লিটন হাওলাদার। পিরোজপুর সদরের হরিণা গাজীপুর এলাকার বাসিন্দা। নদীর ভাঙনে বসতবাড়ি ও জমি সবই হারিয়েছেন।
তিনি সময় সংবাদকে বলেন, ‘একসময় জমিজমা বসতভিটা সবই ছিল। কঁচা নদীর ভাঙনের ১৫ কাঠার মতো জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। এখন এক প্রকারের নিঃস্ব জীবনযাপন করছি।’
এমন পরিণতি শুধু লিটন হাওলাদারের নয়। জেলার বিভিন্ন নদীর পাড়ে বসবাস করা হাজারো মানুষের। নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে লোকালয়, হাট বাজার ও শিল্পকারখানা। ফলে এ জেলার অর্থনীতিতে যেমন নদীর রয়েছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা, ঠিক তেমনই বর্ষা মৌসুমে এর বিরূপ প্রভাবও পড়ে অর্থনীতিসহ সার্বিক জীবনে।
বর্ষা মৌসুমে যখন এসব নদী তীরবর্তী এলাকার পানি নামতে শুরু করে তখন নদীর স্রোত আরও বেড়ে যায়। ফলে ভাঙতে শুরু করে নদীর পাড়, বেড়িবাঁধ। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাটবাজার, লোকালয়; এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাড়িঘরও।
আরও পড়ুন: স্রোতে ভেসে গেছে ঘর, ৪ পরিবারের ঈদ কাটবে পরের বাড়িতে!
অনেক এলাকার বেড়িবাঁধ ভাঙা থাকায় এবং প্রয়োজনীয় স্থানে বেড়িবাঁধ না থাকায় বর্ষা মৌসুম আসার আগেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন নদী পাড়ের মানুষ। বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকার ভাঙা বাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে সেসব এলাকার ফসল ও মাছের ঘের তলিয়ে মানুষ পড়েন আর্থিক ক্ষতিতে। ফলে এ থেকে রক্ষা পেতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর।
সদর উপজেলার পাড়ের হাট ইউনিয়নের চিথলিয়া গ্রামের বাসিন্দা জামাল শেখ বলেন, সিডরের সময় বেড়িবাঁধ ভেঙেছে। এরপরেও এখন পর্যন্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। ফলে প্রতিনিয়ত আমরা জোয়ারের পানিতে ভাসি এবং দুর্বিষহ জীবনযাপন করি। বেরিবাঁধ গুলি টেকসই না করার কারণে সামান্য জোয়ারের পানিতেই এগুলো ভেঙে পড়ে। স্থায়ী টেকসই বেড়িবাঁধ না হলে এই দুর্ভোগ কখনোই যাবে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, এরই মধ্যে বেশ কিছু নতুন বেরিবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে ক্ষতিগ্রস্ত বাকি বাঁধগুলোও মেরামত করা হবে। পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নুসাইর হোসেন বলেন, মানুষের জীবনমাল রক্ষায় বেশ কিছু নতুন বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। আর জেলার ৬টি পোল্ডারের ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য প্রয়োজন ২ হাজার কোটি টাকা। বরাদ্দ পেলে ক্ষতিগ্রস্ত বাকি বেড়িবাঁধ গুলোও মেরামত করা হবে।
উল্লেখ্য, জেলায় ৩১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। যার মধ্যে ৫৫ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ।
]]>