তিতাস গ্যাসের পাইপে লিকেজ: ২৯৬টি দুর্ঘটনায় দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু

৪ সপ্তাহ আগে
নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় দেখা যাচ্ছে তিতাসের পাইপলাইনে অসংখ্য লিকেজ। এসব স্থান থেকে টানা গ্যাস নির্গত হচ্ছে। গত ৫ বছরে গ্যাস লাইন লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ২৯৬টি ঘটনায় দেড় শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এ কারণে আতঙ্কে আছেন এলাকাবাসী। তবে মেরামতসহ পুরানো পাইপগুলো অপসারণ করে নতুন পাইপ স্থাপনের আশ্বাস তিতাস কর্তৃপক্ষের।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মাটির নিচে তিতাসের বিতরণ লাইনে অসংখ্য লিকেজ। রাস্তায় জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে বুদবুদ দেখে স্পষ্ট বোঝা যায় গ্যাস পাইপ লিকেজের আলামত। এর সঙ্গে বাতাসে ছড়াচ্ছে গ্যাসের তীব্র গন্ধ। নারায়ণগঞ্জ শহরের গোয়ালপাড়া ও গলাচিপা এলাকায় প্রায় সময় দেখা যায় এমন দৃশ্য।


এলাকাবাসী জানান, গত দশ বছর ধরে তিতাসের গ্যাস পাইপের লিকেজ থেকে এভাবে অনবরত গ্যাস বের হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টি হলে তা সবার নজরে পড়ছে। এরআগে এই এলাকায় গ্যাস পাইপের লিকেজ থেকে দুবার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলেও লিকেজ মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।


গোয়ালপাড়া ও গলাচিপা ছাড়াও জেলা সদরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শহরের কলেজ রোড, মাসদাইর, জামতলা, দেওভোগ, ফতুল্লার ইসদাইর, পঞ্চবটি, ভোলাইল, জালকুঁড়ি, পাগলা ও নয়ামাটি এলাকায় গ্যাস পাইপের এমন অসংখ্য লিকেজ চোখে পড়ে। বিশেষ করে জালকুঁড়ি থেকে পাগলা পর্যন্ত চার কিলোমিটার দীর্ঘ পুরো রাস্তাটি যেন গ্যাসের বোমা। সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তায় জমে থাকা পানিতে গ্যাস বের হওয়ার প্রমাণ মিলছে। এসব লিকেজ থেকে এরআগে জেলার বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য দুর্ঘটনায় ব্যাপক হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। ফলে প্রতিনিয়ত ভয় ও আতঙ্কে রয়েছেন এলাকাবাসী।


আরও পড়ুন: নারায়ণগঞ্জে ৮০০ অবৈধ গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন


নারায়ণগঞ্জ তিতাস অফিস সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলায় তিতাস গ্যাসের আবাসিক ও শিল্প বাণিজ্যিক সংযোগ স্থাপন শুরু হয় ১৯৬৪ সাল থেকে। জেলায় বর্তমানে ৭২ হাজার আবাসিক গ্রাহক এবং ৮৮২টি শিল্প ও বাণিজ্যিক সংযোগ রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে দুই লক্ষাধিক অবৈধ সংযোগ। নারায়ণগঞ্জে প্রতিদিন ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে ১৪৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে।

 

নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের জেলা কার্যালয়ের তালিকা মতে, এ জেলায় ২০২১ সাল থেকে চলতি বছর এ যাবত পর্যন্ত বিগত পাঁচ বছরে গ্যাসের লিকেজ থেকে ২৯৬টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। ২০২১ সালে ১২৮টি, ২০২২ সালে ৫১টি, ২০২৩ সালে ৬৭টি, ২০২৪ সালে ২১টি এবং চলতি বছর ঘটেছে ২৯টি দুর্ঘটনা।


গত পাঁচ বছরে এসব দুর্ঘটনায় অগ্নিদগ্ধদের মধ্যে অন্তত দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। তাই ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা রোধে আধুনিক পরিকল্পনা গ্রহণসহ স্থায়ী সমাধানের ব্যবস্থা করতে তিতাসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ।


নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ্ আল আরেফীন সময় সংবাদকে বলেন, ‘তিতাসের নির্দিষ্ট একটা পরিকল্পনা যদি থাকে তাহলে আমরা দুর্ঘটনা রোধ করতে পারি। পাশাপাশি সবাইকে সচেতন হতে হবে। চোরাইভাবে বা অবৈধ সংযোগ নেয়া যদি বন্ধ করা যায় এবং নিয়ম অনুযায়ী যদি আবেদন করে মানুষ বৈধভাবে গ্যাসের সংযোগ নেয় তাহলে দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব।’


আরও পড়ুন: নারায়ণগঞ্জে ৫ হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন


এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোং লিমিটেড নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক বিপণন বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. মামুনার রশিদ সময় সংবাদকে বলেন, ‘মাটির নিচে থাকা দীর্ঘ ৬০ বছরের পুরনো পাইপগুলোতে জং ধরে লিকেজ সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে রাস্তার সংস্কার ও মেরামত কাজের সময়ও তিতাসের পাইপ লিকেজ হয়েছে। সম্প্রতি মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের পঞ্চবটি পর্যন্ত নির্মাণাধীন দ্বিতল সেতুর পায়লিং স্থাপনের সময়ও বেশ কয়েকবার আমাদের পাইপ লিকেজ হয়ে গ্যাস বিতরণ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’


তিতাসের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমাদের বিতরণ লাইনে কোথাও লিকেজ হওয়ার খবর পেলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে তা মেরামত করি। তবে পুরনো পাইপ লাইনগুলো পরিবর্তন করার পরিকল্পনা আমাদের আছে। এরইমধ্যে এর অনুমোদনও হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ পেলে আমরা এর কাজ শুরু করব। পুরনো পাইপলাইনগুলো পরিবর্তন করে নতুন পাইপ স্থাপন করা হবে।’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন