ডি ভিলিয়ার্সের তাণ্ডব: এক দিনে তছনছ দুই বিশ্বরেকর্ড

২ সপ্তাহ আগে
ওয়ানডের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড দীর্ঘ ১৮ বছর দখলে রেখেছিলেন শহিদ আফ্রিদি। বুম বুম খ্যাত পাকিস্তানের এই অলরাউন্ডার ১৯৯৬ সালে ৩৭ বলে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ডের অলরাউন্ডার কোরি অ্যান্ডারসন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আফ্রিদির চেয়ে এক বল কম খেলেই সেঞ্চুরি হাঁকান। কিন্তু অ্যান্ডারসন সেই রেকর্ডের সুখ তারিয়ে উপভোগ করার সুযোগই পাননি। মাত্র এক বছর সেই রেকর্ড স্থায়ী হয়। এবারও শিকার ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মিস্টার থ্রিসিক্সটি ডিগ্রি খ্যাত আব্রাহাম বেঞ্জামিন ডি ভিলিয়ার্সের তরবারিতে কচুকাটা হয় ক্যারিবীয়রা। একই দিনে দুই রেকর্ড বগলদাবা করেন এই প্রোটিয়া কিংবদন্তি।

একই দিনে দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি আর সেঞ্চুরির রেকর্ড ভাঙা! এবি ডি ভিলিয়ার্সের পক্ষেই আসলে এমন কাণ্ড সম্ভব ছিল। গায়ে গতরে এই প্রোটিয়া দৈত্যাকার কেউ ছিলেন না। কিন্তু ব্যাট হাতে ২২ গজে নামলেই তার মধ্যে জেগে উঠত কোনো মোঙ্গল বীর। ব্যাটটা হয়ে যেত খাপছাড়া তরবারি। উইকেটের চারপাশেই ব্যাটটা চালাতে পারতেন। দুর্দান্ত টাইমিং আর পেশির জোরে বল ব্যাটে লাগার পর ছুটত রকেটের বেগে। ফিল্ডারের দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া আসলে তেমন কিছু করার সুযোগই থাকত না।


ডি ভিলিয়ার্সের ব্যাট এমনই খাপছাড়া তরবারি হয়ে উঠেছিল ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি। জোহানেসবার্গ হয়ে উঠেছিল ক্যারিবীয় বোলারদের জন্য বধ্যভূমি। ডি ভিলিয়ার্সের তাণ্ডবে প্রথমে ভেঙে চুরমার হয়েছে ১৯ বছর আগে গড়া সনাৎ জয়াসুরিয়ার বিশ্বরেকর্ড। এরপর কোরি অ্যান্ডারসনের এক বছর আগে গড়া বিশ্বরেকর্ডও তছনছ হয়েছে। অথচ বেচারা আগের জানুয়ারিতে সেই রেকর্ডটি গড়েছিলেন ১৮ বছরের পুরনো রেকর্ড ভেঙে।


 

দ্রুততম সেঞ্চুরি হাঁকানোর পথে শট খেলছেন ডি ভিলিয়ার্স। ছবি: গ্যালো স্পোর্টস


নিউ ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামের সেই ম্যাচটা অবশ্য ক্রিকেট ইতিহাসে নানা কারণেই বিখ্যাত হয়ে থাকবে। এই ম্যাচে ডি ভিলিয়ার্সের পাশাপাশি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন হাশিম আমলা এবং রাইলি রুশোও। এটিই প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে যেখানে এক ইনিংসেই তিনটি সেঞ্চুরির দেখা মিলেছিল। তবে ম্যাচটা দিনশেষে শুধুই এবি ডি ভিলিয়ার্সের।


আরও পড়ুন: বিরাট-রোহিতদের নতুন নিয়ম বেঁধে দিলো বিসিসিআই


সেদিন টস জিতেও নিজেদের কপাল পুড়িয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দক্ষিণ আফ্রিকাকে আগে ব্যাট করার আমন্ত্রণ জানান ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক জেসন হোল্ডার। দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনার হাশিম আমলা ও রাইলি রুশো ৩৮.৩ ওভারেই ২৪৭ রানের জুটি গড়ে ডি ভিলিয়ার্সের জন্য মঞ্চ প্রস্তুত করে রাখেন।


 

On This Day in 2015 - Ab De Villiers scored fastest century in ODI cricket history in just 31 balls, He smashed 149(44) with 9 fours, 16 Sixes - The Genius!pic.twitter.com/i256SNbjG2

— Tanuj Singh (@ImTanujSingh) January 18, 2023


রুশো ১১৫ বলে ১১ চার ও ২ ছয়ে ১২৮ রান করে আউট হলে ক্রিজে আসেন ডি ভিলিয়ার্স। ততক্ষণে সেঞ্চুরি পূর্ণ করা হাশিম আমলা এরপর বাকি সময়টা ডি ভিলিয়ার্সকে শুধু সঙ্গ দিয়ে গেছেন। ক্যারিবীয়রা যেখানে বড়জোর সাড়ে তিনশো রানকে লক্ষ্য ধরে রেখেছিল সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকা করে ৪৩৯ রান। শেষ ৬৯ বলে প্রোটিয়ারা তোলে ১৯২ রান! যা সম্ভব হয়েছিল ডি ভিলিয়ার্স ঝড়ের কারণে।


প্রথমে ১৬ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করে দ্রুততম অর্ধশতকের রেকর্ড গড়েন ডি ভিলিয়ার্স। ভেঙে দেন লঙ্কান কিংবদন্তি সনাৎ জয়াসুরিয়ার ১৯ বছরের পুরনো রেকর্ড। ১৯৯৬ সালে সিঙ্গাপুরে পাকিস্তানের বিপক্ষে মাত্র ১৭ বলে অর্ধশতক হাঁকিয়েছিলেন।


 

ম্যাচ শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক জেসন হোল্ডারের সঙ্গে ডি ভিলিয়ার্স। ছবি: গ্যালো স্পোর্টস


২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ডের কোরি অ্যান্ডারসন কুইন্সটাউনে ৩৬ বলে ১৪ চার ও ৬ চারে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ভেঙে দিয়েছিলেন শহিদ আফ্রিদির শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গড়া ৩৭ বলের সেঞ্চুরির রেকর্ড। এদিন ডি ভিলিয়ার্স সেঞ্চুরি করেন কিউই তারকার চেয়েও পাঁচটি বল কম খেলে। মাত্র ৩১ বলে শতক পূর্ণ করেন তিনি।


আরও পড়ুন: কুয়াশা ও আলোকস্বল্পতার বেরসকিতার মাঝে পাকিস্তান বাঁচলো রিজওয়ান-শাকিলে


ডি ভিলিয়ার্স সেদিন আউট হন ৪৪ বলে ১৪৯ রানের ইনিংস খেলে।  ৯টি চারের পাশাপাশি হাঁকান ১৬টি ছক্কা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এক ম্যাচে এটিই সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড। দ্রুততম দেড়শ রানের রেকর্ড থেকে মাত্র এক রান দূরে থাকতে আন্দ্রে রাসেলের শিকার হয়ে ফিরেছিলেন এই প্রোটিয়া।


প্রোটিয়াদের এই তাণ্ডবের জবাব দিতে সেদিন ব্যর্থ হয় ক্যারিবীয়রা। পুরো ৫০ ওভার খেলে ৭ উইকেটে ২৯১ রানে থেমেছিল তাদের ইনিংস। ম্যাচে প্রোটিয়ারা জয় পায় ১৪৮ রানের বিশাল ব্যবধানে।  

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন