ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধ থেকে পিছু হটছে না চীন, এরপর কী?

১ সপ্তাহে আগে
বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক প্রায় দ্বিগুণ করার হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। জবাবে চীন বলেছে, তারা শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে এবং নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর পাল্টা ব্যবস্থা নেবে।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীন বাণিজ্য যুদ্ধ 

 

গত বুধবার (২ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা বেশিরভাগ পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ ন্যূনতম শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেদিন চীনের ওপর নতুন করে ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন তিনি যা পূর্বে আরোপিত শুল্কসহ ৫৪ শতাংশে দাঁড়ায়।

 

ট্রাম্পের ঘোষণার পরদিন বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) চীন এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রকে শুল্ক আরোপের পদক্ষেপ বাতিল করার আহ্বান জানায় এবং পরদিন শুক্রবার (৪ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা সব পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে।

 

জবাবে চীনের ওপর অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। সোমবার (৭ এপ্রিল) ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লেখেন, ‘চীন যদি মঙ্গলবারের (৮ এপ্রিল) মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার না করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র বুধবার (৯ এপ্রিল) থেকে কার্যকরভাবে চীনের ওপর অতিরিক্ত আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে। সেই সঙ্গে আমাদের সাথে চীনের অনুরোধকৃত সব আলোচনা বাতিল করা হবে।’

 

আরও পড়ুন: শুল্ক প্রত্যাহারে ট্রাম্পের কাছে ‘সরাসরি আবেদন’ জানালেন মাস্ক

 

ট্রাম্প যদি সত্যিই চীনা পণ্যের ওপর তার নতুন শুল্ক কার্যকর করেন, তাহলে চীনা পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্কের পরিমাণ দাঁড়াবে ১০৪ শতাংশে। এতে কেবল আমেরিকান ভোক্তাদের জন্যই দাম বাড়বে না, বরং চীনকে অন্যান্য দেশে সস্তা পণ্য সরবরাহ করতে এবং বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে আরও গভীর সম্পর্ক স্থাপনের জন্য উৎসাহিত করতে পারে।

 

চীনের ওপর ট্রাম্পের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের হুমকি আর্থিকভাবে ধ্বংসাত্মক বাণিজ্য যুদ্ধকে আরও তীব্রতর করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। শুল্ক যুদ্ধ আরও তীব্র হওয়ার সাথে সাথে টোকিও থেকে নিউইয়র্ক পর্যন্ত শেয়ার বাজারগুলো আরও অস্থির হয়ে উঠেছে।

 

তবে ট্রাম্পের এই নতুন শুল্ক হুমকিকে ‘ভুলের ওপর ভুল’ বলে মন্তব্য করেছে চীন। সেই সঙ্গে পাল্টা শুল্ক আরোপেরও ইঙ্গিত দিয়েছে। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের এই তথাকথিত ‘পৌনপুনিক শুল্ক’ আরোপ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং এটি হুমকি দেবার কৌশল। পাশাপাশি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটি তাদের সর্বশেষ বিবৃতিতে ইঙ্গিত দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পাল্টা আরও শুল্ক আরোপ করা হতে পারে।

 

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের পোশাকের ওপর শুল্ক আরোপের নিন্দা মার্কিন অর্থনীতিবিদের

 

চীনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘চীন যে পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে তা তার সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্বার্থ রক্ষা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য শৃঙ্খলা বজায় রাখার লক্ষ্যে। এটি সম্পূর্ণ বৈধ। চীনের ওপর মার্কিন শুল্ক বৃদ্ধি একটি ভুল পদক্ষেপ। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্ল্যাকমেইলিং মনোবৃত্তির প্রকাশ । চীন কখনই এটি মেনে নেবে না। যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার নিজস্ব পথে চলতে থাকে, চীন শেষ পর্যন্ত লড়াই করবে।’

 

