জানা যায়, ১৯৯০-এর দশকে ডোমারকে পৌরসভায় উন্নীত করা হয়। তখনই উপজেলা প্রশাসন টার্মিনাল নির্মাণের জন্য সরকারি খতিয়ানভুক্ত ৪টি দাগে মোট ১ দশমিক ১৩ একর জমি বরাদ্দ দেয়। এলজিইডি’র অর্থায়নে সেখানে যাত্রীছাউনি ও কিছু অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। কিন্তু রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও প্রভাবশালী মহলের স্বার্থসংঘাতের কারণে প্রকল্পটি অর্ধেকেই থেমে যায়।
তিন দশক ধরে জমি ও বরাদ্দ থাকলেও টার্মিনাল নির্মাণকাজ বাস্তবায়িত হয়নি। বর্তমানে জায়গাটি পড়ে আছে অযত্ন-অবহেলায়। নির্মিত ছাউনি ভেঙে গেছে, পাকা ভবন ধ্বংসের মুখে, আর ফাঁকা জায়গার একটি বড় অংশ স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, টার্মিনাল নির্মাণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হলো রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব। বিভিন্ন সময় ভিন্ন রাজনৈতিক মহল টার্মিনালকে নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছে। ফলে কোনো পক্ষ উদ্যোগ নিলেও অন্য পক্ষের বিরোধিতায় কাজ এগোয়নি। এছাড়া স্থানীয় প্রভাবশালীরা বরাদ্দকৃত জমির কিছু অংশ দখল করে ব্যবহার করছেন, যা প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: নীলফামারীতে ট্রাক্টরচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
স্থায়ী টার্মিনাল না থাকায় বাস মালিক ও শ্রমিকরা বাধ্য হয়ে ভাড়া জায়গায় অস্থায়ী টার্মিনাল পরিচালনা করছেন। সেখানে নেই স্যানিটেশন ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত বসার স্থান কিংবা নিরাপত্তা। বর্ষা মৌসুমে জায়গাগুলো কাদা, খানা-খন্দ ও জলাবদ্ধতায় ভরে যায়। স্বল্প জায়গায় বাস দাঁড় করানো হয়, ফলে যাত্রীদের ওঠানামার সময় প্রতিদিন দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হয়। প্রধান সড়কের পাশে বাস দাঁড়িয়ে থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট লেগে থাকে। এতে শুধু যাত্রী নয়, সাধারণ পথচারী ও আশপাশের দোকানিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
মোটর শ্রমিক মিজানুর রহমান দুলাল বলেন, ‘স্থায়ী টার্মিনাল না থাকায় আমাদের গাড়ির যন্ত্রাংশ চুরি হচ্ছে। এছাড়া রাস্তায় গাড়ি রাখার কারণে অনেক অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।’
বাস চালক মানিক মিয়া বলেন, ‘স্থায়ী টার্মিনাল থাকলে গাড়ি রাখার নির্দিষ্ট জায়গা থাকত। কিন্তু এখন ভাড়া জায়গায় গাদাগাদি করে গাড়ি দাঁড় করাতে হয়। বৃষ্টির দিনে কাদা-পানিতে ডুবে যাত্রী ওঠানামা করানো একেবারেই কষ্টকর।’
যাত্রী মো. আতিয়ার রহমান বলেন, ‘বর্ষার সময় বাসে উঠতে গেলে কোমর পর্যন্ত কাদায় নামতে হয়। এতে ভোগান্তির পাশাপাশি দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।’
আরও পড়ুন: সৈয়দপুরে পৌরকর্মচারীদের কর্মবিরতি
আরেক যাত্রী লুবানা আকতার মৌসুমী বলেন, ‘এখানে নেই কোনো যাত্রীছাউনি, নেই শৌচাগার। তাই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। ছাউনি না থাকায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাসে ওঠানামা করতে হয়, এতে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে। আমরা চাই স্থায়ীভাবে বাস টার্মিনাল তৈরি করা হোক।’
পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, ডোমারে একটি আধুনিক ও স্থায়ী বাস টার্মিনাল নির্মিত হলে প্রতিদিন হাজারো যাত্রীর ভোগান্তি কমবে, যানজট নিরসন হবে। এতে স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারিত হবে, শ্রমিকদের কাজ আরও গতিশীল হবে এবং নীলফামারী জেলার উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থার মানোন্নয়নেও এটি হবে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
নীলফামারী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ডোমারের মানুষ তিন দশক ধরে একটি স্থায়ী বাস টার্মিনালের অপেক্ষায় আছে। জমি ও বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক স্বার্থের দ্বন্দ্বে কাজ শুরু হয়নি। প্রশাসন যদি আন্তরিকভাবে উদ্যোগ নেয়, তবে এই বহু প্রতীক্ষিত প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে দেরি হবে না।’
ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শায়লা সাঈদ তন্বী বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। শুনেছি ডোমার টার্মিনালের জন্য সরকারি জমি বরাদ্দ রয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রুত উদ্যোগ নেয়া হবে।’
]]>