বৃহস্পতিবার (২৯ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপ করা শুল্ক স্থগিত করেছেন দেশটির আদালত। আদেশে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করে নিজের ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করেছেন ট্রাম্প।
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের শুল্কারোপে স্থগিতাদেশ মার্কিন আদালতের
মূলত আদালতে করা দুটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেয়া হয়েছে। একটি মামলা করেছিল লিবার্টি জাস্টিস সেন্টার নামের একটি আইনি সংস্থা। ট্রাম্পের শুল্কের নিশানা হওয়া দেশগুলো থেকে পণ্য আমদানি করে-এমন পাঁচটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মামলাটি করেছিল তারা। অপর মামলাটি করা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ১৩টি অঙ্গরাজ্যের পক্ষ থেকে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালতের তিনজন বিচারকের একটি প্যানেল আদেশে বলেন, কংগ্রেসকে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করার বিশেষ ক্ষমতা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির সুরক্ষার জন্য প্রেসিডেন্টের জরুরি ক্ষমতার মাধ্যমে তা বাতিল করা যায় না।
ক্যাপিটাল ডটকমের সিনিয়র ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালিস্ট কাইল রড্ডা বলেন, ‘ট্রাম্পের জরুরি ক্ষমতা ব্যবহার করে শুল্ক আরোপের বৈধতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠেছে। আদালতের এই রায় বাজারের জন্য একটি বড় ঝুঁকি কমিয়েছে এবং বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি গ্রহণের প্রবণতা বাড়িয়েছে।’
ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের প্রধান উত্তর আমেরিকা অর্থনীতিবিদ পল অ্যাশওয়ার্থ বলেন, ‘এই রায় প্রশাসনের দ্রুত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের প্রচেষ্টাকে বিঘ্নিত করবে। অন্যান্য দেশগুলো এখন অপেক্ষা করবে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের জন্য।’
আরও পড়ুন: বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে পতন, নেপথ্যে কী?
এদিকে, এই রায়ের পর বিনিয়োগকারীরা ইক্যুইটি বাজারে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। জাপানের নিক্কেই সূচক ১.৭ শতাংশ বেড়েছে। জাপানের বাইরের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের এমএসসিআইর বিস্তৃত শেয়ার সূচক ০.৩ শতাংশ বেড়েছে, আর চীনের ব্লু-চিপ সূচক ০.৫ শতাংশ হারে শক্তিশালী অবস্থানে ছিল। দক্ষিণ কোরিয়ার শেয়ারবাজার ১.২ শতাংশ বেড়ে নয় মাসের সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছে।
মার্কিন বাজারেও ব্যাপক উত্তেজনা দেখা গেছে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ফিউচারস ১.৬ শতাংশ ও নাসডাক ফিউচার ১.৯ শতাংশ বেড়েছে। এর অন্যতম কারণ হলো চিপ নির্মাতা এনভিডিয়ার শক্তিশালী আয় প্রতিবেদনও বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই ইতিবাচক ধারা ইউরোপীয় বাজারেও অনুভূত হয়েছে। ইউরোস্টক্স ৫০ ফিউচার ১.১ শতাংশ, এফটিএসই ফিউচার ০.৭ শতাংশ ও ড্যাক্স ফিউচার ০.৯ শতাংশ হারে বেড়েছে।
বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যে সম্ভাব্য স্বস্তির বার্তায় ডলার সূচকও বেড়েছে। ইয়েনের বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৫.৭২, যা ০.৬ শতাংশ বেড়েছে। সুইস ফ্রাঙ্কের বিপরীতেও ডলার ০.৬৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ০.৮৩২৬। ইউরোর দর ০.৫ শতাংশ কমে নেমে এসেছে ১.১২৩২ ডলারে। ব্রিটিশ পাউন্ড বা স্টার্লিং কমে দাঁড়িয়েছে ১.৩৪৩২ ডলারে, কমেছে ০.২ শতাংশ।
ন্যাশনাল অস্ট্রেলিয়া ব্যাংকের ফরেক্স স্ট্র্যাটেজির প্রধান রে অ্যাট্রিল বলেন, ‘আমরা এখনো পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারছি না এই রায়ের বাস্তব প্রভাব কী হতে পারে, তবে বাজার যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে তা নিতান্তই অসাধারণ। আমার মনে হচ্ছে এই পদক্ষেপ স্বাধীনতা দিবসের পর থেকে দেখা সকল পরিবর্তনের বিপরীত দিক দেখাচ্ছে।’
এদিকে, আদালতের আদেশের পর এর বিরুদ্ধে আপিলের একটি নোটিশ দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রয়টার্সের কাছে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি হোয়াইট হাউস।
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের শুল্কারোপে স্থগিতাদেশ / বিশ্ববাজারে ঊর্ধ্বমুখী জ্বালানি তেলের দাম
বিশ্লেষকদের ধারণা, এই সিদ্ধান্ত বাজারে অনিশ্চয়তা কমিয়েছে, তবে ট্রাম্প প্রশাসনের আপিল ও পরবর্তী আইনি লড়াই পুরো দৃশ্যপট আরও জটিল করে তুলতে পারে। বিনিয়োগকারীরা এখন চোখ রাখছেন আদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এবং হোয়াইট হাউসের পরবর্তী কৌশলের দিকে।
ট্রাম্পের শুল্কারোপে স্থগিতাদেশের প্রভাব পড়েছে স্বর্ণ ও জ্বালানি তেলের বিশ্ববাজারেও। ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৮১ সেন্ট বা ১ দশমিক ২৫ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি দাঁড়িয়েছে ৬৫ ডলার ৭১ সেন্টে। আর মার্কিন ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুডের দাম ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ বা ৮৩ সেন্ট বেড়ে প্রতি ব্যারেল হয়েছে ৬২ ডলার ৬২ সেন্ট।
তবে স্পট মার্কেটে স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্সে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৬৮ ডলারে। যা গত ২০ পর সর্বনিম্ন। আর ফিউচার মার্কেটে স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্সে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ কমে ৩ হাজার ২৬২ ডলারে বেচাকেনা হচ্ছে।
]]>