দাম্পত্য সম্পর্ক নিয়ে যে পরামর্শ দিলেন শায়খ আহমাদুল্লাহ

৩ সপ্তাহ আগে
পরিবার হলো মানবসভ্যতার সূতিকাগার। পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকে মানবসভ্যতা যে বন্ধনের ওপর ভর দিয়ে টিকে আছে, তার নাম পরিবার। অথচ খুব ঠুনকো কারণে প্রতিদিনই অসংখ্য পরিবার ভেঙে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন সামাজিক সাহায্য সংস্থা আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে পেজে দেয়া এক পোস্টে তিনি এ আহ্বান জানান।

 

শায়খ আহমাদুল্লাহ লেখেন, একটি জরিপে দেখা গেছে, রাজধানীতে প্রতিদিন ভাঙছে প্রায় ৩৭ টি দাম্পত্য সম্পর্ক। মিনিটের হিসাবে প্রতি ৪০ মিনিটে ১ টি করে তালাকের ঘটনা ঘটছে। ইসলামে অপছন্দনীয় বৈধ কাজ বলা হয়েছে তালাককে। শুধু তাই নয়, কোথাও পরিবার ভাঙার সংবাদে শয়তান যতটা খুশি হয়, ততটা খুশি সে অন্য কোনো কারণে হয় না।  

 

তিনি আরও লেখেন, 

 

তালাকের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী আলাদা হয়ে যায়, তারা হয়ত নতুন করে জীবন শুরু করতে পারে, কিন্তু এর নির্মম বলির শিকার হয় সন্তান। বাবা-মার সংসার ভাঙার প্রেক্ষিতে সন্তানেরা যে মানসিক পীড়নের ভেতর দিয়ে বড় হয়, এই ট্রমা সারা জীবনেও তারা কাটিয়ে উঠতে পারে না। তালাক কোনো প্রশংসনীয় কাজ নয়। তালাক মূলত নিরুপায় অবস্থায় একটি বিষাক্ত সম্পর্ক থেকে বের হওয়ার দরজা। সম্পর্ক যতক্ষণ ধরে রাখার পর্যায়ে থাকে, ইসলাম ততক্ষণ এই দরজা খুলতে নিষেধ করে। তবে যখন বিশ্বাস ভেঙে যায়, মধুর সম্পর্ক বিষময় হয়ে ওঠে, আশার সব প্রদীপ নিভে যায়, একজন অন্যজন থেকে এমনভাবে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আর মিলনের কোনো সম্ভাবনাই বাকি থাকে না, ইসলাম তখনই তালাকের কথা ভাবতে বলেছে।

 

আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান লেখেন, তাও এমন পদ্ধতিতে তালাক দিতে বলেছে, যেন ভুল বোঝাবুঝির অবসান হলে চাইলেই আবার পূর্বের সম্পর্কে ফিরে আসা যায়। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ ঠুনকো কারণে পূর্বাপর চিন্তা না করেই চূড়ান্ত তালাক দিয়ে বসে, যা তাদের পুনর্মিলনের মাঝে স্থায়ী পাঁচিল তুলে দেয়। এরপর যখন স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে, তারা আফসোস করতে থাকে। যে আফসোস তাদের ভাঙা সংসার জোড়া লাগাতে কোনোই ভূমিকা রাখে না।

 

তিনি আরও লেখেন, 

 

তাই তালাকের আগে ভাবুন। তালাক সম্পর্কে জানুন। বিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ মানুষের সাথে পরামর্শ করুন। অভিমান ও মনোমালিন্য জীবনের অংশ। নবীজির (সা.) সংসারেও মনোমালিন্য হয়েছে। কিন্তু সেই অভিমান কিংবা মনোমালিন্য তাদের সংসারে স্থায়ী ছাপ রাখতে পারেনি। বরং অভিমান ভেঙে আবার তিনি স্ত্রীদের সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়েছেন। তাই মনোমালিন্য কিংবা ভুল বোঝাবুঝি হলেই বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেবেন না। আজ আপনার বয়স কম, তারুণ্যের রক্ত টগবগিয়ে ছুটছে আপনার শিরায় শিরায়। ভাবছেন, এত যন্ত্রণা নিয়ে সংসার করার চেয়ে একা থাকাই আরামের; কিন্তু এই তারুণ্য চিরস্থায়ী নয়।

 

শেষে তিনি লেখেন, একদিন বার্ধক্য আপনার শরীরে বাসা বাঁধবে। সেদিন যখন একলা বিছানায় জ্বরে কাতরাবেন, কপালে রাখার মতো একটা ভালোবাসার হাত আপনি পাবেন না। দিনের শেষে ক্লান্ত হয়ে যখন আপনি ঘরে ফিরবেন, এক গ্লাস ঠান্ডা পানি বাড়িয়ে ধরার মতো মানুষ আপনি পাবেন না। একলা ঘরে অসহায় অবস্থায় আপনাকে ধুঁকে ধুঁকে মরতে হবে। তাই, সেই দুর্দিন আসার আগেই আসুন আমরা আমাদের দাম্পত্য সম্পর্কের প্রতি যত্নশীল হই।

 

আরও পড়ুন: কিসাসই এসব কসাইয়ের সমাধান: আহমাদুল্লাহ

 

মন্তব্যের ঘরে তিনি লেখেন, জীবন দীর্ঘ। সে তুলনায় দাম্পত্য-সংকট, সম্পর্কের টানাপড়েন ও মান-অভিমান খুবই ক্ষুদ্র। 

 

আপনার রাগের মাথায় নেয়া এক সিদ্ধান্ত সারা জীবনের অনুতাপের কারণ হতে পারে। সংসার ঠিক মাটির হাঁড়ির মতো—গড়তে সময় লাগে, ভাঙতে লাগে এক মুহূর্ত। কিন্তু ভাঙার পর বোঝা যায়, এটিই ছিল জীবনের সবচেয়ে বড়ো ভুল। আমরা কেউই নিখুঁত নই। মতের অমিল, ভুল বোঝাবুঝি—সবই জীবনের অংশ। শত অমিল সত্ত্বেও একদিন জীবনসঙ্গীই হয়ত আপনার শেষ আশ্রয় হবে, যখন সারা পৃথিবী নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। তাই ভাঙার আগে একবার নয়, শতবার ভাবুন-- সংশোধনেই সমাধান, বিচ্ছেদে নয়। বিচ্ছেদ যদি হতেই হয় তবে এমনভাবে নয়, যা ফেরার পথ চিরতরে রুদ্ধ করে দেয়।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন