যারা টাইটানিক সিনেমা দেখেছেন, তাদের শেষ দৃশ্যটির কথা নিশ্চয়ই মনে আছে। বরফখণ্ডের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডুবতে শুরু করে বিশালাকার জাহাজ। বরফজলে তলিয়ে যেতে শুরু করে যাত্রীরা। বাদ যাননি জাহাজে থাকা কল্পিত সেই বিখ্যাত প্রেমিক যুগল জ্যাক আর রোজ।
সিনেমার শেষ দৃশ্যে ভেসে আসা একটা কাঠের দরজাকে আকড়ে ধরে বাঁচার চেষ্টা করেন এ জুটি। ওই দরজায় রোজ উঠলেও উঠতে পারেননি জ্যাক। হিমশীতল পানিতে প্রাণহীন হয়ে পড়েন তিনি। জ্যাকের হাত শক্ত বাঁধনে জড়িয়ে কাতরকণ্ঠে রোজ ডাকলেও আর সাড়া দেননি জ্যাক। হারিয়ে যান সাগরের হিম জলে।
সিনেমাটির এমন দৃশ্য দেখে আবেগতাড়িত হননি এমন মানুষ বোধহয় খুব কমই আছে। অনেকেই আফসোস নিয়ে বলেছেন, নির্মাতা কি চাইলে পারতো না জ্যাককে বাঁচিয়ে রাখতে? কি দরকার ছিলো জ্যাকের সঙ্গে এতো নিষ্ঠুরতার?
মুক্তি পাওয়ার ২৭ বছর পরেও এই দৃশ্য নিয়ে এখনো অনেকের মনে ক্ষোভ জমে আছে। চলে বিতর্কও। কিন্তু নির্মাতা বা চিত্রনাট্যকার কি চাইলেও পারতেন, জ্যাককে বাঁচিয়ে রাখতে? সে প্রশ্নের উত্তর অবশ্য দিয়েছিলেন পরিচালক।
সিনেমাটি মুক্তি পাবার প্রায় ২৫ বছর পর এই নিয়ে একবার মুখ খুলেছিলেন টাইটানিকের পরিচালক জেমস ক্যামেরন। যেখানে তিনি বলেছেন, জ্যাকের মৃত্যু নিয়ে আমার কোনো অনুশোচনা নেই। তার মৃত্যুটা খুবই দরকার ছিল। ভালোবাসায় ত্যাগ থাকবেই। ত্যাগ দিয়েই ভালোবাসা পরিমাপ করতে হয়।
আরও পড়ুন: ডিসেম্বর জুড়ে কে-ড্রামার রাজত্ব!
তিনি আরও জানান, শুটিং এর আগে ওই দরজাটি নিয়েও ফরেনসিক বিশ্লেষণ করেন তারা। চিত্রনাট্যে অনেকবারই বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল জ্যাককে। কিন্তু আটলান্টিক সাগরের হিমশীতল ওই অবস্থায় একটি কাঠের দরজায় কোনোভাবেই দুজনকে উঠানো সম্ভব হয়নি।
যদি জ্যাককে বাঁচানো দেখানো হতো তবে তা হতো অবাস্তব। ওই পরিস্থিতিতে বাস্তবে কোনো একজনকে মরতে হতোই। তাই বাস্তবের সঙ্গে মিল রেখে চিত্রনাট্যে জ্যাককেই মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
আরও পড়ুন: দেশে কেমন চলছে হলিউডের দুই সিনেমা?
হলিউডে প্রেমের এ সিনেমা ১৯৯৭ সালে বিশ্বজুড়ে মুক্তি পায়। আর মুক্তির পরই দর্শক হৃদয়ে আলোড়ন তোলে অসমাপ্ত প্রেমের এই করুণ গল্প। বিশ্বখ্যাত টাইটানিক সিনেমায় জ্যাক চরিত্রে লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও আর রোজ চরিত্রে কেট উইন্সলেট অভিনয় করেন।
এ সিনেমায় অভিনয় করে ১৯৯৮ সালে নায়ক, নায়িকা অস্কারের মঞ্চে জিতে নেন সেরা অভিনেতা ও অভিনেত্রীর পুরস্কার। শুধু তাই নয়, বিশ্বসেরা সিনেমাটি অস্কারের মঞ্চে জেতে সর্বমোট ১১টি পুরস্কার। ক্যামেরনের পরবর্তী সিনেমা অ্যাভাটার ২০০৯ সালের মুক্তির আগে তার পরিচালিত টাইটানিকই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে ব্যবসাসফল সিনেমা।