টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে এবারই সর্বোচ্চ পয়েন্ট বাংলাদেশের

৩ সপ্তাহ আগে
নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ ৪৫ পয়েন্ট নিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের এবারের চক্র শেষ করলো বাংলাদেশ। ২০২৩-২৫ এর সাইকেলে প্রথমবারের মতো ৪টি টেস্ট জয়ের কৃতিত্ব অর্জন করলো টাইগাররা। যেখানে ঘরের মাঠে মাত্র একটি টেস্ট জিতলেও, অ্যাওয়েতে তিনটা টেস্ট জয়ের নজির স্থাপন করেছে শান্ত-মিরাজ বাহিনী।

তবে, এবারের চক্রে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন পাকিস্তানকে তাদের মাটিতে হোয়াইট ওয়াশ করা। যদিও, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ কলঙ্ক হয়ে থাকবে বিসিবির বর্ষপঞ্জিকায়।

 

সাদা পোশাকে কালেভদ্রে এমন দৃশ্য দেখে বাংলাদেশ। মর্যাদার ফরম্যাটে ২৪ বছর পেরিয়ে গেলেও, বাংলাদেশের এক একটা জয় এখনো উদযাপনের মুহূর্ত এনে দেয় এ ভূমিতে।

 

যদিও, বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে এখনো শিশু বাংলাদেশ। তিন তিনটা চক্র শেষ হয়ে গেলেও তলানি থেকে উঠার ব্যবস্থা করতে পারেননি শান্ত-মিরাজরা। প্রথম চক্রে ২০১৯ থেকে ২১ এ বাংলাদেশের ভাগ্যে জুটেছিল সাকুল্যে ২০ পয়েন্ট। আর ২০২১-২৩ চক্রে সেটা কমে দাঁড়ায় ১৬তে। দুবারই তালিকার শেষ নামটা ছিল লাল সবুজের। চলতি চক্রে এসে সেই ফারা কাটলো বাংলাদেশের। ২০২৩-২৫ এ চারটা টেস্ট জয়ের কৃতিত্ব দেখিয়েছেন টাইগার ক্রিকেটাররা। পয়েন্টের ঘরে জমা পড়েছে ৪৫, যা নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এবারের তালিকা বলছে এখন পর্যন্ত আট নম্বরে আছে শান্ত বাহিনী। তবে, এ চক্র শেষ হতে হতে সপ্তম ধাপে উঠে পড়ার সুযোগও থাকছে মিরাজদের সামনে।

 

আরও পড়ুন: উইন্ডিজকে হারিয়ে টাইগারদের যত রেকর্ড

 

এ চক্রের শুরুটা হয়েছিল দারুণভাবে। অধিনায়কের পদ থেকে সাকিব সরে যাওয়ার পর তিন ফরম্যাটে দায়িত্ব পান নাজমুল হোসেন শান্ত। তার ক্যাপ্টেন্সি ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল সিলেটে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। যা ছিলো ২০২৩ চক্রের প্রথম ম্যাচ। ঘরের মাঠে কিউইদের হারিয়ে চমকে দেয় টাইগাররা। যদিও, পরের ম্যাচে হেরে বসে তারা। কিন্তু শুরুর ওই জয় টনিক হিসেবে কাজ করে বাংলাদেশের জন্য।

 

পরের সিরিজটাও বাংলাদেশ খেলে ঘরের মাঠে। কিন্তু শ্রীলংকার বিপক্ষে পাত্তাই পায়নি লাল সবুজ। তখন অনেকেই বলেছিল আগের সিরিজটা ফ্লুক ছিল শান্তদের। কিন্তু, লঙ্কানদের বিপক্ষে সে অপবাদ ঘোঁচাতে ব্যর্থ বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে ৩২৮ রানে হারার পর, পরের ম্যাচ হারে ১৯২ রানে।

 

কিন্তু এই চক্রের সবচেয়ে বড় চমক অপেক্ষা করছিল পাকিস্তানে। রাওয়ালপিন্ডিতে ইতিহাস গড়ে টাইগাররা। ঘরের মাঠে ভুলতে বসা হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় ডোবায় তারা স্বাগতিক পাকিস্তানকে। প্রথম ম্যাচে ১০ উইকেটে জয় তুলে নেয় শান্তর দল। আর দ্বিতীয় ম্যাচে জয় আসে ৬ উইকেটে। ব্যাটে-বলে মুন্সিয়ানা দেখায় বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা। আনন্দে ফেটে পড়ে ক্রিকেট বোর্ড। বিশাল আয়োজন করে দেয়া হয় সাড়ে তিন কোটি টাকার বোনাস।

 

কিন্তু এরপরই যেন মড়ক লাগে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। ভারতের মাটিতে যেয়ে তুলোধুনো হয়ে আসে টাইগাররা। অবসরের হিড়িক পড়ে যায় সে সিরিজে। টেস্ট থেকে রিটায়ার্ড করেন সাকিব আল হাসান। আর টি-টোয়েন্টি থেকে সরে দাঁড়ান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু কোনো কিছুতেই পারফরম্যান্সের গ্রাফ ওপরে তুলতে ব্যর্থ হয় হাথুরু বাহিনী।

 

এরপর দেশের মাটিতে আনকোড়া দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। এ সিরিজের আগে সরিয়ে দেয়া হয় হেড কোচ চান্ডিকা হাথুরুসিংহেকে। ডাগ আউটে নিয়ে আসা হয় ক্যারিবিয়ান ফিল সিমন্সকে। কিন্তু সিরিজ শুরুর দুই দিন আগে দায়িত্ব নিয়ে কিছুই বুঝে উঠতে পারেননি সিমন্স। দল হারে দুই টেস্টেই। ঘরের মাঠে পুরো চক্রে মাত্র একটি ম্যাচে জয় নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় বাংলাদেশকে।

 

আরও পড়ুন: ৫ উইকেট পেয়েও র‍্যাঙ্কিংয়ে অবনতি তাইজুল-নাহিদের, উন্নতি মুশফিক-লিটনের

 

তবে, পুরো চক্রের ফলটা ইতিবাচক চেহারা পায় শেষ সিরিজে। উইন্ডিজে অ্যান্টিগায় ভরাডুবির পর আশ্চর্জজনকভাবে ঘুরে দাঁড়ায় স্যাবাইনা পার্কে। নাহিদ রানা-তাসকিন-হাসানদের সঙ্গে তাইজুল ম্যাজিকে চক্রের শেষ ম্যাচটা জিতে নেয় বাংলাদেশ। ১৫ বছর পর ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে সাদা পোশাকে জয় পায় লাল সবুজ।

 

প্রমাণ হয়, শেষ ভালো যার সব ভালো তার। 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন