সোমবার (২১ জুলাই) ভোরে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে জামাল গাজীকে গ্রেফতার করা হয়।
এর আগে গত ১১ জুলাই রাতে মতলব দক্ষিণ উপজেলার ঘোড়াধারী গ্রামে কালু পাটোয়ারীর মেয়ে ফাতেমা বেগম রূপালীকে (৪০) কুপিয়ে হত্যা করে তার মরদেহ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে গা ঢাকা দেন স্বামী জামাল গাজী।
এ নিয়ে আজ দুপুরে পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে উপস্থিত সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানান।
পুলিশ সুপার জানান, পারিবারিক বিরোধ এবং টাকা লেনদেনকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। পেশায় গার্মেন্টস কর্মী জামাল গাজীর বাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপা এলাকায়। টিকটিকের মাধ্যমে ফাতেমা বেগম রূপালীর সঙ্গে ১১ মাস আগে তাদের পরিচয় এবং বিয়ে হয়।
আরও পড়ুন: টিকটকে পরিচয় থেকে বিয়ে, বছর পেরোতেই স্ত্রীকে হত্যা করে পালালেন স্বামী!
তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ, পটুয়াখালীসহ ৫টি জেলায় অভিযান শেষে কুষ্টিয়া জেলার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে জামালকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ জানায়, নিহত রূপালীর এর আগে আরও চারটি বিয়ে হয় এবং তার ৬ সন্তান রয়েছে। গত জুন মাসে স্ত্রীর ১১ ভরি স্বর্ণ এবং ৩৬ হাজার টাকা নিয়ে চম্পট দেন স্বামী জামাল গাজী। পরে নারায়ণগঞ্জ থেকে তাকে আটক এবং স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। কিন্তু নগদ ৩৬ হাজার টাকা ফেরত দেননি স্বামী। এই নিয়ে হত্যাকাণ্ডের আগ পর্যন্ত তাদের দুজনের মধ্যে ঝগড়াঝাটি হতো। জার জের ধরে গত ১১ জুলাই রাতে আবারও দুজনের মারামারি হয়।
একপর্যায়ে স্ত্রী রূপালী ঘুমিয়ে পড়লে রাতের কোনো একসময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে পরে বসতঘরের পাশে পায়খানার সেপটিক ট্যাংকে তার মরদেহ ফেলে গা ঢাকা দেন জামাল গাজী। এরইমধ্যে খুব ঠান্ডা মাথায় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেও ওই বাড়িতে পরেরদিনও অবস্থান করেন জামাল।
আরও পড়ুন: টিকটক অ্যাকাউন্ট ডিলিট না করায় মেয়েকে হত্যা করলেন বাবা!
তবে দুপুরের পর গা ঢাকা দেন তিনি। সন্ধ্যা পর্যন্ত রূপালীকে তার সন্তান ও পরিবারের অন্য সদস্যরা খুঁজে না পেয়ে বসতঘরের পাশে সেপটিক ট্যাংকের ঢাকনার দিকে চোখ পড়ে তাদের। এ সময় সেই ঢাকনা খুলে দেখা যায় সেখানে রূপালীর নিথর দেহ পড়ে আছে। পরে পুলিশকে ঘটনা জানানো হয়।
এরপর পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নিহত রূপালীর ছেলে টিপু পাটোয়ারী বাদী হয়ে মতলব দক্ষিণ থানায় মামলা করেন। তারপরই ঘাতককে ধরতে অভিযানে নামে পুলিশ।
এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার জামাল গাজী জানান, পেশায় তিনি গার্মেন্টস কর্মী। টিকটকের মাধ্যমে রূপালীর সঙ্গে তার পরিচয় এবং বিয়ে হয়। আর সেই বিয়ের কাবিন ছিল তিন লাখ টাকা। তবে গার্মেন্টস কর্মী নয়, একজন আইনজীবীর সহকারী পরিচয় দিয়ে টিকটকার রূপালীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন।
আরও পড়ুন: সীমান্তে টিকটক করতে গিয়ে বিএসএফের হাতে ধরা, পতাকা বৈঠকে ফেরত
স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফাতেমা বেগম রূপালীর এর আগে আরও ৪টি বিয়ে হয়। সেখানে তার দুই সংসারে ৬ সন্তান রয়েছে। এ ছাড়া গত দুটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মহিলা সংরক্ষিত সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেন তিনি।
এ দিকে, বিকেলে আসামি জামাল গাজীকে চাঁদপুরের আদালতে তোলা হয়। সেখানে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি। পরে তাকে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন: অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. লুৎফর রহমান, মতলব সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার খায়রুল কবির, মতলব দক্ষিণ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সালেহ আহমেদসহ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক জীবন চৌধুরী।
]]>