দাম্পত্য জীবনে ভালোবাসা ও উত্তম আচরণ

৩ সপ্তাহ আগে
বিয়ে শুধু দুটি মানুষের মধ্যে একটি সামাজিক চুক্তি নয়, বরং এটি দুটি হৃদয়ের মিলন, দুটি জীবনের যাত্রা এবং আল্লাহর দেওয়া একটি বিশাল নিয়ামত। বিবাহের মাধ্যমে নারী ও পুরুষ একে অপরের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যান।

শুরু হয় নতুন এক জীবন, যেখানে সুখ-দুঃখ, চড়াই-উৎরাই, আনন্দ-বেদনা,সবকিছু একসঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়ার এক মহান যাত্রা। কিন্তু এই সম্পর্ককে সুন্দর ও দীর্ঘস্থায়ী রাখতে হলে প্রয়োজন ধৈর্য, সহমর্মিতা, সহনশীলতা এবং পারস্পরিক সম্মান। দাম্পত্য জীবনে সুখের চাবিকাঠি শুধু ভালোবাসা নয়, বরং ইখলাস (আন্তরিকতা) এবং ইহসান (সর্বোত্তম ব্যবহার)।


সতী ও নেককার স্ত্রী: দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ

 

দাম্পত্য জীবনেএকজন সতী, নেককার ও অনুগত স্ত্রীকে রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদের সাথে তুলনা করেছেন।

 

রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

 

اَلدُّنْيَا مَتَاعٌ، وَخَيْرُ مَتَاعِ الدُّنْيَا الْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ দুনিয়া তো এক ধরনের ভোগ্য বস্তু। কিন্তু দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ ভোগ্য সম্পদ হলো নেককার (সতী) স্ত্রী। (সুনানুন নাসায়ি:৩২৩৩,মুসনাদু আহমদ:৬৫৬৭) এখানে বোঝা যায়, একজন নারীর সততা, চরিত্রের পবিত্রতা এবং স্বামীর প্রতি ভালো ব্যবহার দুনিয়ার যেকোনো ধনসম্পদের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান।


 

স্ত্রীর সঙ্গে উত্তম ব্যবহার: প্রকৃত ঈমানের নিদর্শন

 

ইসলামে একজন পুরুষের চরিত্র ও ঈমান যাচাই করার অন্যতম প্রধান মাপকাঠি হলো স্ত্রীর সাথে তার আচরণ। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনে স্ত্রীদের সঙ্গে যে কোমলতা, সহানুভূতি ও সৌন্দর্য ফুটে উঠেছিল, তা আমাদের জন্য অনুসরণের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। 

 

আরও পড়ুন: ‘বালাগাল উলা বি কামালিহি’ যেভাবে রচিত হলো


হজরত আবু হুরায়রারা. থেকে বর্ণিত; রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

 

أَكْمَلُ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا، وَخِيَارُكُمْ خِيَارُكُمْ لِنِسَائِهِمْ তোমাদের মধ্যে ঈমানের দিক থেকে সবচেয়ে পরিপূর্ণ সেই ব্যক্তি, যার চরিত্র সবচেয়ে উত্তম। আর তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ তারা, যারা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে শ্রেষ্ঠ ব্যবহার করে। (সুনানু আবি দাউদ:১১৬২,সুনানুত তিরমিজি:৪৬৮২) অর্থাৎ, একজন মানুষের আসল মহত্ত্ব নির্ভর করে এই ব্যাপারে যে, তিনি তার সবচেয়ে নিকটবর্তী মানুষ, নিজের স্ত্রী-এর সঙ্গে কেমন আচরণ করেন।


 

রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দাম্পত্য জীবনের আদর্শ

 

রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সর্বোত্তম স্বামী। তিনি স্ত্রীদের সঙ্গে কখনো কঠোর ব্যবহার করেননি। তিনি হাসিমুখে কথা বলতেন, তাদের মনোবেদনা শুনতেন এবং তাদের প্রয়োজনকে সম্মান দিতেন।


উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন,

 

রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো স্ত্রীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেননি, কখনো কঠোর বাক্য ব্যবহার করেননি। তিনি পরিবারের কাজে সাহায্য করতেন, কাপড় সেলাই করতেন এবং সাধ্যমতো গৃহস্থালির কাজে হাত লাগাতেন। (সহিহ বুখারি:৬০৩৯) এ থেকেই বোঝা যায়, দাম্পত্য জীবনে স্নেহ, সম্মান ও সহযোগিতা হলো প্রকৃত ভালোবাসার প্রতিফলন।

 

সুন্দর দাম্পত্য জীবনের জন্য করণীয়

 

১. ভালোবাসা ও সম্মান বজায় রাখা,পারস্পরিক শ্রদ্ধা দাম্পত্য জীবনের মূলভিত্তি। ২. ধৈর্য ধারণ ,মতপার্থক্য হলে সহনশীলতার সাথে সমস্যার সমাধান করা। ৩. কৃতজ্ঞতা প্রকাশ,ছোট ছোট ভালো কাজের জন্যও একে অপরকে ধন্যবাদ জানানো। ৪. যোগাযোগ রক্ষা.খোলামেলা আলাপ ও বোঝাপড়া সম্পর্ককে শক্তিশালী করে। ৫. দোয়া করা, একে অপরের জন্য দোয়া করা সম্পর্কের বন্ধনকে বরকতময় করে।

 

বিয়ে শুধু দু’টি আত্মার মিলন নয়, বরং এটি দুনিয়া ও আখেরাতের এক সুন্দর যাত্রা। দাম্পত্য জীবনে সুখ তখনই আসে, যখন স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই আল্লাহর বিধান মেনে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা, সহমর্মিতা ও উত্তম আচরণ প্রদর্শন করে।

 

রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

 

خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لِأَهْلِهِ তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে নিজের পরিবারের জন্য উত্তম। (সহিহ ইবনু হিব্বান: ৪৭৮২) আসুন, আমরা সবাই রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদর্শকে অনুসরণ করে দাম্পত্য জীবনকে আরও সুন্দর, পরিপূর্ণ ও বরকতময় করি।

 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন