জানা যায়, তরুণ উদ্যোক্তাদের হাত ধরে বাড়ছে নার্সারি কেন্দ্রিক রেস্তোরাঁর জনপ্রিয়তা। কৃষিভিত্তিক এসব ইকো-ট্যুরিজম স্পট থেকে বিভিন্ন ফুল ও ফলের চারা ক্রয়ের পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশে বিনোদনের সুযোগ পেয়ে পর্যটক এবং স্থানীয়রা উচ্ছ্বসিত হচ্ছেন; পাশাপাশি স্থানীয়দেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। আর এতে সহযোগিতা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
সরেজমিনে নার্সারি কেন্দ্রিক কৃষিভিত্তিক ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র ‘স্বপ বিলাস ফ্লাওয়ার ভিলেজে’ দেখা যায়, এটি কৃষিভিত্তিক ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র ও রেস্তোরাঁ। খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার ২৪ মাইলের মোড়াপাড়া এলাকায় রেস্তোঁরাটি গড়ে তুলেছেন স্থানীয় এক তরুণ মো. খালেক মাসুদ সাগর। ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে চাকরির পেছনে না ঘুরে তিনি গড়ে তোলেন কৃষিভিত্তিক এ রেস্তোরাঁটি। এর চারদিকে রং-বেরঙের নানা জাতের ফুলের সমারোহ। রয়েছে বিভিন্ন দেশীয় ও বিদেশি গাছের চারা। পাহাড়ের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির মিশেলে দারুণ বৈচিত্র্যপূর্ণ এ রেস্তোরাঁটি এখন বেশ জনপ্রিয় বিনোদন কেন্দ্র।
প্রতিদিনই স্থানীয়দের পাশাপাশি কয়েক’শ পর্যটকের সমাগম হয় এখানে। তারা বিভিন্ন ফুল-ফলের চারা ক্রয়ের পাশাপাশি নান্দনিক এ রেস্তোরাঁয় প্রাকৃতিক পরিবেশে বিনোদনের সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত হন আগত অতিথিরা।
আরও পড়ুন: গহীন পাহাড়ে রহস্য ভরা ‘ডিসি অ্যাডভেঞ্চার পার্ক’, কী আছে সেখানে
খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে বেড়াতে আসা স্কুলশিক্ষিকা নির্ঝরা খীসা, তপ্তি চাকমা ও ফাতেমা আক্তার জানান, স্বপ বিলাস ফ্লাওয়ার ভিলেজ’, এটি নার্সারি কেন্দ্রিক একটি রেস্তোরাঁ। এখানে ঘুরতে এলে মন ভালো হয়ে যায়। কেন না এখানে নানা রঙের ফুল ও গাছগাছালিতে ভরপুর। প্রাকৃতিক পরিবেশে বসে আড্ডা দেয়া, গল্প করা, সুন্দর একটি পরিবেশে বন্ধু-বান্ধবীদেরও ফুল উপহার দেয়া যায়। তা ছাড়া নিজের জন্য পছন্দের ফুল ও ফলের চারাও ক্রয় করা যায়; সঙ্গে নিজের পছন্দ মতো নাস্তা বা ফাস্টফুড খাওয়া যায়।
খাগড়াছড়িতে প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে ওঠা এমন আরও অর্ধশতাধিক রেস্তোরাঁ রয়েছে। যেখানে রসনা বিলাসের পাশাপাশি বিনোদনের সুযোগ পাচ্ছে ভ্রমণ পিপাসুরা। দিনে দিনে এ জেলায় বাড়ছে ইকো-ট্যুরিজম। চাকরি পেছনে না ঘুরে ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রিক ব্যবসায় ভাগ্য ফেরাচ্ছেন অনেক তরুণ-তরুণী; পাশাপাশি স্থানীয়দেরও কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে এ সব বিনোদন কেন্দ্রে।

আরও পড়ুন: সোনাদিয়া দ্বীপে বেজার ইকো-ট্যুরিজম পার্কের কার্যক্রম স্থগিত
খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার ২৪ মাইলের মোড়াপাড়া এলাকার ‘স্বপ্ন বিলাশ ফ্লাওয়ার ভিলেজের’ উদ্যোক্তা মো. খালেক মাসুদ সাগর় বলেন, ‘ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে যখন বেকার জীবন অতিবাহিত করছিলাম, তখন মাথায় আসে কৃষিভিত্তিক নার্সারি কাম রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করা যায় কিনা। সে চিন্তা থেকে পারিবারিক পতিত প্রায় দুই একর জমিতে নার্সারি করা হয়। এর পাশাপাশি পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য নার্সারি কেন্দ্রিক একটি রেস্তোরাঁ ও কৃষিভিত্তিক ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র তৈরি করি। দুই বছরের মধ্যেই ব্যবসা ভালো হয়।’
নার্সারি ব্যবসার মাধ্যমেই স্বাবলম্বী হয়েছেন তিনি।
মাসুদ বলেন, ‘বর্তমানে আমার নার্সারিতে ৪৫ প্রজাতির বিভিন্ন কাঠ, ফল, ফুল এবং ঔষধি গাছের প্রায় ৩০ হাজার বাড়ন্ত চারা রয়েছে। এই চারার সর্বনিম্ন মূল্য ৩০ লাখ টাকা হতে পারে। এখন পর্যন্ত ১৫ লাখ টাকার চারা বিক্রি করা হয়েছে। এ বছর ৬ লাখ টাকার চারা বিক্রি করার আশা করছি। নার্সারিতে চার পুরুষ এবং নারী কাজ করছেন। তারা প্রত্যেকে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দৈনিক মজুরি পাচ্ছেন। তা ছাড়া বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা খণ্ডকালীন হিসেবে রেস্টুরেন্টে কাজ করেও বাড়তি আয় করছে। সব খরচ বাদ দিয়ে আমি নার্সারি ও রেস্টুরেন্ট থেকে প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা নিট মুনাফা অর্জন করি।’
আরও পড়ুন: বালুর ব্যাগে হারাচ্ছে কুয়াকাটার সৌন্দর্য, বাড়ছে দুর্ঘটনা
উদ্যোক্তা মো. খালেক মাসুদ সাগর আরও বলেন, ‘পরিবেশ সংরক্ষণের পাশাপাশি এই ইকো-ট্যুরিজমের মাধ্যমে এক দিকে যেমন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশ ঘটছে, তেমনি অন্য দিকে স্থানীয় অর্থনৈতিতেও অবদান রাখছে কৃষিভিত্তিক এই ইকো-ট্যুরিজম নার্সারি। আর এতে সহযোগিতা করছে স্থানীয় কৃষিবিভাগ।’
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ বাছিরুল আলম জানান, খাগড়াছড়িতে প্রায় ৫০টির মতো কৃষিভিত্তিক ইকো-ট্যুরিজম নার্সারি ও রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এখানকার ইকো-ট্যুরিজম আরও সমৃদ্ধ হবে।
]]>