

 

এ বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন সাফায়াত বলেন, আইসিইউ ইউনিটটি চালু করতে লিফট চালুর পাশাপাশি ১০জন ডাক্তার, ২০জন নার্স ও ৪০জন কর্মচারী প্রয়োজন। সেটা পেলেই কেবল এ ইউনিটটি চালু করা সম্ভব। তারপরও আমরা বিদ্যমান জনবল দিয়ে ইউনিটটি চালু করতে চেয়েছিলাম। এজন্য লিফটটি চতুর্থ তলা পর্যন্ত চালু করতে অনুরোধ জানিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি দিয়েছি। এ কাজের জন্য যে বরাদ্দ প্রয়োজন তা পাওয়া যায়নি। লিফটটি চালু করা সম্ভব বলে আইসিইউ ইউনিটটি চালু করা সম্ভব হবে।

 

প্রসঙ্গত, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোভিড-১৯ ইমারজেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস (ইআরপিপি) প্রকল্পের আওতায় ১০ শয্যাবিশিষ্ট আইসিইউ ইউনিটটি স্থাপন করা হয়েছে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন