টেকসই ভবিষ্যতের জন্য ন্যায়নির্ভর শক্তিতে বিনিয়োগ বাড়াতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

৪ দিন আগে
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এবং টেকসই উন্নয়নের যাত্রা অর্জনে ন্যায়নির্ভর শক্তিতে দ্রুত রূপান্তরের গুরুত্ব বিষয়ে গভীর আলোচনা ও নীতিনির্ধারণী সুপারিশের মাধ্যমে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো ‘ন্যায়নির্ভর শক্তিতে রূপান্তর: চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ’ শীর্ষক সেমিনার।

শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এবং ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ-এর প্রধান আয়োজনে সিআইআরডিএপি (CIRDAP)-এর এবি এ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ ও তরুণ জলবায়ু কর্মীরা অংশ নেন।


সেমিনারে বক্তারা একমত হন যে, জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর বাংলাদেশের নির্ভরতা কমিয়ে একেবারে সবুজ ও ন্যায্য ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে হলে ন্যায়নির্ভর শক্তিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও দ্রুত রূপান্তর প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ অপরিহার্য। তবে, এই ক্ষেত্রর প্রযুক্তিগত সক্ষমতার অভাব, অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা এবং সঠিক নীতির অনুপস্থিতি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।


ধরার উপদেষ্টা ও জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক সদস্য ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যান্ডাইস ইউনিভার্সিটির ন্যায়নির্ভর শক্তি ও টেকসই উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ড. সাজেদ কামাল।


এছাড়া বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আশিকুর রহমান, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্সের সহকারী অধ্যাপক ড. শাকিলা আজিজ, ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস (IEEFA)-এর লিড অ্যানালিস্ট ফর বাংলাদেশের শফিকুল আলম, সোলার ক্লাইমেট ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ প্রোগ্রাম ডিরেক্টর ড. শওকত আরা বেগম ও ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)-এর সদস্য সচিব শরীফ জামিল।


আরও পড়ুন: নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই উৎপাদনে যাবে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র


ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘দেশের আইন ও নীতিনির্ধারণী পরিবেশের কারণে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বেরিয়ে আসা ন্যায়নির্ভর জ্বালানিতে রূপান্তর সম্ভব হচ্ছে না। ন্যায়নির্ভর জ্বালানিতে দ্রুত রূপান্তরের জন্য সরকার-বেসরকারি ও সকল প্রান্তিক অংশীজনকে একযোগে কাজ করতে হবে।’


ড. সাজেদ কামাল সেমিনারে মূল বক্তব্যে ন্যায়নির্ভর শক্তির বিভিন্ন উদ্ভাবনী বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।


তিনি বলেন, ‘জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে ন্যায়নির্ভর শক্তিতে রূপান্তরের জন্য প্রয়োজন নিচুস্তরের উদ্ভাবন। বিশ্বের নানা অঞ্চলের মানুষ স্থানীয় চাহিদার ওপর ভিত্তি করে সৌর শক্তি বা ন্যায়নির্ভর শক্তির নিচুস্তরের উদ্ভাবন তৈরি করেছে। বাংলাদেশের চাহিদা এবং প্রাকৃতিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করেও উদ্ভাবন করা সম্ভব।’


অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘আমাদের দ্রুত ন্যায়নির্ভর জ্বালানি স্থানান্তরে বিশ্বে নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ রয়েছে। আমাদের কয়লার উৎপাদন নেই, সে কারণে আমরা খুব সহজেই জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে এসে ন্যায়নির্ভর জ্বালানির দিকে আসতে পারব।’


তিনি আরও বলেন, ‘জাপান, রাশিয়া, চীন, আরব আমিরাতের মতো দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদন থেকে সরে আসতে পারছে না। কিন্তু আমাদের এই সুযোগ রয়েছে। এজন্য তরুণ প্রজন্মকে সৌর শক্তি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিতে হবে। তারাই পরবর্তী নীতি তৈরি করবে।’


শরীফ জামিল বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব আমাদেরকে ন্যায়নির্ভর শক্তির রূপান্তরের দিকে যেতে হবে। কারণ বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গায় জীবাশ্ম জ্বালানির প্ল্যান্ট হওয়ায় পরিবেশ ও মানবিক বিপর্যয়ের চরম পরিস্থিতি প্রকাশ পাচ্ছে। দেশের মানুষ ও পরিবেশকে বাঁচাতে এখনই দ্রুত রূপান্তরের দিকে যেতে হবে।’


প্রফেসর আশিকুর রহমান বাংলাদেশের সৌর শক্তির বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে তথ্য ও গবেষণা ভিত্তিক বক্তব্য উপস্থাপন করেন।


তিনি তার গবেষণার তথ্য থেকে জানান, বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ চাহিদার ৫.২২ শতাংশ ন্যায়নির্ভর শক্তির মাধ্যমে পূরণ হচ্ছে। তা আগামী ২০৩০ সালে ১১ শতাংশ এ উন্নীত করার লক্ষ্য রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের ক্ষেত্রে জমির অভাব, মানুষের অভ্যাস এবং কৃষিজমির ব্যবহার বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিদ্যমান।


ড. শাকিলা আজিজ বাংলাদেশের ন্যায়নির্ভর শক্তির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন।


তিনি বলেন, ‘দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সূর্যের প্রাবল্য অনেক বেশি হওয়ায় সৌর শক্তি উৎপাদন সম্ভব, আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলে বায়ু, বায়োমাস এবং সরকারি জমি ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের দেশে ন্যায়নির্ভর শক্তির উৎপাদন সম্ভব। আমাদের ভিন্নভাবে চিন্তা করতে হবে।’


শফিকুল আলম বলেন, ‘এখনও আমরা বিদ্যুতের জন্য আমদানির উপর নির্ভরশীল। আমাদের ন্যায়নির্ভর শক্তি উৎপাদনকে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা জরুরি।’


আরও পড়ুন: ৫০ হাজার টন গ্যাসোলিন আমদানির প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন


ড. শওকত আরা বেগম বলেন, ‘পৃথিবীর তাপমাত্রা কমানোর জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। আমাদের জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে এসে ন্যায়নির্ভর জ্বালানিতে যেতে হবে।’


সেমিনারে মুক্ত আলোচনায় বক্তারা একমত হন যে, এই রূপান্তর প্রক্রিয়াকে সফল করতে সরকার, সুশীল সমাজ, শিক্ষাবিদ এবং বেসরকারি খাতকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।


আয়োজক সংস্থা ধরা এবং ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ আশা করে এই আলোচনা নীতিনির্ধারক মহলে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে এবং টেকসই সবুজ জ্বালানি ভবিষ্যৎ নির্মাণে সহায়ক হবে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন