কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে রংপুর অঞ্চলের সমতল ও তিস্তার চরাঞ্চল মিলে একশ হেক্টরেরও বেশি জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার মধ্যে গ্রীষ্মকাল সবজি আর বাদামের পরিমাণ বেশি।
সরেজমিন রংপুরের গংগাচড়া, কাউনিয়া, মিঠাপুকুর ও সদর উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, গত কয়েকদিন দিনের বৃষ্টিতে গ্রীষ্মকালীন শাক সবজিসহ ধান, বাদাম, কাউন, মরিচ ও ভুট্টার ক্ষেত প্রায় হাঁটু পানিতে ডুবে গেছে। কষ্টে বোনা ফসল বাঁচাতে শেষ চেষ্টা করছের কৃষকরা।
তিস্তার চর গুলোতে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে বাদাম। চর মহিপুর, পূর্ব ইচলি, চর ইচলি, চর ইশোরকুল, শংকরদহ, ছালাপাক, আলফাজটারী, শেখপাড়া, চিলাখালসহ প্রায় সব চরেই বাদাম তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। রোদ না থাকার কারণে পানিতে তলিয়ে থাকা বাদামগুলো গাছ থেকে ছাড়িয়ে রাস্তার ধারে পলিথিনে বিছিয়ে রেখেছে কেউ কেউ। আবার অনেকে বাদাম গাছ থেকে ছাড়াতে না পেরে স্তূপ করে রেখেছে।
আরও পড়ুন: বৃষ্টি কতদিন থাকবে, জানালো আবহাওয়া অফিস
তিনি বলেন, এবছর প্রায় এক একর জমিত বাদাম চাষ করছি। সব পানিতে তলিয়ে গেছে। এভাবে তো রাখা যায়না এ পানি কবে কমবে। তাই তুলে নিচ্ছি।
চর ইশোরকুল এলাকার বাদাম চাষি আফতাবুল বলেন, ৫০ শতক মাটির বাদাম সব পানিতে ডুবি গেছিলো। উপায় না পেয়ে পানি থেকে বাদাম তুলে নিছি। রোদও নাই শুকাতে পাচ্ছি না। এমনিতেও এবার বাদামের ভালো ফলন হয় নাই। তার ওপর যেটুকু ফলেছর তাও যদি শুকাতে না পাই তাহলে একবারে লস হবে।
চর শংকরদহের বাসিন্দা মকবুল হোসেন বলেন, জমিজমা তো সব তিস্তা খেয়ে নিছে। ধারদেনা করে মানুষের দুই বিঘা জমি লিজ নিয়ে বাদাম আর কাউন চাষ করছিলাম। কাউন তো আর হবে না, বাদাম গুলো রক্ষায় শেষ চেষ্টা করছি। বৃষ্টির সময় মানুষও পাওয়া যায়না। এদিকে তারাতাড়ি বাদাম উপরে তুলতে না পারলে নষ্ট হয়ে যাবে।
চরাঞ্চলের পাশাপাশি সমতলের নিচু এলাকাগুলোতেও সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। মিঠাপুকুর ও সদর উপজেলা সহ বেশকিছু এলাকার ৫০ হেক্টর জমির ফসল ডুবে গেছে। এতে করলা, ঢেরশ, বরবটি, কাকরোল, ঝিঙ্গা, জালি কুমড়াসহ গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
কৃষকরা বলছেন, বৃষ্টির পানিতে করলা, ঝিঙেসহ প্রায় সব ধরনের ফসলই তলিয়ে গেছে। তলিয়ে যাওয়া ৭০ ভাগ ফসলই নষ্ট হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ডুবছে শেরপুরের নিম্নাঞ্চল, বাঁধে ফাটল
কৃষি বিভাগ বলছে, ক্ষতি কমাতে ডুবে যাওয়া ক্ষেত থেকে দ্রুত পানি নিষ্কাশনে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
রংপুরের মিঠাপুকুরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোসফিকুর রহমান বলেন, কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। পানি কমে গেলে ছত্রাক নাশকসহ কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। তবে আরও পানি জমলে ফসল বাঁচানো মুশকিল হবে।
গংগাচড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ শাহিনুর ইসলাম বলেন, আগাম অতি বৃষ্টি ও তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধিতে উপজেলার প্রায় ৩০ হেক্টর জমির বাদাম পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। যেহেতু আবহাওয়া প্রতিকূলে তাই নিমজ্জিত জমি হতে পানি অপসারণসহ রোগবালাই দমনের জন্য কৃষি বিভাগ থেকে কারিগরি পরামর্শ অব্যাহত রয়েছে।