৯ মাস বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে ফারুকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে অনেকগুলো। সম্প্রতি নিয়ম ভেঙে
বড় অঙ্কের অর্থ ট্রান্সফারের মতো গুরুতর অভিযোগও এসেছে। অভিযোগের তদন্ত করতে বিসিবিতে কয়েকবার হানাও দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
ফারুকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ ওঠার পর গত দুই সপ্তাহ ধরেই জোর গুঞ্জন তাকে এই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার। গতকাল (২৮ মে) এই বিষয়ে তাকে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা। ডেকে নিয়ে বিসিবি সভাপতিকে ক্রীড়া উপদেষ্টা জানান, বিসিবি সভাপতি পদে তাকে আর চাইছে না সরকার। এই পদে দ্রুত পরিবর্তন আনতে চান তারা।
ক্রীড়া উপদেষ্টার প্রস্তাবের জবাবে কিছু বলেননি বিসিবি সভাপতি। চিন্তা-ভাবনা করার জন্য মন্ত্রণালয়ের কাছে ২-৩ দিন সময় চেয়েছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'উপদেষ্টা কিন্তু আমাকে পদত্যাগ করতে বলেননি। শুধু বলেছেন, আমাকে আর তারা ‘কন্টিনিউ’ করাতে চান না। এখনই এ বিষয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না। দেখা যাক, কী হয়।’
বর্তমান বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদকে সরিয়ে সাবেক বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে এই পদে বসাতে চায় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। ফারুক আহমেদ সরে গেলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সেটা করা সম্ভব৷ যদিও সেক্ষেত্রে কয়েকটি ধাপ পেরোতে হবে। কিন্তু সমস্যা তৈরি হবে যদি ফারুক সরে যেতে রাজি না হন।
ইতোমধ্যে দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে ফারুক বিসিবি সভাপতির পদ থেকে সরে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি পদত্যাগ করব না। আমাকে বলা হয়েছে, সরকার নাকি আমাকে আর বিসিবি সভাপতি হিসেবে রাখতে চাইছে না। কিন্তু কেন রাখতে চাইছে না, সেটার কোনো কারণ তারা আমাকে বলেনি। বিনা কারণে তো আমি পদত্যাগ করতে পারি না।’
আরও পড়ুন: ফারুকের জায়গায় আসতে পারেন বুলবুল!
জানা গেছে, বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক-বর্তমান অনেক ক্রিকেটার এবং সংগঠকও এই বিষয়ে ফারুকের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। মাত্র ৯ মাসের ব্যবধানে দুইবার বোর্ড সভাপতি পরিবর্তনকে অনেকেই ছেলেখেলার সমতুল্য হিসেবে দেখছেন। এমতাবস্থায় বোর্ডের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বেরও আশঙ্কা করা যাচ্ছে।
যদি ফারুক আহমেদ তার অবস্থান থেকে সরতে না চান এবং সরকার থেকে জোরপূর্বক তাকে সরানোর চেষ্টা করা হয়, সেক্ষেত্রে আইসিসির নিষেধাজ্ঞা পেতে পারে বিসিবি। কারণ ক্রিকেট বোর্ড একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এখানে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো হস্তক্ষেপ কামনা করে না আইসিসি। সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে এর আগে জিম্বাবুয়ে এবং শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট বোর্ডকে নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়েছিল।
তবে ফারুক সরে গেলে গঠনতন্ত্র মেনে বুলবুলকে আনতে পারবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। বিসিবির সভাপতি হতে হলে সবার আগে কাউন্সিলর হতে হবে। বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক হওয়ায় বুলবুলের সেটি হতে কোনো বাধা নেই। সভাপতি বানাতে হলে এরপর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের তাকে পরিচালক মনোনীত করতে হবে। সর্বশেষ পরিচালকদের তাকে সভাপতি হিসেবে মনোনীত করতে হবে।
এদিকে, বিসিবির দায়িত্ব বুলবুলকে দেয়ার বিষয়ে ২ সপ্তাহ আগেই ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তার দায়িত্ব কী হবে, সেটা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা ছিল না এই সাবেক ক্রিকেটারের।
এ প্রসঙ্গে বুলবুল বলেন, ‘১০-১৫ দিন আগে আমার সঙ্গে উপদেষ্টার (ক্রীড়া) পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। তারা আমাকে কোনো একটা ভূমিকায় কিছু সময়ের জন্য বাংলাদেশের ক্রিকেটে চাচ্ছেন। আমিও তাতে রাজি হয়েছি।’
আরও পড়ুন: ঘুরে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিলেন লিটন
দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত বুলবুল, তবে লম্বা সময় ধরে থাকার ইচ্ছা নেই তার, ‘আমার বিসিবিতে লম্বা সময় ধরে থাকার ইচ্ছা নেই। আমাকে হয়তো আবেগ প্রবণ ভাবতে পারেন, তবে একটা দেশের যখন সৈনিক দরকার হয়, ওই সৈনিক কিন্তু তার পারিশ্রমিক বা নিজের স্বার্থ দেখে না। কাজটাই তার কাছে আগে। আমার চিন্তাও সেরকম। বিসিবির যেকোনো দায়িত্ব নিতে আমি প্রস্তুত। দেখা যাক কি হয়।’
]]>