ঢাকা শহরে প্রতিদিন তৈরি হয় প্রায় ৮ হাজার টন বর্জ্য। এরমধ্যে প্রায় ১ হাজার টন বর্জ্য যথাযথ ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। যেখানে-সেখানে ছড়িয়ে নানাভাবে পরিবেশ দূষণ করছে এগুলো।
অযাচিতভাবে বর্জ্য ফেলার কারণে শুধু দুর্গন্ধই নয়, মানুষের মাঝে ছড়াচ্ছে নানা রকম সংক্রামক রোগ। মশা, মাছি ও ইঁদুরের মাধ্যমে ডায়রিয়া, ডেঙ্গু থেকে শুরু করে বাড়ছে শ্বাসজনিত রোগ। অন্যদিকে, পচনশীল বর্জ্য থেকে উৎপন্ন মিথেন গ্যাস বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই–অক্সাইডের চেয়েও ৮০গুণ বেশি ক্ষতিকর— যা বাড়িয়ে দিচ্ছে তাপমাত্রা ও জলবায়ু সংকট।
বাসিন্দারা জানান, এ ময়লারস্তূপের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেই জ্বর আসবে। যে পরিমাণ মশা এখানে জ্বর না এসে যেন উপায় নেই। এছাড়া দুর্গন্ধে টেকা যায় না। প্রতিনিয়ত মানুষের ডায়রিয়াসহ নানান অসুখ লেগেই আছে। বিশেষ করে স্কুলগামী শিশুরা বেশি অসুস্থ হচ্ছে। এসব থেকে মুক্তি পেতে নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলা এবং বর্জ্য ব্যবস্থপনাকে নাগরিক বসবাসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার দাবি বাসিন্দাদের।
জনসচেতনতা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ঘাটতি তৈরি করেছে এই পরিস্থিতি। একই রকম অবস্থা দেখা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মাতুআইল ল্যান্ড ফিল্ড ওয়াটার ট্রিটমেন্ট এলাকায়।
আরও পড়ুন: প্রতিদিন তৈরি ৪ হাজার টন বর্জ্য, তবুও কেন থমকে ‘বর্জ্য বিদ্যুৎ প্রকল্প’?
জানা গেছে, ওয়াটার ট্রিটমেন্টের এখানে পাশাপাশি দুটি জলাধার রয়েছে। এর একটিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটির সব বর্জ্যের দূষিত নির্যাস ড্রেনেজ সিস্টেমের মাধ্যমে জমা হয়। সেখান থেকে ফিউরাস সালফাইড, লাইম পাউডার এবং পলিমার; এ তিনটি ক্যামিকেলের মাধ্যমে পরিশোধিত করে অপর জলাধারে ফেলা হয়। এবং এখান থেকে আরও তিনধাপে পরিশোধন প্রক্রিয়া শেষে পার্শ্ববর্তী নদী বা খালে ফেলা হয়।
স্থলভাগ থেকে জলাধার এমনকি নদীও দখলে নিয়েছে নাগরিক বর্জ্য। ছবি: সময় সংবাদ
কিন্তু জানা তথ্যের সঙ্গে বিপরীত চিত্রের দেখা মিলেছে এ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট ড্রেনেজ ব্যবস্থায়। প্ল্যান্টে যে ড্রেনেজ ব্যবস্থায় বর্জ্য থেকে পানি নিষ্কাশনের কথা ছিল, তার পুরোটাই ময়লার স্তূপেই আটকে আছে। ফলে পরিশোধিত পানি নিষ্কাশনের প্রকল্প ব্যর্থতার পথে হাঁটছে।
তবে, মিথেন গ্যাসের যেই প্রকল্পটা নিয়েছে। সেই মিথেন গ্যাসের জন্য দক্ষিণ সিটি কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইপ কানেক্ট করে একটি পাইপের মাধ্যমে গ্যাসটাকে বের করে দেয়। যাতে নিচে মিথেন গ্যাসটা জমে থেকে কোনো দুর্ঘটনা, বিস্ফোরণ বা আগুন লাগার ঘটনা না ঘটে। এই পুরো প্রক্রিয়াটা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নিয়েছে এবং সেটিই এখন দেখার বিষয় কতখানি কার্যকর ভূমিকা রাখে।
এদিকে, পরিকল্পনার যথাযথ বাস্তবায়ন না থাকায় হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য।
একদিকে, দূষিত বর্জ্য থেকে ছড়াচ্ছে রোগজীবাণু, অন্যদিকে পচনশীল পদার্থ থেকে নির্গত গ্যাসে ঝুঁকিতে পড়ছে জনস্বাস্থ্য। স্থানীয়ভাবে শ্বাসকষ্ট, ত্বকের রোগ এমনকি ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
ওয়েস্ট কনসার্নের পরিচালক ইফতেখার এনায়েতুল্লাহ বলেন, ‘যদি আপনি বর্জ্য পোড়ান তাহলে বায়ুদূষণটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। বর্জ্যতে প্রচুর প্লাস্টিক থাকে। ফলে বর্জ্য পোড়ানোর সঙ্গে প্লাস্টিক পুড়ছে। এবং প্লাস্টিকে থাকে পিবিসি। এটা পোড়ালে দূষিত বাতাস থেকে ক্যান্সার হতে পারে। এমনকি ডেঙ্গুসহ নানান রোগবালাই হচ্ছে কিন্তু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে।’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরি বলেন, ‘বর্জ্যের সঙ্গে সংক্রামক কিছু থাকলে সেটি কোনো না কোনোভাবে মানুষের খাদ্য চক্রের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে।’
বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে উন্নত করে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি কমিয়ে আনতে কাজ করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। আর উত্তর সিটি করপোরেশন বলছে ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির কথা।
আরও পড়ুন: দেশে বছরে উৎপাদিত খাদ্যের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি অপচয় হচ্ছে
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক মো. মাহাবুবুর রহমান তালুকদার বলেন, ‘আমরা ব্যক্তি পর্যায়ে বর্জ্য ফেলা থেকে শুরু করে সবকটি ধাপে একটু সচেতন থাকলেই স্বাস্থ্যঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব। সে লক্ষে কাজ করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক এ বি এম সামসুল আলম বলেন, ‘কোরিয়ান একটা কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার একটি চুক্তিতে যাবে। আশাকরি দুমাসের মধ্যে এর পিজিবিলিটি সম্পন্ন হয়ে যাবে। তখন ল্যান্ডফিল্ডে যে মিথেন গ্যাস রয়েছে, সেগুলোকে প্রপারলি ম্যানেজ করে ইকুইবিলেন্ট কার্বনে রূপান্তর করা হবে।’
শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেবল পরিচ্ছন্নতার বিষয় নয়-এটি এখন জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষার অন্যতম চ্যালেঞ্জ।

৩ সপ্তাহ আগে
৫







Bengali (BD) ·
English (US) ·