তালশাঁসে ভাগ্যের চাকা ঘুরল জসিমের

৩ সপ্তাহ আগে
জসিম মিয়া (৫২)। নেত্রকোনা শহরের মোক্তারপাড়া পুরাতন কালেক্টরেট এলাকার একটি পরিচিত মুখ তিনি। সদরের বড়াওয়ারি গ্রামে তার বাড়ি। গ্রামে গ্রামে ঘুরে গাছে উঠে নিজেই তাল পেরে নিয়ে আসেন জসিম। এরপর বিভিন্ন এলাকায় সড়কের পাশে বসে কেটে কেটে বিক্রি করেন। প্রায় ৩০ বছর ধরে তালশাঁস ( নরম আটি) বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি।

সরেজমিনে কালেক্টরেট মাঠে গিয়ে দেখা যায়, পাশের মেইন সড়কে দ্রুতই তালশাঁস (নরম আটি) কেটে কেটে দিচ্ছেন জসিম মিয়া। অপরিপক্ক তালের এই বীজ খেতে দারুণ স্বাদ। তাই একজন নিচ্ছেন আরেকজন দাঁড়িয়ে থাকছেন। প্রতি আঁটির মূল্য মাত্র ১০ টাকা। এক তালে তিনটি শাঁস থাকে।


জসিম জানান, তার পরিবারে পাঁচজন সদস্য। তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়েকেই বিয়ে দিয়েছেন। প্রতিবার ২০০ থেকে ৩০০ তাল এনে নিজেই কেটে সাঁশ (তালের নরম আটি) বিক্রি করেন। এতে হাজার দেড় হাজার টাকা লাভ হয়। নিজে গাছে ওঠে তাল পাড়েন। পরে বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় বসে বিক্রি করেন। এই ব্যবসাটি তিনি বর্ষা মৌসুমে করেন। আর সারা বছর গাছ কাটা ডাল ছাটানোসহ মানুষের আম, কাঁঠাল, জাম নামিয়ে দেন। মূলত তিনি একজন গাছি। আর এই কাজ করেই তিনি বড় হয়েছেন এবং সংসার চালাচ্ছেন।


আরও পড়ুন: সীমান্তে ট্রাকের পাথর কুড়িয়ে সংসার চালান সোলোকি বেগম


তিনি আরও জানান, তিনি গত ৩০ বছর ধরে তালের সাঁশ বিক্রি করছেন শহরের নানা প্রান্তে। এটা তিনি কষ্টের হলেও আনন্দ নিয়েই করেন। আবার এই অল্প আয়ে তার মাঝে এক ধরনের তৃপ্তিও দেখা যায়। আপন মনে বৃষ্টিতে ভিজেই করছেন এই কাজ।


তালশাঁস ক্রেতা শিক্ষক সৈয়দ শাকিল মোস্তফা জানান, তিনি এসেছেন তালের সাঁশ কিনতে। বাসায় নিয়ে সবাই মিলে খাবেন। প্রতি পিছ ১০ টাকা করে কেনেন। তিনি তার বাসার জন্য ৮ পিছ কিনেছেন।


আরও পড়ুন: তালশাঁসের যে উপকারিতাগুলো আপনাকে অবাক করবে


তিনি বলেন, ‘এটি খেতে খুব স্বাদ। বেশি মিষ্টি না। কিছুটা পানসে হলেও একেবারে প্রথম পর্যায়ে ডাবের ভেতরে নরম ক্ষিরের মতো থাকে। এটাই খুব ভালো লাগে। তিনিও মনে করেন এভাবে জসিমদের মতো যারা অল্পতেই সংসার চালায় তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা করলে হয়তো আরেকটু স্বাচ্ছন্দ্যে সংসার চালাতে পারতো। কারণ গাছে ওঠা বর্ষায় রিস্ক জেনেও তারা এই কাজ করেন।


শিক্ষক সৈয়দ শাকিল মোস্তফা বলেন, ‘তবে খেটে খাচ্ছেন। এই জন্যে জসিমদের মতো মানুষদের তিনি স্যালুট দেন। কোনো নিদৃষ্ট স্থান বা কিছু নেই। এরা কারো কাছে গিয়ে কিছু চাইতেও পারেন না। তাই তিনি মনে করেন তাদের পেশা অনুযায়ী কাজে পৃষ্ঠপোষকতা করা দরকার।’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন