সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাতে ও মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) ত্রিপুরা রাজ্যে আবাসিক হোটেল এবং চিকিৎসা কেন্দ্রে বাংলাদেশিদের সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। সেখানে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রীদের মারধর করা হচ্ছে বলে জানান ত্রিপুরা-ফেরত যাত্রীরা।
ত্রিপুরায় হামলার শিকার মুজিবুর রহমান নামে বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের এক ব্যবসায়ী জানান, তিনি ভারতের ত্রিপুরায় একটি মেলায় অংশগ্রহণ করার জন্যে সোমবার (৩ ডিসেম্বর) সেই রাজ্যে গিয়েছিলেন। সেখানে একটি আবাসিক হোটেলে ওঠেন। রাত ১২টার দিকে একদল লোক এবং সেখানকার পুলিশ এসে তাকে হোটেল থেকে বের করে দেয়। ‘জয় শ্রীরাম’ বলে তার ওপর হামলার অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, হামলাকারীরা তার সঙ্গে থাকা বেশ কয়েকটি জামদানি শাড়ি ছিঁড়ে ফেলেন। পরে অনেকটা অরক্ষিত অবস্থায় খোলা আকাশের নিচে রাতযাপন করে মঙ্গলবার বিকেলে নিজ দেশে ফিরে সময় সংবাদের কাছে এসব কথা জানান।
আরও পড়ুন: ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে উত্তেজনা, কী বলছেন আইনশৃঙ্খলাবাহিনী?
মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আমি গত ৩০ বছর ধরে ভারতে আসা-যাওয়া করি, কিন্তু এবারের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। ওই দেশের মানুষজন রাস্তায় আমাদের দেখলেই মারধর করছেন। অটোচালক, রিকশাচালকসহ সবাই আমাদের মারধর করতে আসছেন। আমরা হয়রানির শিকার হয়েছি। রাস্তায় বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে। সেখানেও আমাদের মারধর করতে আসেন অনেকে। এ রকম পরিস্থিতি কখনোই দেখিনি আমরা।’
ত্রিপুরা-ফেরত কুমিল্লার লাকসাম এলাকার বাংলাদেশি নাগরিক ফরিদ মিয়া বলেন, ‘আমাদের দেশের লোকজন দেখলেই তারা মারধর করতে আসছেন। সোমবার রাতে হোটেলে ছিলাম রাতেই হোটেল থেকে আমাদের বের করে দিয়েছে। সারারাত বাইরে কাটিয়ে সকালে আসার পর রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে আমাদের ওপরে হামলা করতে তেড়ে আসেন অনেকে। বাংলাদেশের নাম শুনলেই জামায়াত-বিএনপি আর ইউনুসের লোকজন বলে আমাদের ওপর হামলা করছে। আমরা বলব, নতুন করে যেন কেউ সেখানে আর না যায়; যারা গেছেন তারা আসতেই হয়রানির শিকার হবেন।’
মো. রাজীব নামে আরেক পর্যটক বলেন, ‘আমাদের হোটেল থেকে বের করে দিয়ে বলেছে, কোনো বাংলাদেশিকে যেন হোটেলে জায়গা না দেয়া হয়। আমাদের সঙ্গে তারা উগ্র ব্যবহার করেছেন। আমাদের প্রতিবেশী দেশ থেকে এমন আচরণ কখনোই আমরা প্রত্যাশা করিনি।’
আরও পড়ুন: আগরতলার বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের ভিসা ও কনস্যুলার সেবা বন্ধ
এদিকে আখাউড়া স্থলবন্দরে মো. নাসির উদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘সকাল থেকে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। সেখানে সকালে আমাদের এখান থেকে মাছ ও শুঁটকি পাঠিয়েছি। কিন্তু তারা সে পণ্য দুপুর পর্যন্ত খালাস করতে দেয়নি। যদিও সেটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে আমাদের এখানে কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।’
আখড়ার স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা মো. খাইরুল আলম বলেন, ‘দুই দেশের যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক রয়েছে। তবে ভারত-ফেরত বাংলাদেশি যাত্রীরা অনেকে তাদের ওপর অত্যাচার নির্যাতনের কথা জানিয়েছেন। বিষয়গুলো আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে।’
এ ব্যাপারে ৬০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের কোম্পানি কমান্ডার লে. কর্নেল এ এম জাবের বিন জব্বার বলেন, সীমান্তে যেকোনো ধরনের অপতৎপরতা রোধ করার লক্ষ্যে বিজিবি প্রস্তুত রয়েছে। তবে তিনি ক্যামেরার সামনে আর কিছু বলতে রাজি হননি।
এছাড়া আখাউড়া সীমান্তে যেকোনো ধরনের উত্তেজনা রোধ করার লক্ষ্যে বিজিবির পক্ষ থেকে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।