চীনা জনগণ চিন্তিত, কিন্তু তাদের দেশের প্রতি আস্থা আছে

 

বেইজিংয়ের মানুষ বলছে, তাদের কাছে এতো শুল্কের হিসেবে রাখা কঠিন। তবে ঝড় মোকাবেলা করার জন্য নিজের দেশের সরকারের ওপর আস্থা রাখছে তারা। ৩৭ বছর বয়সী চীনা নির্মাণকর্মী উ কি মনে করেন, ‘ট্রাম্প আজ এক কথা বলেন, কাল আরেক কথা বলেন। যাইহোক, তিনি কেবল সুবিধা চান, তাই তিনি যা খুশি বলতে পারেন।

 

৩০ বছর বয়সি পল ওয়াং, যিনি ইউরোপে নেকলেস, ব্রেসলেট ও টাং স্টাডসহ আনুষাঙ্গিক গহনা বিক্রি করেন, তিনি বলছেন, অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ মার্কিন শুল্কের পরে ইউরোপীয় বাজার এখন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রতিযোগিতার বাজার কোন দিকে যায় সেদিকে তিনি নজর রাখবেন।

 

জেসি হুয়াং ও ইয়াং আইজিয়া, যাদের কোম্পানিগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে রাসায়নিক আমদানি করে, তারা বলেছেন যে এই শুল্ক যুদ্ধের জেরে তাদের হয়তো দোকান বন্ধ করতে হতে পারে। হুয়াং উদ্বেগের সঙ্গে জানাচ্ছেন, ‘কোম্পানি থেকে ছাঁটাই হলে আমি হয়তো আর কোনও চাকরিও খুঁজে পাব না।’

 

চীনের সামনে একাধিক বিকল্প রয়েছে

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওয়াশিংটনকে পাল্টা আক্রমণ করার জন্য চীনের কাছে এখনও বিভিন্ন বিকল্প রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ফেন্টানাইলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহযোগিতা স্থগিত করা, কৃষি পণ্যের উপর উচ্চ কোটা স্থাপন করা। 

 

২০২৪ সালে চীনের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট পণ্য বাণিজ্য ছিল আনুমানিক ৫৮২ বিলিয়ন ডলারের, যা এটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পণ্যের শীর্ষ বাণিজ্যকারী করে তুলেছে।

 

২০২৪ সালে চীনের সাথে পণ্য ও পরিষেবা বাণিজ্যে ঘাটতি ছিল ২৬৩ বিলিয়ন থেকে ২৯৫ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে সংলাপের সম্ভাবনা এড়িয়ে গেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। 

 

আরও পড়ুন: ইসরাইলের ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহারের বিষয়ে যা বললেন ট্রাম্প

 

লিন বলেন, ‘আমি মনে করি না যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা করেছে তা আন্তরিক সংলাপের জন্য আগ্রহের বহিঃপ্রকাশ। যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সত্যিই সংলাপে অংশগ্রহণ করতে চায়, তাহলে তাদের সমতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং পারস্পরিক সুবিধার মনোভাব গ্রহণ করা উচিত।

 

মঙ্গলবার হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী জন লি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ শুল্ক আরোপকে ‘গুন্ডামি’ বলে উল্লেখ করেছেন। তার মতে এই ‘কঠোর আচরণ’ বিশ্বব্যাপী ও বহুপাক্ষিক বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং বিরাট অনিশ্চয়তা ডেকে আনছে।

 

লি বলেন, পরিস্থিতি মোকাবেলায় হংকং তার অর্থনীতিকে চীনের উন্নয়নের সাথে আরও ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত করবে, আরও মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করবে। শুল্কের প্রভাব মোকাবেলায় হংকং আরও বিদেশি কোম্পানি এবং মূলধন আকর্ষণ করবে, সেইসঙ্গে স্থানীয় উদ্যোগগুলিকে সহায়তা করবে।

 

তথ্যসূত্র: বিবিসি ও এপি 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন