অব্যবস্থাপনা, আইন লঙ্ঘন, জনবল ঘাটতি ও সচেতনতার অভাব; সব মিলিয়ে এশিয়ান হাইওয়ের বগুড়া অংশ যেন একটি অঘোষিত ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল। হাইওয়ে পুলিশের নজরদারির অভাবে নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না অনেক চালক। উল্টো পথে যাতায়াত, হালকা যানবাহনের দৌরাত্ম্য, ও রাস্তার ওপর স্ট্যান্ড গড়ে তোলার মতো অসংখ্য অনিয়ম পরিণত হয়েছে ভয়াবহ দুর্ঘটনার ট্রিগারে।
মহাসড়কে সাইনবোর্ডে স্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে ‘উল্টো পথে চলাচল নিষিদ্ধ’। কিন্তু বাস্তবে হালকা যানবাহনের চালকরা নিয়ম অমান্য করে উল্টো পথে চলাচল করছেন, যা প্রতিনিয়তই সৃষ্টি করছে ভয়াবহ যানজট এবং বাড়িয়ে দিচ্ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।
এছাড়াও চালকদের ইচ্ছেমতো মহাসড়কের ওপরেই গড়ে উঠেছে সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার অস্থায়ী স্ট্যান্ড। এসব স্ট্যান্ডের কারণে মহাসড়কের গতি থমকে যাচ্ছে, তৈরি হচ্ছে বিশৃঙ্খলা।
ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক সম্প্রসারিত হয়ে বর্তমানে হয়ে উঠেছে দ্রুতগতির এশিয়ান হাইওয়ে। এই মহাসড়কে রয়েছে আন্ডারপাস, ওভারপাস ও ফ্লাইওভার; যার মূল উদ্দেশ্য দ্রুতগতির যান চলাচল নির্বিঘ্ন করা। কিন্তু বগুড়া অংশে এই মহাসড়কে নিয়ম ভঙ্গ করে ট্রাক-বাসের পাশাপাশি রিকশা, অটোরিকশা, সিএনজি, ভটভটি ও নছিমনের মতো হালকা যানবাহনও অবাধে চলাচল করছে। ফলে প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনার বলি হচ্ছেন সাধারণ পথচারী, যাত্রী ও চালকরা।
আরও পড়ুন: মদনপুর-মদনগঞ্জ সড়কজুড়ে খানাখন্দ, বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি
হাইওয়ে পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৯ মাসে বগুড়ার মহাসড়কে ৭২টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৮১ জন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ১৭ জন নারী ও ২ জন শিশু। একইসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৩৩ জন। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ৬০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া অঞ্চলের তথ্যমতে, মহাসড়কে ১৬টি দুর্ঘটনাপ্রবণ স্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে রয়েছে ১৩টি স্পট, বগুড়া-নাটোর মহাসড়কে রয়েছে ৩টি স্পট। এই স্পটগুলোতে প্রায়শই ঘটছে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা, যা স্থানীয়দের জন্য প্রতিনিয়ত আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশ জানায়, যানবাহন নিয়ন্ত্রণে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৪ হাজার ৭৩৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলার মাধ্যমে জরিমানা আদায় হয়েছে প্রায় ২ কোটি ৬ লাখ ৬৭ হাজার ৯৭৫ টাকা।
তবে হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি সম্ভব হচ্ছে না।
হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া অঞ্চলের অতিরিক্ত ডিআইজি শহিদ উল্লাহ বলেন, 'মহাসড়কে প্রতিনিয়ত নিয়ম করে অভিযান চালানো হচ্ছে।' তবে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, 'যানবাহন চালকদের সচেতনতার অভাবেই প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে।'
তিনি আরও বলেন, 'দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সচেতনতামূলক কার্যক্রমও চালানো হচ্ছে।'