মূলত প্রতিবছর এপ্রিল মাসের শেষের দিকে শুরু হয় জুমে ধান লাগানোর প্রক্রিয়া। প্রায় ৩-৪ মাস পরির্চযার পর সেপ্টেম্বর মাসের শেষদিক থেকে পাহাড়ে জুমের ধান কাটা শুরু করে জুমিয়ারা; আর শেষ হয় অক্টোবর মাসে। তাই জুমের ফসল ঘরে তুলতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছে জুমিয়া পরিবারগুলো।
সরেজমিনে দেখা যায়, শিশু-কিশোরসহ পরিবারের কেউই বসে নেই ঘরে। পরিবারের সবাই জুমের ধান কাটতে নেমেছে পাহাড়ে।
তবে এ বছর আবহাওয়া অনুকূল থাকার কারণে ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহায়তায় জুম চাষে বেশি ফলন পেতে শুরু করেছেন বান্দরবানের চাষিরা।
জুমের ফসলের মধ্যে মারফা, ভূট্টা, তিল, তুলা, মরিচ কাকনচাল, বিনি চাল, ও ধান অন্যতম।
আরও পড়ুন: গহীন পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে মানবপাচারকারীদের আস্তানা
জুমচাষিরা জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়িরা প্রতিবছর জেলার বিভিন্ন স্থানে শত শত একর পাহাড়ে জুম চাষ করেন। জুমিয়ারা পাহাড়ে ধানের পাশাপাশি ভুট্টা, মরিচ,যব, সরিষা, মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন রকমের সবজির চাষ করে থাকে। তবে একই পাহাড়ে একাধিকবার জুম চাষ করা যায় না বলে জুমিয়ারা প্রতি বছর ভিন্ন ভিন্ন পাহাড়ে এ জুম চাষ করে থাকেন।
জেলায় বসবাসরত মার্মা, চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা, খুমী, লুসাই, পাংখো, বম, চাকসহ ১১টি পাহাড়ি জনগোষ্টীর অধিকাংশই জুম চাষের ওপর নির্ভরশীল। জেলা শহরে বসবাসরত কিছু শিক্ষিত পরিবার ছাড়া দুর্গম এলাকায় বসবাসরত পাহাড়িরা আজও জুম চাষের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
জুমিয়া পরিবারগুলো প্রতিবছর র্মাচ-এপ্রিল মাসের দিকে জুম চাষের জন্য পাহাড়ে আগুন দেয়। আর মে-জুন মাসের দিকে আগুনে পোড়ানো পাহাড়ে জুম চাষ শুরু করে।
চিম্বুক পাড়ার জুমচাষি মেনড্রং ম্রো জানান, এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় জুমের ফসল ভালো হয়েছে। নিজেদের জন্য রেখে বাকিটা বিক্রি করে ভালো টাকাও আয় করতে পারব।
আরেক জুমচাষি থংপ্রে ম্রো বলেন, জুমের ফলন ভালো হওয়ায় খুব খুশি লাগছে। পরিশ্রমও সার্থক হয়েছে, সারা বছর শান্তিতে খেতে পারব।
১১টি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে একমাত্র ম্রো সম্প্রদায় আদিকাল থেকে এখন পর্যন্ত জুম চাষের মাধ্যমেই সারা বছরের জীবিকা সংগ্রহ করে। ফসল ঘরে তোলার আনন্দে পাহাড়ী পল্লীগুলোতে চলছে এখন নবান্ন উৎসবও।
গোত্র ভেদে পাহাড়ীরা উৎপাদিত ফসল দেবতাকে উৎসর্গের মাধ্যমে এই নবান্ন উৎসব উদ্যাপন করে থাকে।
কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি বছর জেলায় ৮৮৯৫ হেক্টর জমিতে জুম ধান চাষ হয়েছে। এর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২৪৫৩ মেট্রিক টন। এর মধ্যে নিড়িখা, উফশি, পিডি, ককরো, বিনি, গেলং, কানভূই জাতের ধান। আর গত বছর জুম চাষ করা হয়েছিল ৮৪৫৮ হেক্টর জমিতে। সে হিসেবে এ বছর পাহাড়ে ৪৩৭ হেক্টর জমিতে জুম চাষ বেড়েছে।
আরও পড়ুন: পাহাড়ি ঢলে ভেসে যাওয়া দুজনের মরদেহ পাওয়া গেল
বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. একে এম নাজমুল হক বলেন, বান্দরবান জেলায় প্রতি বছর জুম চায় হয়। জুমে আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন জাতের ধানের ফলন বাড়ানোর লক্ষ্যে কৃষি গবেষণা এবং কৃষি অধিদফতর কাজ করছে।
আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতিবছর জুম চাষ করা হলে তাদের আর্থ সামজিক উন্নয়নসহ আর্থিক স্বচ্ছলতা আসবে এবং সারা বছরের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে বলে মনে করেন তিনি।
]]>